কর অব্যাহতি সুবিধা ফিরে পেল গ্রামীণ ব্যাংক
সর্বশেষ ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আয়কর অব্যাহতি ছিল। কিন্তু ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে সুবিধাটি বন্ধ করে দেয় আওয়ামী লীগ সরকার।
অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক আয়করমুক্ত সুবিধা ফিরে পেয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিকে ২০২৯ সাল পর্যন্ত আয়করমুক্ত সুবিধা দিয়ে গত বৃহস্পতিবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এনবিআর চেয়ারম্যান ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) সচিব আবদুর রহমান খান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, প্রতিবছর গ্রামীণ ব্যাংককে শুধু আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে।
এতে বলা হয়, আদেশ জারির তারিখ থেকেই এই সুবিধা কার্যকর হবে।
১৯৮৩ সালে সামরিক অধ্যাদেশের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠার পর থেকে সব সময়ই কর অব্যাহতি সুবিধা পেয়ে আসছে গ্রামীণ ব্যাংক। এই সুযোগ প্রতিষ্ঠানটি পেয়েছে গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশের ৩৩ ধারার আওতায়। ২০১৩ সালে অধ্যাদেশকে আইনে পরিণত করা হলেও বহাল রাখা হয় এ সুবিধা।
সর্বশেষ ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আয়কর অব্যাহতি ছিল। কিন্তু ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে সুবিধাটি বন্ধ করে দেয় আওয়ামী লীগ সরকার।
গ্রামীণ ব্যাংক সেসময় কর অব্যাহতি চেয়ে সরকারের কাছে আবেদনও করে, কিন্তু তাতে সম্মতি পায়নি। এবার নতুন করে পাঁচ বছর তিন মাসের জন্য কর অব্যাহতির সুবিধা পেল গ্রামীণ ব্যাংক।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দীর্ঘ ২৮ বছর গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, যিনি এখন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “নামে ব্যাংক হলেও গ্রামীণ ব্যাংক বাস্তবে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমও পরিচালনা করে। মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) থেকে নিবন্ধন নেওয়া সব ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানই আয়করমুক্ত। বিশেষ আইনে প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংককে এমআরএ থেকে নিবন্ধন নেওয়ার দরকার নেই। তবে সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে গ্রামীণ ব্যাংকের বৈশিষ্ট্য এমআরএর প্রতিষ্ঠানগুলোর মতোই। ফলে আয়কর অব্যাহতি পাওয়াটা গ্রামীণ ব্যাংকের ন্যায্য, যা আগে ছিলও।”
কর আরোপের ক্ষেত্রে জাতীয় সংসদে তা অনুমোদনের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও কর অব্যাহতি সরকার দিতে পারে বলেও মন্তব্য করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান।
এমআরএর ২০২৩ সালের তথ্যভান্ডার অনুযায়ী, গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্য ১ কোটি ৩ লাখ ৬০ হাজার জন। এর মধ্যে ৭১ লাখ ৬০ হাজার ঋণগ্রহীতা সদস্য ঋণ নিয়েছেন ২৪ হাজার ৭৫৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া ব্যাংকটির সদস্যদের ঋণের স্থিতি ১৬ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। আর সঞ্চয় স্থিতি ২২ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা।
ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচনের চেষ্টার স্বীকৃতি হিসেবে ২০০৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক ও এর তখনকার এমডি মুহাম্মদ ইউনূসকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়।
এদিকে আস–সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের দান করা অর্থের ওপরও ২০২৯ সাল পর্যন্ত আয়কর দিতে হবে না বলে ভিন্ন প্রজ্ঞাপন জারি করেছে এনবিআর। ২০১৭ সালে যাত্রা শুরু করা শায়খ আহমাদুল্লাহ প্রতিষ্ঠিত এ দাতব্য প্রতিষ্ঠান সাম্প্রতিক বন্যায় ত্রাণ তৎপরতা পরিচালনা করে আলোচনায় আসে।
২০২০ সালের করোনা প্রাদুর্ভাবের সময়ও সংগঠনটি দাতব্য কার্যক্রম করে প্রশংসিত হয়। ২০২২ সালে সিলেট ও সুনামগঞ্জ অঞ্চলে প্রবল বন্যা এবং চলতি বছরের আগস্টের বন্যায় সংগঠনটি ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করে।
কমেন্ট