মুডি’স-এর মূল্যায়ন নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের আপত্তি
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, “আমরা আশা করি, মুডি’স শিগগিরই বাংলাদেশ সফরের পর দেশের অর্থনীতির আরও ব্যাপকভাবে মূল্যায়ন করবে। তখন তারা সংশ্লিষ্ট অংশীজন ও অভিজ্ঞ অর্থনৈতিক পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে সরাসরি পরামর্শ করবে। এর ফলে সরকারের নেওয়া নীতি ও উন্নয়নের সঠিক মূল্যায়ন করতে সক্ষম হবে তারা।”
বাংলাদেশ নিয়ে আন্তর্জাতিক ঋণমান সংস্থা মুডি’স-এর মূল্যায়ন যথাযথ হয়নি বলে মনে করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশের ঋণমান কমানোর ঘটনায় এক প্রতিক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, গণ–অভ্যুত্থানের পর নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা করেছে, তা মুডি’স রেটিংসে যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার এ–সংক্রান্ত দীর্ঘ এক ব্যাখ্যা দিয়েছে। এতে ব্যাংক খাতের সংস্কার, ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন বিষয়ে বর্তমান সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র সাঈদা খানমের পাঠানো ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, “আমরা আশা করি, মুডি’স শিগগিরই বাংলাদেশ সফরের পর দেশের অর্থনীতির আরও ব্যাপকভাবে মূল্যায়ন করবে। তখন তারা সংশ্লিষ্ট অংশীজন ও অভিজ্ঞ অর্থনৈতিক পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে সরাসরি পরামর্শ করবে। এর ফলে সরকারের নেওয়া নীতি ও উন্নয়নের সঠিক মূল্যায়ন করতে সক্ষম হবে তারা।”
অনিশ্চিত রাজনৈতিক পরিবেশে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ থেকে বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়ে দিয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং সংস্থা মুডি’স।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি তাদের সূচকে বাংলাদেশের ঋণমান ‘বি১’ থেকে ‘বি২’তে নামিয়েছে। অর্থাৎ, বাংলাদেশ ‘স্থিতিশীল’ থেকে ‘নেতিবাচক (ঋণাত্মক)’ অবস্থায় চলে গেছে।
সোমবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশের রেটিং কমানোর ক্ষেত্রে মুডি’স সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পট পরিবর্তনকে কারণ হিসাবে দেখিয়েছে। বিশ্বের প্রধান তিনটি ঋণমান যাচাইকারী প্রতিষ্ঠানের একটি মুডি’স। তাদের ঋণমানের প্রভাব বাণিজ্যিক ঋণের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়।
আর্থিক খাতের বিশ্লেষকেরা মনে করেন, মুডি’স এর মতো প্রতিষ্ঠান ঋণমান কমালে তা ব্যবসা-বাণিজ্যের খরচ ও বিদেশি ঋণের সুদের হার বাড়তে দিতে পারে। এছাড়া বিদেশি বিনিয়োগও বাধাগ্রস্ত হতে পারে, কারণ খরচ বেশি হলে বিদেশিরা এ দেশে বিনিয়োগে উৎসাহিত হবেন না।
মুডি’স গত ৩১ মে বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়েছিল। সেবার তারা ঋণমান এক ধাপ কমিয়ে ‘বিএ৩’ থেকে ‘বি১’ এ নামিয়েছিল। তখন কারণ দেখানো হয়েছিল, বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উঁচু মাত্রার দুর্বলতা ও তারল্যের ঝুঁকিতে রয়েছে।
তার দুই মাস পর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় পড়েছে বাংলাদেশ।
ব্যবসায়ীরাও চাইছেন একটি নির্বাচিত সরকার ফিরুক। তবে নির্বাচনটি কবে হবে, অন্তর্বর্তী সরকার এখনও তার কোনও সুস্পষ্ট ঘোষণা না দেওয়ায় অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে।
এই অবস্থায় ঋণমান কমানোর ক্ষেত্রে মুডি’স বলছে, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতার পর সরকার পরিবর্তনের ফলে উচ্চ রাজনৈতিক ঝুঁকি, নিম্ন প্রবৃদ্ধি সরকারের তারল্যের ঝুঁকি, বৈশ্বিক ভঙ্গুরতা এবং ব্যাংকিং খাতের ঝুঁকি বাড়িয়েছে। এটা স্বল্পমেয়াদী অভ্যন্তরীণ ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়াচ্ছে এবং তার ফলে তারল্য ঝুঁকি বাড়ছে।
উচ্চ সামাজিক ঝুঁকির পাশাপাশি সুস্পষ্ট নির্বাচনী রোডম্যাপ না থাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং সাম্প্রদায়িকতার উত্থানও রাজনৈতিক ঝুঁকি আরও বাড়িয়েছে বলে সংস্থাটির পর্যবেক্ষণ।
অন্তর্বর্তী সরকার বিশদ সংস্কারের ওপর জোর দিলেও তা কার্যকর করতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ী মুডি’স।
“অন্তর্বর্তী সরকার যদি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও উচ্চ বেকারত্ব মোকাবেলাসহ দ্রুত কিছু কাজ না করতে পারে, তবে সংস্কার কাজে চ্যালেঞ্জ আরও বাড়তে পারে।”
প্রতিবেদনে বলা হয়, রেমিটেন্স প্রবাহ এবং উন্নয়ন অংশীদারদের কাছ থেকে পাওয়া ঋণের পরিমাণ বাড়লেও গত কয়েক বছরে রিজার্ভের স্থিতিশীলতা কমায় বাহ্যিক কিছু আশঙ্কার ঝুঁকি রয়ে গেছে।
