ব্যাংক খাত সংস্কারে টাস্কফোর্স, প্রকাশ হবে শ্বেতপত্র

ব্যাংক খাত সংস্কারে টাস্কফোর্স, প্রকাশ হবে শ্বেতপত্র

টাস্কফোর্সের সমন্বয়ক হিসেবে থাকবেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। ব্যাংক খাত সংস্কারে নানা পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি শ্বেতপত্র প্রকাশ করবে এই টাস্কফোর্স।

ব্যাংকিং খাত সংস্কারের লক্ষ্যে একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে আর্থিক খাত বিষয়ে অভিজ্ঞ ছয়জনকে সদস্য করা হয়েছে।

টাস্কফোর্সের সমন্বয়ক হিসেবে থাকবেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। ব্যাংক খাত সংস্কারে নানা পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি শ্বেতপত্র প্রকাশ করবে এই টাস্কফোর্স।

বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

টাস্কফোর্সের ছয় সদস্য হলেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, সাবেক ডেপুটি গভর্নর মুহাম্মদ এ (রুমি) আলী, ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান মেহরিয়ার এম হাসান, বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন, জেডএনআরএফ ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সের উপাচার্য এম জুবায়দুর রহমান এবং হিসাববিদ কোম্পানি হুদা ভাসি চৌধুরীর অংশীদার সাব্বির আহমেদ।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই টাস্কফোর্স প্রধানত আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষার্থে ব্যাংকিং খাতের বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতি, মন্দ সম্পদ, প্রধান ঝুঁকিগুলো নিরূপণ করবে। এ ছাড়া দুর্বল ব্যাংকগুলোর আর্থিক সূচক পর্যালোচনা, ঋণের প্রকৃত অবস্থা নিরূপণ, নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতি নিরূপণ, তারল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা, নিট মূলধন নির্ণয়, সম্পদের প্রকৃত মূল্য নির্ধারণ, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের মন্দ সম্পদকে পৃথকীকরণ–সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, টাস্কফোর্স মাধ্যমে সংকটকালীন প্রতিঘাত সক্ষমতা অর্জনে ব্যাংকের সুশাসন ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করার প্রক্রিয়ার আওতায় নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থার উন্নয়ন, ব্যাংকের সিদ্ধান্ত গ্রহণে রাজনৈতিক ও করপোরেট প্রভাব সীমিত করা, ব্যাংকের মালিকানা সংস্কার ইত্যাদি সংক্রান্ত প্রস্তাব পেশ করবে। সমস্যায় থাকা ব্যাংকের অর্থ উদ্ধার এবং বিধিকাঠামো ও সংশ্লিষ্ট নীতিমালা প্রস্তুত করা, দুর্বল ব্যাংকগুলোর জন্য বিভিন্ন নীতিগত ব্যবস্থা বা পদক্ষেপও গ্রহণ করবে এই টাস্কফোর্স।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এই টাস্কফোর্স আর্থিক খাতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আইন যেমন ব্যাংক কোম্পানি আইন, বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ইত্যাদির সংস্কার এবং সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি, ব্যাংক অধিগ্রহণ ও একীভূতকরণ–সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন, সংস্কার ও যুগোপযোগীকরণের প্রস্তাব দেবে এবং ব্যাংকিং খাতের শ্বেতপত্র প্রকাশের পদক্ষেপ নেবে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার ব্যাংক খাতের সংস্কারে একটি ব্যাংক কমিশন গঠনের ঘোষণা দিয়েছিল। তবে সরকার এখন টাস্কফোর্স গঠন করেছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ব্যাংক খাত সংস্কারে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ঋণ দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বাড়ানোর কাজেও এই ঋণ ব্যয় করা হবে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকেও সহায়তার আশ্বাস মিলেছে।

প্রাথমিকভাবে ৪০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণের বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমান পরিস্থিতিতে ঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে ৪৫ কোটি ডলার করা নিয়ে এখন আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এডিবি ব্যাংক খাত সংস্কারে ১৩০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে।

অন্যদিকে ন্যায্য, টেকসই ও গতিশীল অর্থনীতির ভিত তৈরি করতে দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী নেতা ও গবেষকদের নিয়ে ১২ সদস্যের একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই টাস্কফোর্সের সভাপতি করা হয়েছে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাবেক মহাপরিচালক ড. কে এ এস মুর্শিদকে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার এক অফিস আদেশে এই টাস্কফোর্স গঠনের তথ্য জানায়। আদেশে বলা হয়, বৈষম্যহীন টেকসই উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক কৌশল পুনঃনির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় সম্পদ আহরণের রিপোর্ট প্রণয়ন এবং একটি ন্যায্য, টেকসই ও গতিশীল অর্থনীতির ভিত তৈরির লক্ষ্যে এই টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে।

এই টাস্কফোর্সকে তিন মাসের মধ্যে একটি প্রাথমিক পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরি করতে বলা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে নির্দিষ্ট কাজ বা সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে টাস্কফোর্স গঠিত হয়। সাধারণত খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এটি গঠন করা হয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করাই এদের লক্ষ্য।

১৭ বছর পর মজুমদারমুক্ত হলো বিএবি পরবর্তী

১৭ বছর পর মজুমদারমুক্ত হলো বিএবি

কমেন্ট