মূল্যস্ফীতি কমাতে আবারও সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি

মূল্যস্ফীতি কমাতে আবারও সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি

মুদ্রনীতিতে বলা হয়, মূল্যস্ফীতি সহনীয় মাত্রায় না আসা পর্যন্ত বর্তমানে চলমান সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অব্যাহত থাকবে।

অর্থনীতির সবচেয়ে উদ্বেগজনক সূচক মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে আবারও সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) এই মুদ্রানীতিতে নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে ব্যাংকঋণের সুদের হারের যে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা রয়েছে, তা কিছুটা শ্লথ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

নতুন মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষ মাস জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধির এ হারই বহাল রাখা হয়েছে।

অন্যদিকে সরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি গত জুন শেষে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৮ শতাংশ। নতুন মুদ্রানীতিতে সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা আরও বাড়িয়ে ১৪ দশমিক ২ শতাংশ করা হয়েছে।

অর্থাৎ ব্যাংক খাত থেকে সরকারকে আরও বেশি ঋণ গ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে নতুন মুদ্রানীতিতে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন টাকা ছাপিয়ে (রিজার্ভ মানি) মুদ্রার সরবরাহ বাড়াবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। জুনে রিজার্ভ মানির প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ৯ শতাংশ। ডিসেম্বরে এ প্রবৃদ্ধি কমিয়ে ২ শতাংশ নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার কারণে সাংবাদিকেরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুষ্ঠান বর্জন করে আসছেন কয়েক মাস ধরে। এ কারণে এবার সংবাদ সম্মেলন না করে গত ১৮ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে জুলাই-ডিসেম্বর মেয়াদের মুদ্রানীতি প্রকাশ করা হয়।

মুদ্রানীতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, এখন থেকে গাড়ি, ফলমূল, ফুল ও প্রসাধনী আমদানির ক্ষেত্রে শুধু ঋণপত্রের বিপরীতে নগদ অর্থ জমা দিয়ে এসব পণ্য আমদানি করতে হবে। এর বাইরে অন্য পণ্য আমদানিতে অগ্রিম অর্থ জমার বিষয়টি শিথিল করা হবে।

মুদ্রনীতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। যদিও মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমূখী প্রবণতা সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা কমে এসেছে, তথাপি এটি এখনও উচ্চ পর্যায়ে। মূল্যস্ফীতি সহনীয় মাত্রায় না আসা পর্যন্ত বর্তমানে চলমান সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অব্যাহত থাকবে।

সরকারের রাজস্ব নীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বছরে দুইবার মুদ্রানীতির ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জন ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য মুদ্রা ও ঋণ সরবরাহ বাড়ানো বা কমানোর নীতি বা বিভিন্ন নির্দেশনার কথা তুলে ধরা হয়, যা থেকে অর্থনীতির ভবিষ্যত ধারা সম্পর্কে ইঙ্গিত পায় বেসরকারি খাতের ‍উদ্যোক্তা ও বিশ্লেষকরা।

নতুন অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে রাখার পরিকল্পনা করেছে সরকার। এই অর্থবছরে সরকার মোট ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা করেছে। গত ৩০ জুন এই বাজেট পাস হয়েছে; ১ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট।

এর আগেও আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই মুদ্রানীতি ঘোষণা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফজলে কবির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর থাকাকালে পরপর দুই বছর মুদ্রানীতি ঘোষণার জন্য কোনও সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়নি।

২০১৬ সালের ২০ মার্চ থেকে ২০২২ সালের ৩ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ছিলেন ফজলে কবির। ২০২০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত করোনাভাইরাসের কারণে মুদ্রানীতির বিবরণী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে এবং প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। তাছাড়া আগে প্রতি ছয় মাসে একবার মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হলেও ওই দুই বছর ১২ মাসে একবার মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়।

বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৭ শতাংশে রাখার ঘোষণা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে গত জুনের শেষে গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশে।

সরকার চলতি অর্থবছরে দেশের ব্যাংক খাত থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে। এরই মধ্যে সরকারি ঋণের ট্রেজারি বিলের সুদহার উঠেছে ১১ দশমিক ৯৫ শতাংশে ও বন্ডের সুদহার বেড়ে হয়েছে ১২ দশমিক ৮৪ শতাংশ।

‘খেলাপি ঋণ আর্থিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করছে’ উল্লেখ করে নতুন মুদ্রানীতিতে বলা হয়েছে, “খেলাপি ঋণ আর্থিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করছে; পাশাপাশি উৎপাদনশীল বিনিয়োগের ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে। ফলে উদ্যোক্তারা চাহিদা মত ঋণ পাচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক স্বচ্ছতা, সুশাসন এবং দক্ষতার ওপর জোর দিয়ে খেলাপি ঋণ কমাতে চেষ্টা করছে।”

জরিমানা ছাড়াই দেওয়া যাবে ঋণ-ডিপিএসের কিস্তি, ক্রেডিট কার্ডের বিল পরবর্তী

জরিমানা ছাড়াই দেওয়া যাবে ঋণ-ডিপিএসের কিস্তি, ক্রেডিট কার্ডের বিল

কমেন্ট