মুডি’স বলছে, সাম্প্রতিক বিক্ষোভ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় দেশের ভেতরে চাহিদা-সরবরাহ চেইন বিঘ্নিত হওয়ায় এই ঝুঁকিগুলো তৈরি হয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে রপ্তানি খাতে এবং এতে তৈরি পোশাক খাতে সম্ভাবনা কমে গেছে।
নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হলেও নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠিত না হলে সার্বিক স্থিতিশীলতা ফিরবে না বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।
এদিকে বাংলাদেশের ঋণমান এক ধাপ অবনমনের কারণে বেসরকারি খাতের ছয়টি ভালো ব্যাংকের দীর্ঘমেয়াদি আমানতের পূর্বাভাস ‘স্থিতিশীল’ থেকে ‘নেতিবাচক’ করে দিয়েছে মুডি’স। ব্যাংকগুলো হলো—ব্র্যাক, সিটি, ডাচ্-বাংলা, ইস্টার্ন, মার্কেন্টাইল ও প্রিমিয়ার ব্যাংক। দেশের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে কেবল এ ছয়টি ব্যাংকেরই মুডি’স রেটিং রয়েছে।
মুডি’স ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশের রেটিং বা ঋণমান দিয়ে আসছে। এর পর থেকে ১৪ বছরের মধ্যে এই প্রথমবারের মতো সংস্থাটি তাদের পূর্বাভাস ‘স্থিতিশীল’ থেকে ‘নেতিবাচক’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
এর আগেও মুডি’স-এর রেটিং নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ৩১ মে মুডি’স দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়ে দিয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটি বলেছিল, বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে এখন উঁচু মাত্রার দুর্বলতা ও তারল্যের ঝুঁকি রয়েছে। একই সঙ্গে চলমান সংকটের মধ্যে বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। এ কারণে সংস্থাটি বাংলাদেশের ঋণমান এক ধাপ কমিয়ে বিএ৩ থেকে বি১-এ নামিয়েছিল। তবে বাংলাদেশের জন্য মুডিস তাদের পূর্বাভাস ‘স্থিতিশীল’ রেখেছে।
সে সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ছিলেন আব্দুর রউফ তালুকদার। তিনি বলেছিলেন, “এই রেটিং কমানোর বিষয়ে আমাদের বিশেষ কিছু আসে যায় না। এটা করার পেছনে ভূরাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে।”
এবারের রেটিং নিয়ে যা বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক
মুডি’স-এর মূল্যায়ন নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাখ্যায় বলা হয়, ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার অর্থনীতি, আইনশৃঙ্খলা, দুর্নীতি প্রতিরোধব্যবস্থা, নির্বাচন ও জনপ্রাশাসনের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় মৌলিক সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। অর্থনীতি সামাল দেওয়া ও আর্থিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংক বড় ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। ইতিমধ্যে তিনটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে—১. ব্যাংকগুলোর সম্পদ মানের পর্যালোচনা, যা কিনা পরে ব্যাংক খাতের বড় সংস্কারের দিকে ধাবিত করবে। ২. বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যক্রম শক্তিশালী এবং ৩. চুরি হওয়া অর্থ দেশ–বিদেশ থেকে উদ্ধার করা।
একই সঙ্গে অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ এবং ন্যায়সংগত ও টেকসই উন্নয়নের জন্য সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারে টাস্কফোর্স গঠন করেছে সরকার। এসব টাস্কফোর্স কাজ শুরু করেছে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনাও করছে। টাস্কফোর্সে সরকারে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ী নেতা ও রাজনৈতিক প্রতিনিধিরা রয়েছেন।
“এসব উদ্যোগের সঙ্গে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, যুক্তরাজ্য সরকার, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞরা যুক্ত রয়েছেন।”
কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও বলেছে, সংস্কার কার্যক্রম অন্তর্ভুক্তিমূলক করার প্রাথমিক লক্ষ্য হচ্ছে সরকারে গৃহীত পদক্ষেপে ভুল এড়ানো। দেশে দীর্ঘ মেয়াদে টেকসই প্রবৃদ্ধি ও ন্যায়সংগত সামাজিক উন্নয়নের জন্য সরকার সংস্কারকে অগ্রাধিকার ও বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এসব পদক্ষেপে তাৎক্ষণিকভাবে অর্থনৈতিক সুবিধা না–ও পাওয়া যেতে পারে, তবে সেগুলো শক্তিশালী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও সামাজিক অগ্রগতির পথ প্রশস্ত করবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, সামষ্টিক অর্থনীতির বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ব্যালান্স অব পেমেন্টে বড় ধরনের ভারসাম্যহীনতা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে প্রতিনিয়ত পতন, ডলারের বিপরীতের টাকার ধারাবাহিক অবমূল্যায়ন।
