সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ না পেয়ে ব্যাংক থেকে রেকর্ড ধার সরকারের
আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল গ্রাহকদের পরিশোধের পর যেটা অবশিষ্ট থাকে, তাকে বলা হয় নিট বিক্রি। ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজে লাগায়।
সঞ্চয়পত্রে মানুষের বিনিয়োগ কমছেই। গত নয় মাস ধরে সবচেয়ে নিরাপদ এই বিনিয়োগের নিট (প্রকৃত) বিক্রি নেতিবাচক বা ঋণাত্মক (-)। অর্থাৎ এই নয় মাসে যত টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, তার চেয়ে বেশি সুদ-আসল পরিশোধে চলে গেছে।
এর ফলে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ না পেয়ে ব্যাংক থেকে রেকর্ড ঋণ নিয়েছে সরকার। বিদায়ী অর্থবছরে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের ঋণের অঙ্ক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর বৃহস্পতিবার সঞ্চয়পত্র বিক্রির হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, গত মে মাসে নতুন বিনিয়োগের চেয়ে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা বেশি।
আর ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (২০২৩ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ৩১ মে) নিট বিক্রি ঋণাত্মকের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা।
অথচ বিদায়ী অর্থবছরের প্রথম দুই মাস জুলাই ও আগস্টে এই খাতে বিনিয়োগ বেশ বেড়েছিল। প্রথম মাস জুলাইয়ে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। দ্বিতীয় মাস আগস্টে এই বিক্রির অঙ্ক ছিল ২ হাজার ৩১২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।
তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে নিট বিক্রি ঋণাত্মক (-) ধারায় ফেরে; ওই মাসে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ১৪৮ কোটি টাকা ঋণাত্মক (-)। এর পর থেকে মে মাস পর্যন্ত প্রতি মাচেই নিট বিক্রি ঋণাত্মক (-) রয়েছে।
সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অর্থনীতিবদরা বলছেন, সরকারি হিসাবেই দেশে মূল্যস্ফীতি এখন ১০ শতাংশের কাছাকাছি। ১৫ মাস ধরে অর্থনীতির স্পর্শকাতর এই সূচক সাড়ে ৯ শতাংশের উপরে অবস্থান করছে। এই উচ্চমূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের সঞ্চয় ক্ষমতা কমে গেছে। তাই সঞ্চয়পত্র থেকে মূখ ফিরিয়ে নিয়েছেন তারা।
পাশাপাশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়ার আরেকটি কারণ চিহ্নিত করেছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, এক সময় বিত্তশালীরা নামে-বেনামে বড় অঙ্কের অর্থ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করত। দুর্নীতির অর্থও এখানে বিনিয়োগ করত। সঞ্চয়পত্র ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল হওয়ায় সেই সুযোগ অনেকটাই কমে গেছে।
সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ যে কমবে, তা সরকার আগেই আন্দাজ করেছিল। সে জন্য বিদায়ী ২০২৩–২৪ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে সরকারের নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১৮ হাজার কোটি টাকা। এর আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৫ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৩২ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছিল। ওই অর্থবছরের শেষে নিট বিক্রি ঋণাত্মক হয়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা।
সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা যায়, ২০২৩–২৪ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই–মে) সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির ঋণাত্মক (-) পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা।
এর মানে হচ্ছে—এই ১১ মাসে যতো টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে তার চেয়ে ১৭ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা বেশি আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল বাবদ পরিশোধ করেছে সরকার। এই অর্থ সরকারের কোষাগার থেকে অথবা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে শোধ করা হয়েছে।
সুদের হার হ্রাস ও নানা কড়াকড়ির কারণে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বেশ কমে গিয়েছিল; বিক্রির চেয়ে সুদ-আসল পরিশোধে ৩ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা বেশি চলে গিয়েছিল।
কিন্তু চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (গত বছরের জুলাই ও আগস্ট) বিক্রি বেশ ভালোই বাড়ছিল। সেপ্টেম্বরে এসে ফের ধাক্কা খায়।
আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল গ্রাহকদের পরিশোধের পর যেটা অবশিষ্ট থাকে, তাকে বলা হয় নিট বিক্রি। ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। বিনিময়ে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের প্রতি মাসে সুদ দিতে হয়।
এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’বা ‘ধার’হিসেবে গণ্য করা হয়।
তাহলে বলা যায়, গেলো ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে কোনো ‘ঋণ’বা ‘ধার’ নিতে পারেনি। উল্টো ১৭ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা কোষাগার থেকে গ্রাহকদের সুদ-আসল বাবদ দিতে হয়েছে।
বাজেট ঘাটতি মেটাতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের মূল বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরেছিল সরকার।
নানা ধরনের কড়াকড়ি, সুদের হার হ্রাস এবং মূল্যস্ফীতি বাড়ায় মানুষের সঞ্চয়ে টান পড়ায় বিক্রি কমে যাওয়ায় এই খাত থেকে কাঙ্খিত ঋণ পাচ্ছিল না সরকার। সে কারণে সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্য কমিয়ে ২০ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।
কিন্তু অর্থবছর শেষে সঞ্চয়পত্র থেকে এক টাকাও ঋণ পায়নি সরকার; উল্টো আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের সুদ-আসল পরিশোধ বাবদ ৩ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা কোষাগার থেকে অথবা ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ নিয়ে পরিশোধ করেছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম এমন ঘটনা ঘটে। প্রতি অর্থবছর আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পরিমাণ নতুন করে মোট যতো টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয় তার চেয়ে অনেক বেশি হয়।
কিন্তু গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে তার উল্টোটা হয়। ওই অর্থবছরে মোট বিক্রির চেয়ে সুদ-আসল শোধের পরিমাণ বেশি ছিল। সে কারণে ওই অর্থবছরে সরকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডসহ অন্যান্য খরচ মেটাতে এই খাত থেকে কোনো ঋণ নিতে পারিনি।
বাজেট ঘাটতি মেটাতে অতিমাত্রায় ব্যাংক ব্যবস্থার উপর নির্ভর করতে হয়েছে। তাই অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ সোয়া লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
ওই অর্থবছরে সব মিলিয়ে ৮০ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। এর বিপরীতে সুদ-আসল পরিশোধ ও ভাঙ্গানো বাবদ মোট চলে যায় ৮৪ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা। এ হিসাবেই সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি ৩ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা ঋণাত্মক (নেগেটিভ) হয়েছিল।
এর আগে ২০২১–২২ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ১৯ হাজার ৯১৬ কোটি টাকার ঋণ পেয়েছিল সরকার। ২০২০–২১ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ ছিল ৪১ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (বিএমএফ) পরামর্শে সরকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি নিরুৎসাহিত করছে। সে লক্ষ্যে সুদের হার হ্রাসসহ নানা কড়াকড়ি আরোপ করেছে। সে কারণেই বিক্রি কমে গেছে; আর এই খাত থেকে এখন আর কোনো ঋণ পাচ্ছে না সরকার।
কিন্তু সংকটের এই সময়ে ভিন্ন কথা বলছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। তার পরামর্শ সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়িয়ে এই খাত থেকে বেশি ঋণ নিতে হবে। তাহলে সংকট সামাল দেওয়া সহজ হবে।
এআরএইচ ডট নিউজকে তিনি বলেন, “‘বর্তমানে দেশে ১০ শতাংশের কাছাকাছি। নতুন বাজেটে এই মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে বলা হলেও তা সম্ভব হবে না। বর্তমানে মূল্যস্ফীতি মানুষকে খুব কষ্ট দিচ্ছে। সরকারের উচিত হবে বোরো সংগ্রহ বাড়িয়ে খোলাবাজারে বেশি করে চাল বিক্রি করা। যারা মজুদ করে রাখবে, তারা তাড়াতাড়ি বাজারে চাল ছাড়বে। ফলে চালের দাম কমবে।”
“২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে বিদেশ থেকে যে ৯৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার কথা বলা হয়েছে, এটা মারাত্মক ক্ষতিকর অস্ত্র হতে পারে। এর পরিবর্তে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ১৫ হাজার কোটি থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা করা উচিত। এর বিপরীতে ব্যাংক ও বিদেশি উৎস থেকে লক্ষ্যমাত্রা ব্যাপকভাবে কমানো যেতে পারে।””
ফরাসউদ্দিন বলেন, “সংকট কাটাতে দেশী-বিদেশী উৎস থেকে ঋণনির্ভরতা কমিয়ে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ায় জোর দেয়া উচিত সরকারের। ব্যাংক থেকে অধিক পরিমাণে ঋণ নিলে বিনিয়োগকারীরা ঋণ পাবে না, বিনিয়োগ আরো স্থবির হয়ে যাবে। অন্যদিকে সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ঋণ নিলে মূল্যস্ফীতির চাপ কমবে এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাত শক্তিশালী হবে।”
