আরেক দফা বাড়ল নীতি সুদহার, উঠল ৯.৫ শতাংশে
২৫ সেপ্টেম্বর বুধবার থেকে নতুন সুদের হার কার্যকর হবে বলে মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
চড়তে থাকা মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে নীতি সুদহার (পলিসি রেট বা রেপো রেট) আরেক দফা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এতদিন এই হার ছিল ৯ শতাংশ। তা থেকে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে।
এছাড়া নীতি সুদের করিডরের ঊর্ধ্বসীমা এবং নিম্নসীমাও বাড়ানো হয়েছে। নীতি সুদহারের ঊর্ধ্বসীমা স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি (এসএলএফ) রেট ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ১১ শতাংশ করা হয়েছে এবং নীতি সুদহার করিডরের নিম্নসীমা স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (এসডিএফ) রেট ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৮ শতাংশ করা হয়েছে।
২৫ সেপ্টেম্বর বুধবার থেকে নতুন সুদের হার কার্যকর হবে বলে মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সবশেষ এক মাস আগে গত ২৫ আগস্ট এতদিন এই হার ছিল ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৯ শতাংশ করা হয়েছিল। এসএলএফ রেট ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ১০ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছিল। এসডিএফ রেট ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে করা হয়েছিল ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ।
তার আগে ৮ মে নীতি সুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসএলএফ রেট ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছিল। এসডিএফ রেট ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৭ শতাংশ করা হয়।
২০২২ সালের মে মাস থেকে বেশ কয়েকবার নীতি সুদহার বাড়াল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে উদ্বেগজনক সূচক মূল্যস্ফীতির পারদ নামাতে নীতি সুদহার আরও বাড়ানো হবে বলে সোমবার সংবাদ সম্মেলননে ঘোষণা দিয়েছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
তিনি বলেছিলেন, “আগস্টে মূল্যস্ফীতি খানিকটা কমলেও সাড়ে ১০ শতাংশে অবস্থান করছে। এতে মানুষ খুব কষ্ট পাচ্ছে। আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার হচ্ছে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা। আর সেজন্য এই সূচক কমানোর অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে নীতি সুদহার আরও বাড়নো হবে। চলতি সপ্তাহেই এক দফা বাড়ানো হবে। আগামী মাসে আরেক দফা বাড়ানো হবে।”
গভর্নরের ঘোষণার একদিনের মাথায় মঙ্গলবার নীতি সুদহারের পাশাপাশি এসএলএফ ও এসডিএফ রেটও বাড়ানো হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ পাওয়ার অন্যতম প্রধান শর্ত ছিল ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাজারের উপর ছেড়ে দিতে হবে। একইসঙ্গে মূল্যস্ফীতি কমাতে নীতি সুদহার বাড়াতে হবে।
সেই শর্ত পূরণের অংশ হিসেবে নীতি সুদহার বাড়িয়ে চলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সবশেষ তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি বা মাসভিত্তিক) দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি এক লাফে বেড়ে ১১ শতাংশ ছাড়িয়ে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশে উঠেছিল; খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ।
আগস্টে তা কমে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশে নেমেছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি নেমেছে ১১ দশমিক ৩৬ শতাংশে।
আগস্ট মাসে ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ মূল্যস্ফীতির অর্থ হলো—গত বছরের আগস্ট মাসে যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পাওয়া যেত, এই বছরের আগস্টে সেই পণ্য বা সেবা পেতে ১১০ টাকা ৪৯ পয়সা খরচ করতে হয়েছে।
গত বছরের মার্চ থেকে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৯ শতাংশের উপরে অবস্থান করছে।
সোমবার সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর আহসান মনসুর বলেছিলেন, “আমি আশাবাদী, মূল্যস্ফীতি মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে একটি ভালো জায়গায় চলে আসবে। কতখানি ভালো জায়গায় আসবে সেটা হয়ত বলা যাবে না। তবে আমরা পলিসি টাইট করব, যাতে মূল্যস্ফীতি কমে আসে।
“আমাদের এখন বিনিময় হার স্থিতিশীল আছে। এছাড়া রেমিটেন্সও বাড়ছে। আশা করি আগামীতেও বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকবে। যদি এটা ধরে রাখা যায় তাহলে মূল্যস্ফীতি অবশ্যেই কমে আসবে।
“তাছাড়া আমাদের বাজেটে ব্যাংক থেকে ঋণের যে লক্ষ্য রাখা হয়েছে তা ৫০ হাজার কোটি টাকা কমানো হতে পারে। এটা হলে বেসরকারি বিনিয়োগও ঠিক হয়ে আসবে। সবমিলিয়ে আমরা যদি মূল্যস্ফীতি ৪-৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে পারি তাহলে সুদের হার আমরা কমিয়ে আনতে পারব। সে জন্য সময় দিতে হবে।”
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মূলত নীতি সুদহার বাড়ানো হয়। বিষয়টি হলো এমন—কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি মনে করে সেই দেশের মানুষের হাতে অর্থের সরবরাহ বেশি এবং সেই বাড়তি অর্থের কারণে বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গিয়ে মূল্যস্ফীতি উর্ধ্বমূখী হয়, তাহলে অর্থপ্রবাহ কমাতে নীতি সুদহার বৃদ্ধি করে তারা।
নীতি সুদহার বৃদ্ধির অর্থ হলো—ব্যাংকগুলোকে অতিরিক্ত সুদ দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ করতে হবে। ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের যে ঋণ দেয়, তার সুদহার বাড়ে। নীতি সুদহার বেশি থাকলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ধার করতে নিরুৎসাহিত হয়। নীতি সুদহার হলো রেপো।
এর সঙ্গে রিভার্স রেপো রেটের আলোচনাও প্রাসঙ্গিকভাবে চলে আসে। যেমন কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি মনে করে বাজারে অতিরিক্ত তারল্য আছে, তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই তারল্য তুলে নিতে পারে। এই তুলে নেওয়ার জন্য সুদের নির্দিষ্ট হার থাকে। অর্থ তুলে নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে যে হারে সুদ দেয়, তাকে বলা হয় রিভার্স রেপো। সাধারণত নীতি সুদহার বা রেপো রেটের তুলনায় রিভার্স রেপোর সুদহার কম থাকে।
কমেন্ট