আমানত ফেরত দিতে ৪ ব্যাংক পেল হাজার কোটি টাকা ‘বিশেষ’ ধার

আমানত ফেরত দিতে ৪ ব্যাংক পেল হাজার কোটি টাকা ‘বিশেষ’ ধার

সাড়ে ১২ থেকে সাড়ে ১৩ শতাংশ পর্যন্ত সুদে সবল পাঁচ ব্যাংক দুর্বল চার ব্যাংককে এই ধার দিয়েছে।

গ্রাহকদের আমানতের টাকা ফেরত দিতে প্রায় হাজার কোটি টাকা ‘বিশেষ’ ধার নিয়েছে নগদ অর্থের সংকটে থাকা চার ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হলো—ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্যারান্টার বা জামিনদারের বিপরীতে অতিরিক্ত তারল্য হাতে থাকা সবল পাঁচ ব্যাংক এই টাকা ধার দিয়েছে। ধার দেওয়া ব্যাংকগুলো হলো—সিটি ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক ও বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক।

সাড়ে ১২ থেকে সাড়ে ১৩ শতাংশ পর্যন্ত সুদে সবল পাঁচ ব্যাংক দুর্বল চার ব্যাংককে এই ধার দিয়েছে।

বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা এসব তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টির বিপরীতে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ৩০০ কোটি টাকা ধার পেয়েছে। এর মধ্যে সিটি ব্যাংক ২০০ কোটি, ডাচ-বাংলা ব্যাংক ৫০ কোটি ও মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ৫০ কোটি টাকা ধার দিয়েছে।

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ৩৫০ কোটি টাকা ধার পেয়েছে। ব্যাংকটিকে সিটি ব্যাংক ৩০০ কোটি ও মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ৫০ কোটি টাকা ধার দিয়েছে।

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংককে ২৫ কোটি টাকা ধার দিয়েছে ইস্টার্ন ব্যাংক। ন্যাশনাল ব্যাংক ২৭০ কোটি টাকা ধার পেয়েছে। ব্যাংকটিকে সিটি ব্যাংক ২০০ কোটি টাকা, মিউচ্যুয়্যাল ট্রাস্ট ব্যাংক ৫০ কোটি টাকা এবং বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক ২০ কোটি টাকা ধার দিয়েছে।

পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধার দিয়েছে সিটি ব্যাংক, ৭০০ কোটি টাকা।

আওয়ামী লীগ সরকার আমলে কয়েকটি ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংকগুলোতে বর্তমানে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গ্রাহকরা ভয়ে টাকা তুলে নেওয়ার চেষ্টা করলে ব্যাংগুলোতে আমানত তোলার হিড়িক পড়ে। 

অন্যান্য সময়ে এক ব্যাংক আরেক ব্যাংকের কাছ থেকে নগদ অর্থ ধার নিতে পারলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কোনও ব্যাংক দুর্বল ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকা ধার দিতে রাজি হয়নি।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সবল ১০ ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী ও তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। ব্যাংকগুলো হলো- রাষ্ট্রায়ত্ব সোনালী ব্যাংক, বেসরকা‌রি খা‌তের ব্র্যাক, ইস্টার্ন, সিটি, শাহ্‌জালাল ইসলামী, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, পূবালী, ঢাকা, ডাচ্‌-বাংলা এবং ব্যাংক এশিয়া।

বৈঠক শেষে জানানো হয়, আপাতত কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনও ব্যাংককে টাকা ছাপিয়ে ধার দেবে না। অন্য ব্যাংক থেকে ধারের ব্যবস্থা করে দেবে। অর্থাৎ বাজারের টাকা এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকে যাবে। ফলে মূল্যস্ফীতির ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হবে না।

দুর্বল ব্যাংকগুলোকে দেওয়া ঋণের টাকা ফেরত চাইলে সবল ব্যাংকগুলোকে তিন দিনের মধ্যেই তা ফেরত দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। ধার নেওয়া এই টাকা দিয়ে কোনও ব্যাংক ঋণ দিতে পারবে না।

কোন ব্যাংককে কত টাকার তারল্য সহায়তা দেওয়া হবে- তা নির্ধারণ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যস্ততায় দুর্বল ব্যাংকগুলোকে ধার দিতে রাজি হয় ১০ ব্যাংক।

গ্যারান্টি সুবিধা পেতে ইতোমধ্যে পাঁচটি ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করেছে। এগুলো হচ্ছে- বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল, সোশ্যাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, ইউনিয়ন ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। আরও দুটি ব্যাংক চুক্তিবদ্ধ হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।

সংকটে পড়া সাত ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াতে প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকার তারল্য সহায়তা চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে।

এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক ৫ হাজার কোটি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ৭ হাজার ৯০০ কোটি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ২ হাজার কোটি, ইউনিয়ন ব্যাংক ১ হাজার ৫০০ কোটি, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক সাড়ে ৩ হাজার কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংক ৫ হাজার কোটি ও এক্সিম ব্যাংক ৪ হাজার কোটি টাকা সহায়তা চেয়েছে।

ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ পৌনে ৫ লাখ কোটি টাকা পরবর্তী

ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ পৌনে ৫ লাখ কোটি টাকা

কমেন্ট