এস আলমের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হচ্ছে ইসলামী ব্যাংক

এস আলমের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হচ্ছে ইসলামী ব্যাংক

ঢাকার দিলকুশায় ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গত ১২ আগস্ট দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। ব্যাংকটির পুরনো কর্মীরা পর্ষদ পুনর্গঠনের মাধ্যমে ‘লুটেরাদের’ বের করে দেওয়ার দাবি তোলে।

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ধাক্কা লাগছে ইসলামী ব্যাংকে। এর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে এস আলম গ্রুপ হারাতে যাচ্ছে বেসরকারি ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ।

বর্তমানে ব্যাংকটিতে এস আলম গ্রুপ ছাড়া অন্য কোনও পরিচালকের হাতে এককভাবে ২ শতাংশ শেয়ার নেই। একারণে কেবল স্বতন্ত্র পরিচালক দিয়ে ব্যাংকটি চালানো হবে বলে জানিয়েছেন নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।

আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ২০১৭ সালে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে গিয়েছিল দেশের সর্ববৃহৎ বেসরকারি ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ইসলামী ব্যাংকেও অস্থিরতা চলছে। ব্যাংকটি এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করতে একটি পক্ষ সোচ্চার হওয়ার পর গত ১২ আগস্ট গোলাগুলিও হয়।

তার ১০ দিন পর বুধবার মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকে এক সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তন আনার কথা জানান।

তিনি বলেন, “ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান পর্ষদ ভেঙে দি‌য়ে সরকারের সহ‌যোগিতায় ছোট আকা‌রে পর্ষদ গঠন করা হবে। পাশাপাশি দুই-এক‌দি‌নের মধ্যেই স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হবে।”

ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী কোনও ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক হতে হলে ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার থাকতে হয়।

গভর্নর বলেন, “এখন ইসলামী ব্যাংকে এস আল‌ম গ্রুপ বা তার স্বার্থ সং‌শ্লিষ্ট ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কা‌রও হাতে এককভা‌বে দুই শতাংশ শেয়ার নেই। তাই পরবর্তীকালেতে যখন কো‌নও শেয়ার‌ধারী দুই শতাংশ শেয়ারের মা‌লিক হ‌বে, তখন তা‌দের ম‌ধ্য থে‌কে প‌রিচালক নি‌য়োগ দেওয়া হ‌বে।”

ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের ৮২ শতাংশের মালিকানা রয়েছে এস আলম গ্রুপের হাতে। এরই মধ্যে এস আলমের শেয়ার হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পুঁজিবাজার নি‌য়ন্ত্রণ সংস্থা বিএসইসি।

ইসলামী ব্যাংককে জামায়াতে ইসলামীর নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার দাবি উঠেছিল ২০১৩ সালে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন থেকে।

এরপর ২০১৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ব্যাংকটিতে হস্তক্ষেপ করে। পরিচালক অপসারণ, পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের পাশাপাশি মালিকানাতেও পরিবর্তন আসে।

এই প্রক্রিয়ায় ব্যাংকটির বড় অংশের মালিকানা চলে যায় সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত এস আলম গ্রুপের কাছে। এরপর অনিয়ম আর ঋণ কেলেঙ্কারিতে নাজুক দশায় ব্যাংকটি।

গভর্নর আহসান মনসুর বলেন, “যারা ব্যাংকের টাকা নিয়ে ফেরত দেননি, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। টাকা উদ্ধারে আইনগত যত পন্থা আছে, সবই অনুসরণ করা হবে।”

এস আলম গ্রুপের কাছে কত ঋণ আছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “নামে-বেনামে কত ঋণ আছে, তা এখনও জানা যায়নি। বেনামি ঋণের তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে এসব তথ্য বের হবে। এ জন্য কিছুটা সময়ের প্রয়োজন।”

নামে-বেনামে এস আলম গ্রুপ ব্যাংক থেকে ৭৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে।

ইসলামী ব্যাংক ছাড়াও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকও এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে গিয়েছিল।

পর্যায়ক্রমে এস আল‌মের নিয়ন্ত্রণে থাকা সব ব্যাংকের পর্ষদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হ‌বে বলে জানান গভর্নর।

বিভিন্ন ব্যাংকের ঋণ অনিয়মে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের দায় নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এটা আমার আসার আগের ঘটনা। আগামী দিনে কোনও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক, আমি চাই না। কারও যদি কোনও কথা থাকে, তাহলে আমার দরজা খোলা আছে। আমি শুনে যদি যৌক্তিক দাবি মনে হয়, তাহলে তা মানার চেষ্টা করব। কিন্তু অযৌক্তিক কোনও দাবি মানা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”

বিভিন্ন ব্যাংকের আর্থিক কেলেঙ্কারির বিষয়ে কবে নাগাদ ব্যবস্থা নেওয়া হবে—প্রশ্নে গভর্নর বলেন, “এটা এক দিনের ব্যাপার নয়। আমি এসেই বড় রকমের নাড়াচাড়া দিতেও চাই না। কারণ, আমাদের হাতে অনেক কাজ আছে।”

দেশের অর্থনীতিকে রক্ষা করাকে এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ যেন খেলাপি না হয়, সেজন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশের বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে যাতে প্রশ্ন না ওঠে, আমরা যেন অবনমিত না হই, সহযোগী ব্যাংকগুলোর সঙ্গে যেন আমরা সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতে পারি, এসব নিয়ে কাজ করতে হবে।”

হাজার টাকার নোট বাতিল হবে না পরবর্তী

হাজার টাকার নোট বাতিল হবে না

কমেন্ট