পদত্যাগ করেছেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার

পদত্যাগ করেছেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার

অর্থমন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব থাকা অবস্থায় ২০২২ সালের ১১ জুন গভর্নর হিসেবে চার বছর মেয়াদে নিয়োগ পান আব্দুর রউফ তালুকদার। তবে তিনি যোগ দেন ওই বছরের ১২ জুলাই।

ক্ষমতার পালাবদলের চার দিনের মাথায় পদত্যাগ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। তিনি শুক্রবার দুপুরে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের কাছে তার পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন।

সত্যিই কি পদত্যাগ করেছেন—এ প্রশ্নের উত্তরে শুক্রবার রাতে এআরএইচ ডট নিউজকে  তিনি বলেন, “হাঁ, ঠিকই শুনেছেন। আমি দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছি।”

এর বাইরে আর কোনো কিছু বলতে চাননি তিনি।

গত ৫ অগাস্ট (সোমবার) ছাত্র-গণ আন্দোলনে ক্ষমতার পালাবদলের পর থেকেই অফিসে আসছেন না গভর্নর। ৭ আগস্ট (বুধবার) গভর্নর ও চার ডেপুটি গভর্নর এবং উপদেষ্টা ও আর্থিক গোয়েন্দা দপ্তরের প্রধানের পদত্যাগের দাবিতে কয়েক ঘণ্টা বিক্ষোভ চলে মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রায় সব বিভাগের কর্মকর্তারা ওই বিক্ষোভে অংশ নেন। তাদের ভাষ্য ছিল, বাংলাদেশ ব্যাংক একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানা ‘অপকর্মে’ জড়িয়ে গেছে। ডেপুটি গভর্নররা কোনো কাজ ‘সঠিকভাবে’ করতে পারেন না। আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনাগুলোতে তারা সঠিক পদক্ষেপ নেননি।

বিক্ষোভকারীরা বলেন, দেশ থেকে অনেক টাকা পাচার হয়েছে, কিন্তু বিএফআইইউর প্রধান মাসুদ বিশ্বাস তা ঠেকাতে সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারেননি। টাকা পাচার ও আর্থিক অনিয়মে এরা সবাই দায়ী।

তোপের মুখে বুধবারই (৭ আগস্ট) সাদা কাগজে সই করে দেন ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদূর রহমান। বাকি তিন ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার, খুরশীদ আলম ও হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান মাসুদ বিশ্বাস এবং পলিসি অ্যাডভাইজর এর পদত্যাগের দাবিতেও বিক্ষোভ চলে।

পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, তাদের অপসারণের দাবি নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে উপস্থাপন করা হবে। আইন অনুযায়ী তাদেরকে সরকারের কাছেই পদত্যাগ করতে হবে।

বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গিয়ে গর্ভনর, চার ডেপুটি গভর্নর, বিএফআইইউর প্রধান এবং উপদেষ্টার কাউকে তাদের অফিসে পাওয়া যায়নি। কর্মচারীরা বলেছেন, তারা অফিসে আসেননি।

আন্দোলন দমাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বুধবার পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল। তবে সেনাবাহিনীর কাছে ক্ষমতা দিয়ে দেশত্যাগের পর সোমবারই সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ব্যাংকসহ সব সরকারি-বেসরকারি অফিস খোলা রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার বেলা তিনটার দিকে গভর্নর তার এক পৃষ্ঠার পদত্যাগপত্রটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আবদুর রহমান খানের কাছে পাঠান। সেখানে তিনি পদত্যাগের জন্য ব্যক্তিগত অসুবিধার কথা উল্লেখ করেন।

তবে এ বিষয়ে সচিব আবদুর রহমান খান কোনো মন্তব্য করেননি।

গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে যাননি গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। এমনকি তিনি তার বাসভবন গভর্নর হাউসেও নেই বলে জানা গেছে।

গভর্নরের পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই।”

নিয়ম অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী বা প্রধান উপদেষ্টার সম্মতিক্রমে গভর্নর নিয়োগ দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। সেই হিসেবে গভর্নরকে পদত্যাগও করতে হয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। আব্দুর রউফ তালুকদার তাই আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে তার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।

এদিকে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত বুধবার একদল কর্মকর্তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর, চার ডেপুটি গভর্নর, উপদেষ্টা ও আর্থিক গোয়েন্দা দপ্তরের প্রধানের পদত্যাগ দাবি করে মিছিল করেন। তারা একজন ডেপুটি গভর্নরকে সাদা কাগজে সই করতে বাধ্য করেন এবং আরও চারজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাকে ‘পদত্যাগে রাজি’ করান।

কোনো একটি সরকার পরিবর্তনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এমন ঘটনা এই প্রথম ঘটেছে বলে জানিয়েছেন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা। যেসব শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাকে সাদা কাগজে সইয়ের মাধ্যমে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে বা যাদের পদত্যাগে রাজি করানো হয়েছে বলে বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা দাবি করেন, তারা সবাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তা।

২০২২ সালের ১১ জুন গভর্নর হিসেবে চার বছর মেয়াদে নিয়োগ পান আব্দুর রউফ তালুকদার। তবে তিনি যোগ দেন ওই বছরের ১২ জুলাই। গভর্নর হিসেবে যোগ দেওয়ার আগে তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সচিব ছিলেন।

অর্থমন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব থাকা অবস্থায় ২০২২ সালের ১১ জুন গভর্নর হিসেবে চার বছর মেয়াদে নিয়োগ পান আব্দুর রউফ তালুকদার। তবে তিনি যোগ দেন ওই বছরের ১২ জুলাই। সেজন্য চাকরির মেয়াদের এক বছর আগেই অবসর নিতে সচিব পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন তিনি। গভর্নরের পদ থেকে তাকে বিদায় নিতে হল মেয়াদের দুই বছর বাকি থাকতে।

দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের আগে গভর্নর বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ব্যাপকভাবে সমালোচনার মুখে পড়েন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রবেশ নিষেধাজ্ঞার জেরে সাংবাদিকেরা গভর্নরের সব ধরনের অনুষ্ঠান বর্জন করে আসছিলেন।

কিন্তু ক্ষমতার পালা বদলের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।

ব্যাংক খাতের দুর্নীতি, অনিয়ম, খেলাপি ঋণ, অর্থ পাচার রোধে ব্যর্থতা, ডলার-সংকটসহ নানা কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা কয়েক বছর ধরে বড় ধরনের প্রশ্নের মুখে রয়েছে। চলতি বছর গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার সরকারি-বেসরকারি বেশ কয়েকটি ব্যাংকের একীভূতকরণের উদ্যোগ নিলেও শেষ পর্যন্ত এই প্রক্রিয়াও প্রশ্নের মুখে পড়ে।

গভর্নর-ডেপুটি গভর্নরদের উপস্থিতি ছাড়াই চলল বাংলাদেশ ব্যাংক পরবর্তী

গভর্নর-ডেপুটি গভর্নরদের উপস্থিতি ছাড়াই চলল বাংলাদেশ ব্যাংক

কমেন্ট