প্রয়োজন ছাড়া ব্যাংক থেকে টাকা না তোলার আহ্বান

প্রয়োজন ছাড়া ব্যাংক থেকে টাকা না তোলার আহ্বান

বুধবার সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা এই আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রয়োজন না থাকলে আমানতকারীদের ব্যাংক থেকে টাকা না তোলার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা এই আহ্বান জানিয়ে বলেন, কিছু গ্রাহক প্রয়োজন ছাড়া আমানতের টাকা তুলে তা অন্য ব্যাংকে জমা করছেন। এর ফলে কোনও কোনও ব্যাংক টাকা দিতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছে। একসঙ্গে অনেক গ্রাহক টাকা তুলতে গেলে পৃথিবীর কোনও ব্যাংকই টাকা দিতে পারবে না।

তিনি বলেন, “ব্যাংকগুলো নিয়ে অহেতুক আতঙ্কের কিছু নেই। ব্যাংকগুলোকে ভালো অবস্থানে নিয়ে যেতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুপরিকল্পনা আছে।”

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, “আমরা সব আমানতকারীকে আহ্বান করছি, প্রয়োজনের বেশি টাকা ব্যাংক থেকে তুলবেন না। আমরা আস্থা ফেরাতে চাই। এ জন্য কাজ চলছে। যেসব ব্যাংকে সমস্যা হয়েছে, সেগুলোর পরিচালনা পর্ষদে ইতোমধ্যে পরিবর্তন আনা হয়েছে। সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে গত দেড় মাসে ৫ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকার তারল্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে।”

ব্যাংক খাতের সংস্কারে গঠিত টাস্কফোর্স কার্যকর কিছু করছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র শিখা বলেন, ব্যাংক খাতে তিনটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। এই টাস্কফোর্সগুলো তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এখনও বলার মতো কোনও অগ্রগতি হয়নি। দ্রুত কিছু অগ্রগতি হবে আশা করছি।

হুসনে আরা শিখা বলেন, “আমরা ১১টি ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করেছি। এসব ব্যাংক নিয়ে কাজ চলছে। আমাদের মনোযোগ এখন ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোর দিকে। এগুলো ঠিক হয়ে এলে অন্য ব্যাংকগুলোর দিকে নজর দেওয়া হবে। এই ১১টার পরে হয়তো আরও ৪টি ব্যাংক নিয়ে কাজ শুরু করা হবে।”

তিনি বলেন, মূলত শরিয়াভিত্তিক ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলো থেকে গ্রাহকরা নগদ টাকা তুলতে পারছেন না।

“গ্রাহকের যে টাকা ব্যাংকে রয়েছে সেটা নিয়ে আতংকিত না হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। কারণ কোনো ব্যাংকে গ্রাহকের টাকা থাকলে সেই টাকা গ্রাহকদের সময়মত পরিশোধ করার দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপরও থাকে, যদি ব্যাংকটি বিপদে পড়ে।“

হুসনে আরা শিখা বলেন, আস্থার অভাবে ও ভুল বার্তার কারণে গ্রাহকরা আগেই বেশি সচেতন হয়ে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলো থেকে টাকা উত্তোলন করেছেন। এতে ব্যাংকের সব গ্রাহক একসঙ্গে টাকা উত্তোলন করেছেন। তাতে এসব ব্যাংকে এক ধরনের তারল্য সংকট তৈরি হয়েছে।

“সেটার জন্য আমরাই দায়ী। কারণ তাদের কাছে অনেক ভুল বার্তা দেওয়া হয়েছে।“

ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার সহায়তা দেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, গ্রাহকরা এখন সবাই এক সঙ্গে টাকা তুলতে এসব ব্যাংকে ভিড় করছেন। এসব ব্যাংককে বাঁচাতে হলে এক সঙ্গে আমানত তোলা যাবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তারল্য সহায়তা অব্যাহত থাকলেও আমানত তোলার সংখ্যা কমানো না গেলে এ সমস্যা থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, এটা হতে পারে দুর্বল ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ তারল্য সহায়তা আশা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক তা দিতে পারছে না। ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যানরা এ প্রক্রিয়া কীভাবে আরও বেশি ফলপ্রসূ হতে পারে তা নিয়ে গভর্নরের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।

বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীতে তত্ত্বাবধায়ক (রিসিভার) নিয়োগ প্রসঙ্গে মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক স্বপ্রণোদিত হয়ে কোনও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ‘রিসিভার’ নিয়োগ করবে না। আদালতের নির্দেশ থাকলে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বিভিন্ন ব্যাংকে বিতর্কিত শিল্পগোষ্ঠীগুলোর ঋণসংক্রান্ত অনিয়ম সম্পর্কে জানতে চাইলে হুসনে আরা বলেন, বিএফআইইউ ইতোমধ্যে অনেক হিসাব জব্দ করেছে। তারা এ বিষয় নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে কোনও তথ্য দেয়নি।

অর্থ পাচার নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র বলেন, “পাচার করা অর্থ ফরমাল (বৈধ) চ্যানেলে গেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তদন্ত করবে। কিন্তু হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার করা হলে সেটি তদন্ত করা কঠিন। বিএফআইইউ এ বিষয়ে কাজ করছে। অর্থ পাচারের বিষয়ে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি; কিন্তু এটা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হবে, জোরজবরদস্তি করে হবে না। আমাদের প্রচুর প্রবাসী আয় আসছে।”

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয় প্রেরণে শীর্ষে চলে এসেছে। এই দেশ থেকে শুধু যে রেমিট্যান্স এসেছে তা নয়, বিনিয়োগও আসছে।”

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে হুসনে আরা শিখা বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদহার বাড়ানোর পর মূল্যস্ফীতি কমে এসেছিল। আগামী ছয় মাস এর ধারাবাহিকতা থাকলে মূল্যস্ফীতি আশা করছি ৬ শতাংশের কাছাকাছি নেমে আসবে। ইতোমধ্যে অনেক দেশে এটা কাজ করেছে। ফলে আমরাও একই ধরনের নীতিতে আছি। আশা করছি, আমাদের দেশেও এই নীতি কাজ করবে।”

৫ আগস্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনে সরকার পতনের পর থেকে বিভিন্ন ব্যাংকে গিয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী টাকা পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। বিশেষ করে এস আলমের মালিকানাধীন ও পর্ষদে তাদের নিয়ন্ত্রণ থাকা ব্যাংকগুলোতে এ সংকট দেখা দেয়।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর নতুন গভর্নর হিসেবে আহসান এইচ মনসুর দায়িত্বে আসার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত তিন মাসে চেষ্টা করেও পরিস্থিতির উন্নতি করতে পারেনি।

দুর্বল ব্যাংকগুলোকে তার‌ল্য সহায়তা দিয়েও ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। ব্যাংকাররা বলছেন, গ্রাহকরা নতুন করে টাকা রাখার বদলে আমানত তুলেই নিতে চাচ্ছেন, যে কারণে সংকট বাড়ছে।

প্রথমবারের মতো দুই অঙ্কে উঠল নীতি সুদহার পরবর্তী

প্রথমবারের মতো দুই অঙ্কে উঠল নীতি সুদহার

কমেন্ট