আরেক অর্থনীতিবিদ সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “সুদের হার বেশি হওয়ায় বেশ কিছুদিন ধরেই আইএমএফ সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমাতে বলছে। আইএমএফের পরামর্শে কয়েক দফায় সুদের হার বেশ খানিকটা কমানো হয়েছে। নানা ধরনের কড়াকড়িও আরোপ করা হয়েছে। সে কারণেই ২০২২-২৩ অর্থবছরে মতো ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি নেগেটিভ হয়েছে।”
“এখন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। মূল্যস্ফীতি বেশ কিছুদিন ধরে সাড়ে ৯ থেকে ১০ শতাংশের কাছাকাছি উঠানামা করছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে। মাঝে ১২ শতাংশের উপরে উঠেছিল। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) এক জরিপ করে বলেছে, দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখন ১৫ শতাংশ। মানুষ যা আয় করছে, তা নিয়ে সংসারই চলছে না।”
“এখনও যে কোনো স্কিমের চেয়ে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বেশি। কোনো ঝামেলাও নেই; অনলাইন করায় প্রতি মাসের মুনাফা অটোমেটিক গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে চলে আসে। মেয়াদপূর্তির পর আসলও চলে আসে অ্যাকাউন্টে। তার পরও মানুষ আগের মতো সঞ্চয়পত্র কিনছে না; কিনছে না বললে ভুল হবে। কিনতে পারছে না। কেননা, বাজারে সব কিছুর দাম বেড়ে গেছে। সন্তানদের শিক্ষা খরচ; চিকিৎসার ব্যয় বেড়েছে। সব কিছু মিলিয়ে সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে।”
“অনেকে মেয়াদপূর্তির আগেই সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়ে সংসারের খরচ মেটাচ্ছেন। সঞ্চয় করবে কিভাবে; সঞ্চয়পত্র কিনবে কি দিয়ে,” বলে মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।
গত ৭ জুলাই বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, বিদায়ী অর্থবছরের শেষ মাস জুনে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। মে মাসে এই হার ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশে উঠেছিল।
জুনে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক ৪২ শতাংশ। মে মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
জুনে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ সার্বিক মূল্যস্ফীতির অর্থ হলো—গত বছরের জুন মাসে যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পাওয়া যেত, এই বছরের জুনে সেই পণ্য বা সেবা পেতে ১০৯ টাকা ৭২ পয়সা খরচ করতে হয়েছে।
আর ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ গড় মূল্যস্ফীতি নিয়ে ৩০ জুন শেষ হয়েছে ২০২৩-২৪ অর্থবছর। আগের অর্থবছরে (২০২২-২৩) এই হার ছিল ৯ দশমিক শূন্য দুই শতাংশ।
বিক্রির চাপ কমাতে ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে মুনাফার ওপর উৎসে করের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। একই সঙ্গে এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) বাধ্যতামূলক করা হয়।
ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি না করার শর্ত আরোপসহ আরও কিছু কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়। তার পরও বাড়তে থাকে বিক্রি।
সঞ্চয়পত্র খাতে সরকারকে যাতে বেশি সুদ পরিশোধ করতে না হয়, সে জন্য বিক্রি কমাতে ২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ২ শতাংশের মতো কমিয়ে দেয় সরকার। এর পর থেকে বিক্রি কমতে থাকে।
২০২২-২৩ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে কোনো ঋণ না পাওয়ায় গেলো ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি মেটাতে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ১৮ হাজার কোটি টাকা ধরেছিল সরকার।
কিন্তু অর্থবছরের ১১ মাসে এই খাত থেকে কোনো ঋণ নিতে পারেনি সরকার।
তার পরও ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ বেড়ে ৫ গুণ
২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের নেওয়া ঋণের পরিমাণ এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে, যা আগের অর্থবছরের প্রায় ৫ গুণ।
বাজেট ঘাটতি মেটাতে ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে মোট ১ লাখ ৭৩৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। আগের অর্থবছর (২০২২-২৩) শেষে এই ঋণ ছিল ২১ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা।
তবে বিদায়ী অর্থবছরে সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ না নিয়ে উল্টো পরিশোধ করেছে ৬ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা। ফলে এ সময় সরকারের নিট ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৯৪ হাজার ২৮১ কোটি টাকা।
কমেন্ট