কার্ডে লেনদেন ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়াল
কার্ডের ব্যবহারকারীর সংখ্যাও বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে; বছরের ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় ৭১ লাখ।
গত মার্চ মাসে কার্ডে মোট ৫২ হাজার ৮৩ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। এই অঙ্ক একক মাসের হিসাবে সর্বোচ্চ। এর আগে কখনই এক মাসে কার্ডের মাধ্যমে ৫০ হাজার কোটি টাকা বেশি লেনদেন হয়নি।
আগের মাস ফেব্রুয়ারিতে লেনদেন হয়েছিল ৪৫ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা। আর গত বছরের মার্চে এই অঙ্ক ছিল ৪৫ হাজার ৪১২ কোটি টাকা।
এদিকে কার্ডের ব্যবহারকারীর সংখ্যাও বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে; বছরের ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় ৭১ লাখ।
গত ১১ এপ্রিল দেশে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়। তার আগে রমজান ও ঈদকে কেন্দ্র করে মার্চ মাসে কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা। সামনে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখেও লেনদেন বাড়বে বলে মনে করছেন তারা।
ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এখনো দেশের বড় অংশের মানুষের ব্যক্তিগত লেনদেন নগদ টাকায় সম্পন্ন হচ্ছে। তবে দিনকে দিন কার্ডে লেনদেন বাড়ছে। লেনদেনের সহজ মাধ্যম হিসেবে কার্ড দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ব্যাংকগুলোও এ খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। অন্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন সেবা নিয়ে এসেছে।
কার্ড কিংবা অ্যাপ ব্যবহার করে কেনাকাটা, বিভিন্ন ইউটিলিটি বিলসহ সহজে বিভিন্ন পরিশোধ করা যায়। টাকা উত্তোলন ও জমাও করা যাচ্ছে। এ ছাড়া দেশ কিংবা বিদেশে হোটেল বুকিং থেকে নানা বিল পরিশোধ করা যায়। এতে ঝামেলা কম। আবার অনেক সময় নানা ছাড় মিলছে। বিশেষ করে উৎসবের আগে কেনাকাটায় বিভিন্ন অফার দেয় ব্যাংক ও মার্চেন্ট।
কার্ড বা অ্যাপের মাধ্যমে নিজের সুবিধামতো সময়ে মুহূর্তে টাকা স্থানান্তর করা যাচ্ছে। এ ব্যবস্থায় লেনদেনে জাল নোট এবং পকেটমারের ঝুঁকি নেই। আবার ব্যাংকে গিয়ে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানোর ঝামেলা নেই। এসব কারণে অনেকেই এখন কার্ড লেনদেন বেছে নিয়েছেন। অবশ্য কার্ডের লেনদেনে বাড়তি সতর্কতা ও সচেতনতা জরুরি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মার্চ মাসে কার্ড থেকে মোট লেনদেনের মধ্য স্থানীয় মুদ্রায় হয়েছে ৫১ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা। আগের মাসে যা ছিল ৪৪ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা। এর আগে এক মাসে স্থানীয় মুদ্রায় সর্বোচ্চ ৪৮ হাজার ৫০ কোটি টাকা লেনদেন হয় গত জুনে। সব মিলিয়ে ওই মাসে কার্ডে লেনদেন হয় ৪৮ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা, যা ছিল কোনো একক মাসে সর্বোচ্চ।
বৈদেশিক মুদ্রায় গত মার্চে ৭২৩ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। আগের মাসে যা ছিল ৭৭২ কোটি টাকা। বৈদেশিক মুদ্রায় এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৯২৯ কোটি টাকা লেনদেন হয় গত বছরের ডিসেম্বরে।
চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর ইস্যু করা মোট কার্ডের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৪০ লাখ ১৭ হাজার। গত বছরের মার্চ শেষে ছিল ৩ কোটি ৬৯ লাখ ২১ হাজার। গত এক বছরে কার্ডের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৭১ লাখ।
ব্যাংকগুলোর ইস্যু করা মোট কার্ডের বেশির ভাগই ডেবিট কার্ড। গত মার্চ পর্যন্ত ডেবিট কার্ড দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৫৮ লাখ ৭০ হাজার। গত বছরের একই মাস শেষে ছিল ৩ কোটি ১ লাখ। ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা গত বছরের মার্চের ২১ লাখ ৭৮ হাজার থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ লাখ ৫১ হাজার।
আর প্রিপেইড কার্ডের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫৬ লাখ ৯৭ হাজার। ২০২৩ সালের মার্চ শেষে যা ছিল ৩৭ লাখ ৪৫ হাজার।
কার্ড থেকে স্থানীয় মুদ্রায় লেনদেনের বেশির ভাগই হয়েছে ডেবিট কার্ড থেকে। গত মার্চে ডেবিট কার্ড থেকে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৪৮ হাজার ১০১ কোটি টাকা। ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন হয় ৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। আর প্রিপেইড কার্ডে ৪৬৭ কোটি টাকা।
বাংলাদেশে অ্যামেক্সের সেবা দিয়ে ক্রেডিট কার্ড সেবায় শীর্ষে রয়েছে সিটি ব্যাংক। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারের প্রণোদনা ঋণ ও টিকার কারণে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। মানুষ আবার আগের মতো চলাচল ও খরচ করতে শুরু করেছে। কার্ডভিত্তিক লেনদেনের তথ্য থেকে সেটি পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। গ্রাহকদের খরচে আকৃষ্ট করতে আমরাও ক্রেডিট কার্ডে নানা অফার দিচ্ছি।’
বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি খাতের সব ব্যাংকই এখন প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। এসব সেবায় যোগ হয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম, অনলাইন সিআইবি রিপোর্ট, ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, প্রি-পেইড কার্ড, ভিসা কার্ড এবং বিভিন্ন প্রযুক্তির এটিএম। এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্যাংকে সশরীরে উপস্থিত না হয়েই টাকা উত্তোলন ও জমা, রেমিটেন্স বিতরণ, ইউটিলিটি বিল পরিশোধ ও বেতন-ভাতা প্রদান সম্ভব হচ্ছে।
বেসরকারি সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “দিন যতো যাচ্ছে কার্ডের লেনদেন বাড়ছে। মানুষ ঝামেলা ছাড়া রেলনদেন করতে চায়; সময় বাঁচাতে চায়। কার্ডভিত্তিক লেনদেনের তথ্য থেকেই সেটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে আমরাও নতুন নতুন সেবা দিয়ে আসছি; নানা অফার দিচ্ছি।”
কমেন্ট