এ ছাড়া মূল্যস্ফীতির হার ব্যাপকভাবে বেড়েছিল, যার ফলে মানুষের কষ্ট হচ্ছিল। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বাহ্যিক খাতের সূচক স্থিতিশীল করার উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। ডলারের বিনিময় হার ১২০ টাকায় স্থিতিশীল রয়েছে, এ ক্ষেত্রে প্রবাসী আয় ও পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধি সহায়ক ভূমিকা রাখছে।
“বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রি থেকে বিরত রয়েছে, এতে বিপিএম ৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ১৯ বিলিয়ন ডলারে স্থিতিশীল হয়েছে। এ ছাড়া ২৫০ কোটি ডলারের বিদেশি ঋণ পরিশোধও করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এসব ইতিবাচক ফলে বোঝা যায়, বেশ কিছু দুর্বলতা মোকাবিলা করা হয়েছে।”
কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও জানায়, বিগত সরকারের আমলে কয়েকটি পরিবার ও গোষ্ঠী রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যাংক লুট করায় আর্থিক খাত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ১১টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাদের কার্যক্রম, তারল্য, ব্যবস্থাপনা ও কর্মক্ষমতা প্রতিদিন পর্যবেক্ষণ করায় প্রাথমিকভাবে স্থিতিশীলতা দেখা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গ্যারান্টি দেওয়ার মাধ্যমে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে তারল্যসহায়তার ব্যবস্থা করছে। এই ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় ইসলামী ব্যাংক ইতিমধ্যে গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করেছে। তাদের নগদ প্রভাব ও প্রবাসী আয় বেড়েছে। যার ফলে আগের মতো আর অন্য ব্যাংক থেকে তারল্যসহায়তার প্রয়োজন হচ্ছে না ইসলামী ব্যাংকের।
আরও কয়েকটি ব্যাংক গ্রাহকদের আস্থা ফেরত পাওয়ার দিকে এগোচ্ছে। এই ইতিবাচক অগ্রগতি হওয়ার পরও কয়েকটি ব্যাংকের তারল্যসংকট দীর্ঘস্থায়ী সমাধানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ ছাড়া ব্যাংক খাতের সমস্যার গঠনমূলক সমাধানে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ও মার্কিন ট্রেজারির সহায়তায় কৌশল তৈরি করা হচ্ছে।
“আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে চাই, ব্যাংকব্যবস্থায় কোনো পদ্ধতিগত ঝুঁকি নেই এবং সংক্রামক প্রভাবও থাকবে না। যদিও ব্যাংক খাতের সূচকগুলো এখনো লক্ষণীয় উন্নতি করেনি, তবে আমরা প্রত্যাশা করি, অদূর ভবিষ্যতে হবে।”
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাখ্যায় আরও বলা হয়, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষ অগ্রাধিকার। আগামী মাসগুলোতে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে নীতিগত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। চাহিদার দিক থেকে রাশ টানতে বাংলাদেশ ব্যাংক কঠোর মুদ্রানীতি নিয়েছে। সুদের হার বাজারভিত্তিক করার পাশাপাশি রাজস্ব ঘাটতি পূরণে টাকা ছাপানো বন্ধ, তিন ধাপে নীতি সুদ সাড়ে ৮ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে।
অন্যদিকে পণ্যের জোগান বাড়াতে সারের মজুত বাড়ানোর পাশাপাশি, কৃষিপণ্যের আমদানি নিরবচ্ছিন্ন রাখতে বৈদেশিক মুদ্রার জোগান বাড়ানো এবং নিত্যপণ্য আমদানিতে শুল্ক–কর কমানো এবং বিলাসবহুল নয়, এমন পণ্য আমদানি এলসি মার্জিন বাদ দেওয়া হয়েছে। ব্যাপক বন্যার কারণে ফসল ও শাকসবজির ক্ষতির কারণে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এরপরও গত তিন মাস খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি কমেছে।
“সরকার বিশ্বাস করে, বর্তমানে যে কৌশলে এগোনো হচ্ছে, তাতে মূল্যস্ফীতি টেকসইভাবে ৫–৬ শতাংশে নামিয়ে আনা যাবে।”
বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, দেশের অর্থনীতি একটি বড় রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সরকার ইতোমধ্যে অর্থনীতির স্বার্থে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড হাতে নিয়েছে। এসব পদক্ষেপের ইতিবাচক ফল পেতে আরও সময় লাগবে। আর্থিক খাত সংস্কারের জন্য দেশীয় রাজনৈতিক সমর্থন ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সমর্থন অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতি বাড়াবে বলে মনে করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কমেন্ট