এস আলমের সম্পদ বিক্রি করে আমানতকারীদের টাকা শোধ করা হবে: গভর্নর
বুধবার ঢাকার মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন গভর্নর।
চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম যেন তাদের সম্পদ বিক্রি করতে না পারে সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, এই সম্পদ বিক্রি করেই গ্রুপটির মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়া হবে।
বুধবার ঢাকার মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন গভর্নর।
আওয়ামী লীগ সরকার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এস আলম গ্রুপ। এই ঘনিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে বেশ কয়েকটি ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের ঋণ বের করে নিলেও তার বিপরীতে পর্যাপ্ত বন্ধক বা সহায়ক জামানত ছিল না তাদের।
এ বিষয়টি উল্লেখ করে সাংবাদিকরা জানতে চান, গ্রুপটির অনেক সম্পদ এখনও বিক্রির সুযোগ আছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের পদক্ষেপে কী হবে?
জবাবে গভর্নর বলেন, “এটা আইনগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে করতে হবে। আমরা সরকারকে পদক্ষেপ নিতে বলব। আর এই গ্রুপের সম্পদ যেন কেউ না কেনে। এ সম্পদ বিক্রি করে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়া হবে।”
ছাত্র-গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এরপর ৮ আগস্ট দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার।
নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে উঠে আসতে থাকে বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি ও লুটপাটের তথ্য। কেবল এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধেই ওঠে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার বেশি অর্থ লুটপাটের অভিযোগ।
সংবাদ সম্মেলনে আহসান এইচ মনসুর বলেন, “এস আলম ইতিহাসের প্রথম ব্যক্তি, যিনি সুপরিকল্পিতভাবে ব্যাংক লুট করেছেন। এমন সুপরিকল্পিতভাবে পৃথিবীতে কেউ ব্যাংক ডাকাতি করেছে কি না, তা জানা নেই।”
ব্যাংক খাত সংস্কারের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, “ব্যাংকিং কমিশন গঠন করে সেটা করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেখানে যুক্ত থাকবে। মাসখানেকের মধ্যে এটা করা হবে। বিদেশি বিশেষজ্ঞ নেওয়া হবে। শ্রীলঙ্কা কীভাবে সংস্কার করেছে সেটাও দেখা হবে।”
এক সপ্তাহের মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের নতুন পর্ষদকে কর্মপরিকল্পনা দিতে বলেছেন জানিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান বলেন, “এখানে কাজ করতে হবে, বসে থাকার সুযোগ নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক সব ধরনের সহায়তা করবে। তারা সহায়ক ভূমিকা পালন না করলে পর্ষদ আবার পরিবর্তন করা হবে। সবাইকে নজরদারি করা হচ্ছে। অনিয়ম করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।”
কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না
এস আলম ছাড়া ব্যাংক খাতে আরও কয়েকটি গোষ্ঠি রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, সবার বিষয়েই খোঁজ নেওয়া হবে। অভিযোগ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
এসময় আর্থিক খাতের বিভিন্ন প্রসঙ্গে সাংবাতিকদের প্রশ্নের জবাব দেন গভর্নর। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ প্রশ্নে জানান, এরই মধ্যে নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
“ডলারের দর একটা স্থিতিশীল পর্যায়ে রয়েছে। এমন পর্যায়ে থাকলে আগামী ৬-৭ মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে। যদিও বন্যা একটু দুশ্চিন্তা তৈরি করছে। তা–ও আশাবাদী; হয়ত দু-এক মাস বেশি লাগতে পারে।”
রিজার্ভ থেকে এখন ডলার বিক্রি করা হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, “আপাতত রিজার্ভ কমার সম্ভবনা নেই। ভবিষ্যতে রিজার্ভ আরও বাড়বে। সরকারের চাহিদা (ডলার) আন্তব্যাংক মার্কেট থেকে মেটানো হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকও সংস্কারের আওতায় আসবে বলেও জানান নতুন গভর্নর।
এক সাথে টাকা তুলতে যাবেন না
সংবাদ সম্মেলনে আমানতকারীদের ধৈর্য ধরতে অনুরোধ করেন আহসান এইচ মনসুর। টাকার তোলার ক্ষেত্রে তড়িঘড়ি না করার পরামর্শও দেন তিনি।
“গ্রাহকদের বলব, ধৈর্য ধরেন। একবারে সবাই টাকা তুলতে যাবেন না। তাহলে কোনও ব্যাংকই সবার টাকা ফেরত দিতে পারবে না।
“গ্রাহকের আমানতের টাকা লোকসান হোক, এটা আমরা চাই না। আমরা টাকা ছাপিয়ে কোনও আমানতের টাকা দেব না। কারণ, সেটা জাতির জন্য ভালো হবে না। তখন মূল্যস্ফীতি ১০০ শতাংশ হয়ে যাবে। যেটুকু টাকা না তুললে নয়, সেটা তোলেন। ৫–৬ মাস পর অবস্থা পরিবর্তন হবে।”
আমানতকারীদের দুশ্চিন্তার কারণ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কোনও আমানতকারী টাকা ফেরত পায়নি এমন ঘটন ঘটেনি। ব্যাংকে আগে সুশাসন ফেরাতে হবে, যাতে আমানতকারীদের আস্থা ফিরে আসে। এজন্য নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
কমেন্ট