গভর্নর-ডেপুটি গভর্নরদের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

গভর্নর-ডেপুটি গভর্নরদের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

গণ আন্দোলনে ক্ষমতার পালাবদলের পর অস্থিরতা শুরু হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকেও; গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এবং চার ডেপুটি গভর্নরের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ ব্যাংকে চরম অস্থিরতা শুরু হয়েছে। বিক্ষুব্ধ একদল কর্মকর্তা ও কর্মচারী বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর, চার ডেপুটি গভর্নর, উপদেষ্টা ও আর্থিক গোয়েন্দা দপ্তরের প্রধানের পদত্যাগ দাবি করে মিছিল করেন।

একপর্যায়ে তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল ভবনে অবস্থিত গভর্নরের ফ্লোরে ঢুকে পড়েন এবং একজন ডেপুটি গভর্নরকে সাদা কাগজে সই করতে বাধ্য করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, চার ডেপুটি গভর্নর এবং আর্থিক গোয়েন্দা দপ্তরের প্রধান বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তাদের দাবির মুখে ‘পদত্যাগ’ করেন এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বেরিয়ে যান। এ সময় সেনাসদস্যরা তাদের নিরাপত্তা দেন। তবে ঘটনার সময় গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার কার্যালয়ে ছিলেন না। মঙ্গলবারও তিনি অফিস আসেননি।

গণ আন্দোলনে ক্ষমতার পালাবদলের পর অস্থিরতা শুরু হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকেও; গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এবং চার ডেপুটি গভর্নরের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

রাজধানীর মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় বুধবার সকালেই স্লোগানে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে। গভর্নর, চার ডেপুটি গভর্নর, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান এবং পলিসি অ্যাডভাইজরের পদত্যাগের দাবি করেন বিক্ষোভে অংশ নেওয়া কর্মকর্তারা।

এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের রোষানলে পদত্যাগপত্র দিতে বাধ্য হন ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান। বিক্ষোভকারীদের শান্ত করতে তিনি সবার সামনে একটি কাগজে সই করেন। সেটি তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রথম নির্বাহী পরিচালকের কাছে জমা দেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রায় সব বিভাগের কর্মকর্তারা এ বিক্ষোভে অংশ নেন। তাদের ভাষ্য, বাংলাদেশ ব্যাংক একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানা ‘অপকর্মে’ জড়িয়ে গেছে। ডেপুটি গভর্নররা কোনো কাজ ‘সঠিকভাবে’ করতে পারেন না। আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনাগুলোতে তারা সঠিক পদক্ষেপ নেননি।

বিক্ষোভকারীরা বলেন, দেশ থেকে অনেক টাকা পাচার হয়েছে, কিন্তু বিএফআইইউর প্রধান মাসুদ বিশ্বাস তা ঠেকাতে সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারেননি। টাকা পাচার ও আর্থিক অনিয়মে এরা সবাই দায়ী। এসব কর্মকর্তার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক নিজের মত কাজ করতে পারছে না। কারণ এরা নানা রকম অনৈতিক কাজের সাথে জড়িয়ে গেছে।

বিক্ষোভকারীরা ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহারের কক্ষে গিয়ে বিক্ষোভ দেখালে তিনি বলেন, তিনি অফিস কক্ষ চেড়ে চলে যাবেন। ডেপুটি গভর্নর খুরশীদ আলম ও হাবিবুর রহমানকেও তারা পদত্যাগ করতে বলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন চৌধুরী আন্দোলনকারীদের শান্ত থাকার অনুরোধ করেন। অন্তর্বর্তী সরকারের দেওয়া নির্দেশনা মেনে চলতে বলেন। আলোচনা সাপেক্ষে কার্যকর ব্যবস্থ্যা নেওয়ার আশ্বাস দেন।

ব্যাপক গণ আন্দোলনের মুখে সরকারপ্রধানের পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর বদলে যাওয়া পরিস্থিতিতে ঘটনা ঘটেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। এর আগে কখনই এমন ঘটনা ঘটেনি বাংলাদেশ ব্যাংকে।

বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কোনো ব্যানার বহন করছিলেন না। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুই শতাধিক কর্মকর্তা–কর্মচারী এই বিক্ষোভে যোগ দেন। তাদের দাবি, ব্যাংক খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের এসব শীর্ষ কর্মকর্তা দায়ী এবং তারা দায়িত্বে থাকলে ব্যাংক খাতে সুশাসন ফিরবে না।

বিক্ষোভকারীরা প্রথমে ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমানের কক্ষে ঢুকে পড়েন এবং তাঁকে পদত্যাগে চাপ দেন। এ সময় কাজী ছাইদুর রহমান একটি সাদা কাগজে পদত্যাগের কথা লেখেন এবং স্বাক্ষর করেন। এরপর তিনি ব্যাংক থেকে বেরিয়ে যান।

বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা–কর্মচারীরা এরপর ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহারের কক্ষে যান। ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার জানান, তিনি কার্যালয় ত্যাগ করছেন।বাকি দুই ডেপুটি গভর্নর মো. খুরশীদ আলম ও মো. হাবিবুর রহমান কার্যালয়ে ছিলেন না।

তবে কর্মচারীরা তাদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলে তারা জানান, তারা অফিসে আর আসবেন না। একইভাবে ব্যাংকের উপদেষ্টা আবু ফরাহ মো. নাসের ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) মাসুদ বিশ্বাসও জানান, তারা আর ব্যাংকে আসবেন না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ এসব কর্মকর্তা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। আন্দোলনকারী কর্মকর্তা–কর্মচারীরা তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।

বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা–কর্মচারীরা নির্বাহী পরিচালক-১ জাকির হোসেন চৌধুরীকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে ঘোষণা করেন।

এক পর্যায়ে পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে বৈঠকে বসেন আন্দোলনরত কর্মকর্তারা। সেখান থেকে বেরিয়েই সংবাদ সম্মেলন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলে জরুরি ভিত্তিতে কর্মকর্তাদের এসব দাবি সরকারের কাছে উপস্থাপন করা হবে।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অসন্তোষ থেকে প্রশাসনের কাছে ব্যাংক অর্ডারসহ সব অনিয়মের সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত ডেপুটি গভর্নর, অ্যাডভাইজার ও বিএফআইইউয়ের প্রধানের পদত্যাগ দাবি করেছেন কর্মকর্তারা।"

দুর্নীতিবাজরা অনেকে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে, তাদের ঠেকাতে বিএফআইইউ তাদের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করবে কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র বলেন, “বিএফআইইউ বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীন কোনো প্রতিষ্ঠান নয়। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের কোনো নির্দেশ দিতে পারে না।”

সংবাদ সম্মেলনে বিএফআইইউর কর্মকর্তাদের কেন ডাকা হয়নি, সে বিষয়েও সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা।

মুখপাত্র বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্ণ স্বায়ত্তশাষণ, অযাচিত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, ব্যাংক খাতে দুর্নীতি এবং ব্যাংক অর্ডারসহ সব ধরনের আইন সংশোধনের দাবি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

কারা অর্থ পাচার করেছে, জানা যাবে অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে: কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরবর্তী

কারা অর্থ পাচার করেছে, জানা যাবে অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে: কেন্দ্রীয় ব্যাংক

কমেন্ট