মতিউর দুই স্ত্রী সন্তানদের ব্যাংক ও বিও হিসাব জব্দ
মতিউর রহমান এনবিআরের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তার ছেলের ‘ছাগলকাণ্ডের’ পর তাকে এনবিআর থেকে সরিয়ে দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করা হয়।
‘ছাগলকাণ্ডে’ আলোচিত রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমান ওরফে পিন্টু, তার দুই স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
একই সঙ্গে তাদের মুঠোফোনে আর্থিক সেবার (এমএফএস) হিসাব ও পুঁজিবাজারের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব জব্দ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ফলে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এসব হিসাবে আর কোনো লেনদেন করা যাবে না।
দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বিএফআইইউ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে। একটি চিঠি দিয়ে ব্যাংক ও এমএফএসগুলোকে মঙ্গলবার এ নির্দেশনা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মতিউর রহমান এনবিআরের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তার ছেলের ‘ছাগলকাণ্ডের’ পর তাকে এনবিআর থেকে সরিয়ে দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করা হয়।
তিনি সোনালী ব্যাংকের পরিচালক ছিলেন। তবে সেখান থেকেও তাকে অপসারণ করা হয়েছে।
দুই স্ত্রীর ঘরে মতিউর রহমানের পাঁচ সন্তান। এর মধ্যে প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজের সঙ্গে তার এক ছেলে ও এক মেয়ে। তারা হলেন আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণব ও ফারজানা রহমান ইপ্সিতা। আর দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার লাভলীর ঘরে এক মেয়ে ও দুই ছেলে। তারা হলেন ইফতিমা রহমান মাধুবী, মুশফিকুর রহমান ইফাত ও ইরফানুর রহমান ইরফান।
শফিকুর রহমান ইফাতের ১৫ লাখ টাকায় ছাগল কেনার খবর প্রকাশিত হওয়ার পর মতিউর রহমান এখন দেশজুড়ে আলোচিত।
মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ (লাকী) নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির তিনি ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক।
কোরবানির ঈদে ছেলের দামি ছাগল কেনার ঘোষণার পর সম্পদ নিয়ে আলোচনায় থাকা মতিউর রহমানের পরিবারের সদস্যদের সব ব্যাংক হিসাবের পাশাপাশি এমএফএস ও বিও হিসাবের লেনদেন আটকে দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট-বিএফআইইউ থেকে মঙ্গলবার সব ব্যাংকে চিঠি দিয়ে এই নির্দেশ দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যাংক কর্মকর্তা এই চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করে এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “এক মাসের জন্য ফ্রিজ বা স্থিতাবস্থা জারি করেছে বিএফআইইউ।
অন্যদিকে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, ‘‘তার (মতিউর রহমান) ও পরিবারের সদস্যদের সকল বিও হিসাবের লেনদেন স্থগিত করতে সিডিবিএলকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এসব বিও হিসাবের লেনদেন স্থগিত থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার এনবিআরের এই কর্মকর্তা ও তার পরিবারের সদস্যদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত।
কোরবানি ঈদের সময় ঢাকার মোহাম্মদপুরের সাদিক এগ্রো থেকে ইফাত নামের এক তরুণের ১৫ লাখ টাকা দামে ছাগল কেনার ফেইসবুক পোস্ট ঘিরে আলোচনায় আসেন মতিউর রহমান।
এরপর তাকে ঘিরে সোশাল মিডিয়ায় আলোচনার মধ্যে সংবাদমাধ্যমে একের পর এক খবর আসতে থাকে। পরে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট মতিউর রহমানকে ইতোমধ্যে এনবিআর থেকে সরিয়ে রোববারই অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
তার সম্পদের খোঁজে অনুসন্ধানে নামে দুদক। তিনি মুশফিকুর রহমান ইফাতসহ দেশত্যাগ করেছেন বলে খবর আসে সংবাদ মাধ্যমে।
এমন খবরের মধ্যে গত সোমবার দুর্নীতি দমন কমিশনের আবেদনে মতিউর, তার স্ত্রী লায়লা কানিজ ও ছেলে আহম্মেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত।
‘ছাগলকাণ্ডের’ পর মতিউর রহমান এ আলোচনায় ঘি ঢালেন ‘ছেলের’ পরিচয় অস্বীকার করে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি দাবি করেন, মুশফিকুর রহমান ইফাত নামে কেউ তার ছেলে বা আত্মীয় নয়, এমন নামে কাউকে চেনেন না পর্যন্ত। তার একটিই ছেলে, তার নাম তৌফিকুর রহমান।
এরপর ইফাতের পরিচয় ও পারিবারিক ঠিকুজি নিয়ে ফেইসবুকে নানা তথ্য আসতে থাকে। ইফাতের সঙ্গে মতিউর রহমান এবং পরিবারের অন্যদের ছবিও প্রকাশিত হয়।
এক পর্যায়ে সামনে আসেন ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী। একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে তিনি দাবি করেন, ইফাত তার মামাতো বোনের সন্তান। আর মতিউর রহমানই ইফাতের বাবা।
এরপর মতিউর ও তার পরিবারের সম্পদের বিষয়ে নানা তথ্য আসতে থাকে খবরে। একে একে পুঁজিবাজারের তার বিনিয়োগ ও মুনাফার খবরও আসে। এর সূত্রপাত তিনিই করেছিলেন ওই বেসরকারি টেলিভিশনের সঙ্গে আলোচনায়।
তিনি বলেছিলেন, চাকরির পাশাপাশি তিনি ব্যবসায় জড়িয়েছেন; বিনিয়োগ করেছেন পুঁজিবাজারেও। তিনি নিজেই বলেছিলেন মেয়ের নামে ১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ১৪ কোটি টাকা মুনাফা করার কথা।
এরপর বিভিন্ন কোম্পানির প্লেসমেন্ট শেয়ার কেনার মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে বিপুল অর্থ মুনাফা করার খবর আসতে থাকে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ বিষয়ক এক প্রতিবেদনে মতিউর এবং তার দুই স্ত্রী ও সন্তানদের নামে ১৬টি বিও অ্যাকাউন্ট থাকার তথ্য প্রকাশ করা হয়।
পুঁজিবাজারে মতিউরের বিনিয়োগ নিয়ে এমন সব খবরের মধ্যে সিডিবিএলকে তাদের সব বিও অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি।
সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) ইলেকট্রনিক শেয়ার সংরক্ষণ, লেনদেন নিষ্পত্তি ও শেয়ার হস্তান্তরের হালনাগাদ তথ্য রাখে।
সব ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কেনা-বেচা ও স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন তথ্য সিডিবিএল এর মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়ে থাকে।
নিষেধাজ্ঞা আসায় মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের মালিকানায় থাকা বিও হিসাব থেকে শেয়ার কেনাবেচা বন্ধ থাকবে। বিও হিসাবে থাকা অর্থ উত্তোলন করা সম্ভব হবে না।
কমেন্ট