এবার ইউসিবি’র পর্ষদ ভেঙে দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক
শেষ চেষ্টা হিসেবে বেসরকারি খাতের এই ব্যাংকটির আগের পর্ষদ মঙ্গলবার বিকালে স্বতন্ত্র এক পরিচালককে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছিল; তবে কয়েক ঘণ্টা না যেতেই পুর্নগঠিত সেই পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) পরিচালনা পর্ষদও ভেঙে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
শেষ চেষ্টা হিসেবে বেসরকারি খাতের এই ব্যাংকটির আগের পর্ষদ মঙ্গলবার বিকালে স্বতন্ত্র এক পরিচালককে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছিল; তবে কয়েক ঘণ্টা না যেতেই পুর্নগঠিত সেই পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
মঙ্গলবার পরিচালনা পর্ষদ নিয়ে নাটকীয় এমন ঘটনার মধ্যে দুই শেয়ারহোল্ডারকে পরিচালক করার পাশাপাশি তিনজনকে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে নতুন পর্ষদ গঠন করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক নতুন পর্ষদ গঠনের তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “ইউসিবি’র আগের পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পর্ষদ গঠন করে দেওয়া হয়েছে।”
এর মাধ্যমে ১৮ সদস্যের ইউসিবির পর্ষদ বিদায় নিল, যেখানে সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা ও ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর পরিবারের নিয়ন্ত্রণ আর থাকল না। বাবুর মৃত্যুর পর ব্যাংকে নেতৃত্ব দেন তার ছেলে ব্যবসায়ী নেতা সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। জাবেদ মন্ত্রী হওয়ার পর তিনি চেয়ারম্যান ও পরিচালক পদ ছেড়ে দিলে পর্ষদে ছিলেন তার ভাই-বোন ও স্ত্রী।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপের পর ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রথম প্রজন্মের এ ব্যাংকে আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর পরিবারের আর কেউ থাকলেন না পর্ষদে।
১৯৯৩ সালের এপ্রিলে ব্যাংকের ওই সময়ের চেয়ারম্যান ও উদ্যোক্তাদের একজন হুমায়ুন জহির খুন হন। ওই মামলার আসামি ছিলেন আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবু।
মঙ্গলবার পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার আদেশে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ব্যাংক কোম্পানি আইনের ক্ষমতাবলে ইউসিবি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করা হয়েছে, যে সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর হবে।
একই আদেশে বলা হয়েছে, আমানতকারী ও ব্যাংকের স্বার্থ রক্ষার্থে এবং ব্যাংকিং সুশাসন নিশ্চিত করা ও জনস্বার্থে ব্যাংক কোম্পানি আইনের ক্ষমতাবলে ইউসিবি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ নতুনভাবে গঠনের জন্য পাঁচজনকে পরিচালক ও স্বতন্ত্র পরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
ব্যাংকের নতুন পরিচালক করা হয়েছে শেয়ারহোল্ডার শরীফ জহির ও তানভীর খানকে।
নতুন স্বতন্ত্র পরিচালক হয়েছেন- বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন, অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউসুফ আলী এবং চাটার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট ওবায়দুর রহমান।
উদ্যোক্তা ও স্বতন্ত্র পরিচালকদের সমন্বয়ে ব্যাংকটির পর্ষদ গঠিত হওয়ায় এখন কে চেয়ারম্যান হবে নিজেরাই তা ঠিক করবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন পদক্ষেপের আগে এদিন বিকালে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে পর্ষদের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচন করা হয় স্বতন্ত্র পরিচালক অপরূপ চৌধুরীকে।
এর আগে গত ১৬ অগাস্টও ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে পরিবর্তন আনা হয়। সেদিন চেয়ারম্যান করা হয় রোকসানা জামান চৌধুরীকে। তিনি সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের বোন। তার আগে চেয়ারম্যান ছিলেন জাবেদের স্ত্রী রুকমিলা জামান। অর্থাৎ ভাবির জায়গায় এসেছিল ননদ।
সবশেষে রোকসানার জায়গায় স্বতন্ত্র পরিচালক অপরূপ চৌধুরীকে চেয়ারম্যান করে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আগের পর্ষদ টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপে তা আর হয়নি।
ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনে শেখ হাসিনার পতনের পর সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তনের যে দাবি উঠেছে তার হাওয়া লেগেছিল বেসরকারি ইউসিবিতেও।
ক্ষমতার পালাবদল হতে না হতেই বেসরকারি এ ব্যাংকের কর্মকর্তারা নিজেদের বঞ্চিত দাবি করে ব্যাংকের আগের চেয়ারম্যান রুকমিলা জামানকে সরিয়ে পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের দাবি তোলেন।
গুলশানে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে বিক্ষোভ থেকে তারা জাবেদ ও তার পরিবারের নিয়ন্ত্রণ থেকে ব্যাংকটিকে মুক্ত করার দাবি তোলেন।
এমন প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার নতুন পর্ষদ গঠন করা হল।
এর আগে ক্ষমতার পালাবদলের পর সাবেক মন্ত্রী জাবেদ ও তার স্ত্রী রুকমিলা এবং তাদের সন্তানদের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের নির্দেশনা দিয়েছিল বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
তার দল ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে জাবেদকে জনসম্মুখেও দেখা যায়নি।
৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর কিছু শেয়ারধারী ব্যাংকের বাইরে বিক্ষোভ করেন। সে সময়ই ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে পরিবর্তন করা হয়। অর্থাৎ ভাবির জায়গায় ননদকে চেয়ারম্যানম্যান করা হয়।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো এক চিঠিতে ইউসিবির কিছু শেয়ারধারী অভিযোগ করেন, রুকমিলা জামান ব্যাংকের চেয়ারম্যান হলেও সাইফুজ্জামান চৌধুরী কার্যত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন এবং তার ‘স্বেচ্ছাচারিতা ও লুটপাটের কারণে’ ব্যাংকটি দেউলিয়া হওয়ার পথে।
ওই চিঠিতে অভিযোগ করা হয়, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর যুক্তরাজ্যে ১ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে; যা এই ‘ব্যাংকের আমানতকারীদের টাকা লুট করে পরিশোধ করা হয়েছে’।
ব্যাংকটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের মধ্যে অনন্ত গ্রুপ ও পারটেক্স গ্রুপের কয়েকজন প্রতিনিধি সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে দেখা করে পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার দাবি জানান।
কমেন্ট