নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর

নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর

আহসান এইচ মনসুর বর্তমানে বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক। আগে তিনি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পদের জন্য অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুরকে বেছে নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

তাকে গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দিতে এই পদের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ‍তুলে দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আহসান এইচ মনসুর বর্তমানে বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক। আগে তিনি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি দেশের আর্থিক খাতের একজন বিশ্লেষক হিসেবে সুপরিচিত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৩তম গভর্নরের দায়িত্ব পেলেন আহসান মনসুর। মঙ্গলবার রাত পৌনে ১১টার দিকে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অর্থমন্ত্রণালয়ের আথিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২ (প্রেসিডেন্ট অর্ডার ১২৭ অব ১৯৭২) এর ১ (৫) অনুযায়ী পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআরআই)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুরকে অন্যান্য সব প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সঙ্গে কর্ম-সম্পর্ক পরিত্যাগের শর্তে তার যোগদানের তারিখ থেকে ৪ বছরের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক-এর গভর্নর পদে নিয়োগ প্রদান করা হলো।

এতে আরও বলা হয়েছে, আহসান এইচ মনসুর গভর্নর পদে নিয়োজিত থাকাকালে সরকারের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির শর্ত মোতাবেক বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গ্রহণ করবেন। এ নিয়োগের অন্যান্য বিষয় উল্লিখিত চুক্তিপত্র দ্বারা নির্ধারিত হবে।

প্রজ্ঞাপন জারির আগে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সর্বোচ্চ বয়সসীমা সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২ এর আর্টিকেল ১০ এর ৫ ধারা সংক্রান্ত বিধানটি বিলুপ্তের প্রস্তাব অনুমোদন করেন উপদেষ্টা পরিষদ।

বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২-এর সংশ্লিষ্ট বিধানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ছিল ৬৫ বছর। ২০২০ সালের ৯ জুলাই জাতীয় সংসদে পাস হওয়া বাংলাদেশ ব্যাংক (সংশোধিত) আইনে গভর্নরের বয়সসীমার বিধানটি সংশোধন করে গভর্নর পদের মেয়াদ ৬৭ বছর পর্যন্ত করা হয়।

তবে আর্থিক খাতে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে বয়সের এই সীমা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে বলে মনে করছে উপদেষ্টা পরিষদ। এ ক্ষেত্রে তারা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও শ্রীলঙ্কাসহ এশিয়ার অনেক দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পদে সর্বোচ্চ বয়সসীমার উল্লেখ নেই—এমন উদাহরণও টানেন।

ফলে গভর্নরের বয়সসীমা তুলে দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কেও প্রজ্ঞাপন জারি করার নির্দেশনা দেয় উপদেষ্টা পরিষদ।

আহসান এইচ মনসুরের বয়স ৭২ হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক আইন ২০২০ এর সংশ্লিষ্ট ধারা বিলুপ্তির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পাঁচ দিন পর ১০ আগস্ট পদত্যাগ করেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। তিনি যোগ দিয়েছিলেন ২০২২ সালের ১২ জুলাই।

দুই বছরের বেশি সময়ে ব্যাংক খাতের দুর্নীতি, অনিয়ম, খেলাপি ঋণ ও অর্থ পাচার রোধ এবং ডলার-সংকটের সমাধানে ব্যর্থতাসহ নানা কারণে তার নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা সমালোচনার মুখে ছিল।

এর আগে সাবেক গভর্নর ফজলে কবিরকে দ্বিতীয় মেয়াদে গভর্নর নিয়োগের জন্য ২০২০ সালে প্রথমবার আইন সংশোধন করা হয়েছিল। সেবার গভর্নর নিয়োগে বয়সের ঊর্ধ্বসীমা ৬৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ৬৭ বছর করা হয়।

আইএমএফের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করে আসা আহসান মনসুর বাংলাদেশের ত্রয়োদশ গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেবেন।

ব্র্যাক ব্যাংকের সাবেক এই চেয়ারম্যান পিপিপি প্রকল্প নীতিমালা তৈরিতে সরকারের পরামর্শক হিসেবেও কাজ করেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে লেখাপড়া করা আহসান মনসুর শিক্ষক হিসেবে সেখানেই পেশাজীবন শুরু করেছিলেন। পরে ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর করেন। পিএইচডি করেন ওয়েস্টার্ন অন্টারিও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

আশির দশকে অর্থমন্ত্রী ওয়াহিদুল হকের উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করেছেন আহসান মনসুর।২০০৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রতিনিধিত্ব করে দেশে ফিরে তিনি পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটে নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব নেন।

এর আগেও গভর্নর নিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশ সংশোধন করা হয়েছিল। সাবেক গভর্নর ফজলে কবিরকে আবার নিয়োগ দিতে সংশোধন করা হয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশ, যা ছিল দেশের ইতিহাসে প্রথম ঘটনা। আদেশ সংশোধনের পর গভর্নর হিসেবে ২০২০ সালের জুলাই মাসে তাকে দুই বছরের জন্য পুনরায় নিয়োগ দেওয়া হয়।

রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ তৎকালীন গভর্নর আতিউর রহমান পদত্যাগ করলে পরদিনই সাবেক অর্থসচিব ফজলে কবিরকে চার বছরের জন্য গভর্নর নিয়োগ দিয়েছিল সরকার। তিনি দায়িত্ব নেন ২০ মার্চ। সে হিসাবে তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের ১৯ মার্চ।

কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার ৩৪ দিন আগে ওই বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি গভর্নর হিসেবে ফজলে কবিরের মেয়াদ ৩ মাস ১৩ দিনের জন্য বাড়িয়ে দেয় সরকার। তখন বলা হয়, আইন অনুযায়ী ৬৫ বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত তিনি গভর্নর থাকবেন। ফজলে কবিরের ৬৫ বছর পূর্ণ হয় ২০২০ সালের ৩ জুলাই। কিন্তু তাঁকে পুনরায় নিয়োগ দিতে আদেশ সংশোধন করে গভর্নর নিয়োগের সর্বোচ্চ বয়স ৬৭ করা হয়।

ক্ষমতার পালাবদলের চার দিনের মাথায় গত ৯ আগস্ট পদত্যাগ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।

অর্থমন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব থাকা অবস্থায় ২০২২ সালের ১১ জুন গভর্নর হিসেবে চার বছর মেয়াদে নিয়োগ পান রউফ তালুকদার। তবে তিনি যোগ দেন ওই বছরের ১২ জুলাই। সেজন্য চাকরির মেয়াদের এক বছর আগেই অবসর নিয়ে সচিব পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন তিনি। গভর্নরের পদ থেকে তাকে বিদায় নিতে হয় মেয়াদের দুই বছর বাকি থাকতেই।

‘টাকা পাচারকারীদের শান্তিতে ঘুমাতে দেয়া হবে না’ পূর্ববর্তী

‘টাকা পাচারকারীদের শান্তিতে ঘুমাতে দেয়া হবে না’

‘ক্লিনিক্যালি ডেড’ ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাক: সিপিডি পরবর্তী

‘ক্লিনিক্যালি ডেড’ ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাক: সিপিডি

কমেন্ট