বিশেষ ছাড়ে ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স পেল নগদ

বিশেষ ছাড়ে ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স পেল নগদ

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক শাহরিয়ার সিদ্দিকী সোমবার নগদ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ তানভীর এ মিশুকের হাতে ‘নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি’-এর লাইসেন্স তুলে দেন।

দেশের প্রথম ডিজিটাল ব্যাংক হিসেবে চূড়ান্ত লাইসেন্স পেয়েছে নগদ। আইনে বিশেষ ছাড় দিয়ে ‘নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি’কে তফসিলি ব্যাংক হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে দেশে ব্যাংকের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৬২।

ব্যাংক কোম্পানি আইনে একক ব্যক্তি, পরিবার বা কোম্পানির কোনো ব্যাংকের ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণে যে বিধিনিষেধ রয়েছে, সেটিতেই ছাড় দেওয়া হয়েছে নগদকে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালক (বিআরপিডি) শাহরিয়ার সিদ্দিকী সোমবার নগদ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ তানভীর এ মিশুকের হাতে ‘নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি’-এর লাইসেন্স তুলে দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।

একক কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনো ব্যাংকের ১০ শতাংশের বেশি শেয়ারের মালিক হতে পারবে না—ব্যাংক কোম্পানি আইনে এমন বিধান রয়েছে। তবে নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি এ ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় পেয়েছে। নগদ ডিজিটাল ব্যাংকের মালিকানায় রয়েছে সাত উদ্যোক্তা। তাদের মধ্যে ছয়টি কোম্পানি ও একজন ব্যক্তি উদ্যোক্তা।

এই সাত উদ্যোক্তার মধ্যে তিন প্রতিষ্ঠানেরই আছে ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণ না করার আইনি নিষেধাজ্ঞা তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। অর্থাৎ ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার নগদ ডিজিটাল ব্যাংকের একক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ধারণ করতে পারবে।

নগদ ডিজিটাল ব্যাংকের ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের (ফেসভ্যালু) মোট ১২ কোটি ৫০ লাখ শেয়ার রয়েছে। কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ১২৫ কোটি টাকা।

নগদ ডিজিটাল ব্যাংকের সাত উদ্যোক্তার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওসিরিস ক্যাপিটাল পার্টনার্স এলএলসি ও ব্লু হ্যাভেন ভেঞ্চারস এলএলসি ও সিঙ্গাপুরভিত্তিক ফিনক্লুশন ভেঞ্চারস প্রাইভেট লিমিটেডের হাতে রয়েছে ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার। ১২৫ কোটি টাকা মূলধনের মধ্যে ১০৭ কোটি ২৫ লাখ টাকাই এই তিন কোম্পানির অর্থায়ন।

বাকি চার উদ্যোক্তার মধ্যে জেন ফিনটেক এলএলসির ৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা, ট্রু-পে টেকনোলজিস এলএলসির ৪ কোটি টাকা ও ব্যক্তি উদ্যোক্তার কাছে রয়েছে ৬ কোটি ২৫ লাখ টাকার শেয়ার। আর একমাত্র দেশি কোম্পানি ফিনটেকচুয়াল হোল্ডিংসের হাতে রয়েছে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকার শেয়ার।

সোমবার নগদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি-এর চূড়ান্ত লাইসেন্সের কপি হস্তান্তরের সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার নগদের প্রতি শুভেচ্ছা জানান এবং নতুন এই আর্থিক সেবার সফল্য কামনা করেন। এখন থেকে অন্য সব তফসিলি ব্যাংকের মতোই কাজ করবে নগদ ডিজিটাল ব্যাংক।

লাইসেন্স হস্তান্তরের সময় অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার, নির্বাহী পরিচালক (বিআরপিডি) সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত পরিচালক (বিআরপিডি) মনিরুল ইসলাম এবং নগদ লিমিটেডের অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর আমিনুল হক, ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ও চিফ এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স অফিসার শেখ শাবাব আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

নগদ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর এ মিশুক এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “স্বল্পতম সময়ের মধ্যে নগদ ডিজিটাল ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু করা হবে।

“আমরা খুবই আনন্দিত যে, দেশে প্রথম পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ব্যাংক চালু করতে যাচ্ছি। সাধারণ মানুষ যারা নানা কারণে ব্যাংকে আসতে বাধা অনুভব করেন, তাদের কাছেই সেবা নিয়ে হাজির হবে নগদ ডিজিটাল ব্যাংক। এ পদ্ধতিতে গ্রাহককে আর ব্যাংকে আসতে হবে না, বরং ব্যাংকই মানুষের হাতে হাতে ঘুরবে।

“আমরা চাই প্রথাগত ব্যবসায়ীদের বাইরে যারা আছেন, তাদের প্রদান করব। পাশাপাশি ক্ষুদ্র সঞ্চয় স্কিম চালুসহ সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন কাজের সবকিছুর সমাধান দেবে ডিজিটাল ব্যাংক। এর মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের পথ আরও সুগম হবে।”

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার এ বিষয়ে দুটি আলাদা প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে, নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসিকে ৩ জুন তফসিলি ব্যাংক হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনাটি সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর কাছে পাঠানো হয়েছে।

ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১৪ক (১) ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি, কোম্পানি বা একই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ব্যাংকের শেয়ার কেন্দ্রীভূত করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি, কোম্পানি বা পরিবারের সদস্যরা একক, যৌথ বা উভয় নামে কোনো ব্যাংকের ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার কিনতে পারবেন না। তবে নগদ ডিজিটাল ব্যাংকের শেয়ারের ক্ষেত্রে তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ওই ধারা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ নগদ ডিজিটাল ব্যাংকে ১০ শতাংশের বেশি শেয়ারধারী রয়েছে।

অপর এক প্রজ্ঞাপনে আইনের ১৪ক(১) ধারার উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১২১ ধারার ক্ষমতাবলে ব্লু হেভেন ভেঞ্চারস এলএলসি, আরসিসি ক্যাপিটাল পার্টনারস এলএলসি ও ফিনক্লুশন ভেঞ্চারস পিটিই লিমিটেড কর্তৃক ‘নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি’র শেয়ার ধারণের ক্ষেত্রে ১৪ক(১) ধারা প্রযোজ্য হবে না। অবশ্য কোন প্রতিষ্ঠান কত শতাংশ শেয়ার নিয়েছে, তা উল্লেখ করা হয়নি প্রজ্ঞাপনে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গত ২৮ মে অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদের সভায় নগদকে লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে গত বছরের ৮ আগস্ট নগদ ও কড়িকে ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার নীতিগত অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ।

ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় মোট ৫২টি আবেদন পায় বাংলাদেশ ব্যাংক। বিভিন্ন পর্যায়ে যাচাই-বাছাই শেষে দেশের অন্যতম মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান বিকাশ, নগদসহ ৯টি প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব পাঠানো হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্ষদে।

তবে পরিচালনা পর্ষদ কেবল ‘নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি’ এবং ‘কড়ি ডিজিটাল পিএলসি’কে সম্মতিপত্র ইস্যুর নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। প্রতিষ্ঠান দুটিকে ছয় মাসের মধ্যে মূলধন জোগাড়সহ সব ধরনের কাজ সম্পন্ন করে চূড়ান্ত লাইসেন্সের জন্য যেতে বলা হয়।

সে অনুযায়ী নগদকে চূড়ান্ত লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে কড়ি আরও ছয় মাস সময় চেয়ে নিয়েছে।

বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ফের এক অঙ্কের ঘরে পরবর্তী

বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ফের এক অঙ্কের ঘরে

কমেন্ট