ইসলামী ব্যাংক দখল নিয়ে গোলাগুলি

ইসলামী ব্যাংক দখল নিয়ে গোলাগুলি

২০১৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ব্যাংকটিতে হস্তক্ষেপ করে। পরিচালক অপসারণ, পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের পাশাপাশি মালিকানাতেও পরিবর্তন আসে। এই প্রক্রিয়ায় ব্যাংকটির বড় অংশের মালিকানা চলে যায় এস আলম গ্রুপের কাছে।

রাষ্ট্র ক্ষমতায় পট পরিবর্তনের পর বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দেখা দিয়েছে সংঘাত, তা থেকে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটেছে। তাতে ৬ জনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার পর সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্তৃত্ব বদলের হিড়িক চলছে।

এর মধ্যে রবিবার ঢাকার দিলকুশায় ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে।

গুলিবিদ্ধ চারজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- শফিউল্লাহ, আবদুল্লাহ আল মামুন, আব্দুর রহমান ও বাকি বিল্লাহ। দুজনের পরিচয় জানা যায়নি। তারা সবাই বর্তমানে ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে রয়েছেন।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বেসরকারি ব্যাংক ইসলামী ব্যাংককে জামায়াতে ইসলামীর নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার দাবি উঠেছিল শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন থেকে।

এরপর ২০১৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ব্যাংকটিতে হস্তক্ষেপ করে। পরিচালক অপসারণ, পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের পাশাপাশি মালিকানাতেও পরিবর্তন আসে।

এই প্রক্রিয়ায় ব্যাংকটির বড় অংশের মালিকানা চলে যায় সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত এস আলম গ্রুপের কাছে। লাভজনক এই ব্যাংকটি তারপর থেকে নাজুক দশায় পড়ে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এখন ইসলামী ব্যাংকের পুরনোরা ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছে বলে খবর আসছে। তাতেই দেখা দিয়েছে সংঘাত।

সরকার পতনের পর থেকে বিক্ষোভ

সরকার পতনের পর ‘বৈষম্যবিরোধী ব্যাংকার সমাজ’ নামে ইসলামী ব্যাংকের পুরনো কর্মীরা সক্রিয় হয়। তারা ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠনের মাধ্যমে ‘লুটেরাদের’ বের করে দেওয়ার দাবি তোলে।

ব্যাংকের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মনিরুল মাওলা, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাউসার আলী, উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক আকিজ উদ্দিন, উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিফতাহ উদ্দিনসহ এস আলম গ্রুপ নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর নিয়োগ পাওয়া সব কর্মকর্তাদের ব্যাংক থেকে বহিষ্কারের দাবি জানায় তাদের।

সরকার পতনের পরদিন ৬ আগস্ট এস আলম গ্রুপের সময়কালে নিয়োগকৃত কর্মকর্তাদের ব্যাংক থেকে বের করে দেয় বিক্ষুব্ধরা। এরপর গত ৭ এবং ৮ আগস্টও ব্যাংকাররা বিক্ষোভ করে। পুরনোদের চাপে নতুন কর্মকর্তারা ব্যাংকে ঢুকতে পারছিলেন না।

কী ঘটে রবিবার

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রবিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইসলামী ব্যাংকের সামনে দুই পক্ষের সংঘর্ষ বাঁধে। তখন গুলিবর্ষণও হয়।

ইসলামী ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ সহকারী সহসভাপতি (এসএভিপি) শওকত আলী সাংবাদিকদের বলেন, “গতকাল জানতে পারি, এস আলমের বিভিন্ন কোম্পানি ও ব্যাংকের যারা আছে, তারা একত্রিত হয়ে যারা ব্যাংকটিকে লুটপাট করেছে তারা তাদের লোকদের ব্যাংকেই বসাবে।

“এতথ্য পেয়ে ব্যাংকের সামনে আমরা অবস্থান নিই। একটা পর্যায়ে এস আলমের লোকজন সিটি সেন্টারে অবস্থান নেয়। তারা মিছিল প্রধান কার্যালয়ে প্রবেশ করতে চায়। তখন ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তারা তাদের প্রতিহত করতে গেলে এস আলমের লোকজন তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। তাতে ছয়জন আহত হয়।”

ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত খায়রুল হাসান নামে এক কর্মী বলেন, “অনিয়ম করে ঋণ কেলেঙ্কারির প্রতিবাদ জানিয়ে সকালে বিক্ষোভ শুরু করলে এস আলম গ্রুপের কিছু কর্মকর্তাসহ একটি গ্রুপ অস্ত্র নিয়ে প্রবেশের চেষ্টা করে। তাদের বাধা দিলে তারা অস্ত্র বের করে এলোপাতাড়ি গুলি করতে শুরু করেন। পাল্টা ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়।”

ব্যাংকটির সামনে এখন পুরনো কর্মীরাই অবস্থান নিয়ে আছে। তারা এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছে।

এই বিষয়ে এস আলম গ্রুপের কিংবা তাদের সময়ে নিয়োগ পাওয়া ইসলামী ব্যাংকের কোনও কর্মকর্তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ব্যাংকটির কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংকটিকে আবারও জামায়াতে ইসলামী নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

অস্থির এই সময়ে পুলিশের কোনও তৎপরতাও নেই ব্যাংকের সামনে।

ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুনিরুল মওলাও ব্যাংকে যাচ্ছেন না। তিনি গেলেও তাকে ঢুকতে না দেওয়ার অবস্থান নিয়েছে বিক্ষুব্ধরা।

অর্থ উপদেষ্টার হুঁশিয়ারি

বর্তমান পরিস্থিতিতে ইসলামী ব্যাংকে কেউ যদি অস্থিরতা তৈরি করে থাকে, তাহলে তার বা তাদের বিরুদ্ধে শিগগিরই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।

রবিবার ঢাকায় অর্থ মন্ত্রণালয়ে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “আমি তো এককালে ম্যাজিস্ট্রেট ছিলাম। ধরপাকড় তো কম করিনি আমরা। যে করেছে তাকে ধরব। এ ধরনের কর্মকাণ্ড কাউকে করতে দেওয়া হবে না।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান নিয়োগের ক্ষেত্রে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানান উপদেষ্টা।

ব্যাংক থেকে ২ লাখ টাকার বেশি তোলা যাবে না পরবর্তী

ব্যাংক থেকে ২ লাখ টাকার বেশি তোলা যাবে না

কমেন্ট