খেলাপি ঋণ ৩০ শতাংশে পৌঁছাবে: গভর্নর
গভর্নর বলেন, সামনে খেলাপি ঋণ যেটা দাঁড়াবে তার অর্ধেক বা আড়াই লাখ কোটি টাকা হবে এস আলম, সাইফুজ্জামানসহ (সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী) বড় কয়েকটি গ্রুপ ও ব্যবসায়ীর। ২০১৭ সালের পরে এসব ঋণ নেওয়া হয়। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা পাচার করা হয়।
ব্যাংক খাতের প্রধান সমস্যা খেলাপি ঋণ ২৫-৩০ শতাংশে পৌঁছে যাবে বলে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। এসব ঋণের বড় অংশ ২০১৭ সালের পর দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিবিষয়ক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। রবিবার দুপুরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এই শ্বেতপত্র হস্তান্তর করা হয়।
শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদনটি জমা দেয়। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এই বক্তব্য দেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গভর্নরের এই বক্তব্যের ভিডিও ফেসবুকে শেয়ার করেছেন।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, “আমরা দেশের আর্থিক খাতের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছি। সামনে খেলাপি ঋণ ২৫-৩০ শতাংশে পৌঁছে যাবে। এখন যা সাড়ে ১২ শতাংশ। আগামী মাসে তা ১৫ শতাংশ, এরপর ১৭ শতাংশ হয়ে ধীরে ধীরে ৩০ শতাংশে পৌঁছে যেতে পারে। এই খেলাপি আগেই হয়ে আছে। এখন হিসাবে তা আসবে। এটা কমিয়ে আনতে আমরা কাজ শুরু করেছি।”
গভর্নর বলেন, সামনে খেলাপি ঋণ যেটা দাঁড়াবে তার অর্ধেক বা আড়াই লাখ কোটি টাকা হবে এস আলম, সাইফুজ্জামানসহ (সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী) বড় কয়েকটি গ্রুপ ও ব্যবসায়ীর। ২০১৭ সালের পরে এসব ঋণ নেওয়া হয়। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা পাচার করা হয়।
আহসান মনসুর বলেন, “আমাদের নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে তদারকি জোরদার করতে হবে, যা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। ব্যাংকগুলোর সম্পদের মান পরীক্ষা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে করা হচ্ছে, যা ১১ ডিসেম্বর শুরু হবে। প্রথমে ১২টি ব্যাংক ও পরে ২০ ব্যাংকে নিরীক্ষা করা হবে। এতে প্রকৃত চিত্র বের হয়ে আসবে।”
“এরপর এসব ব্যাংকের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত প্রয়োজন হবে। আমরা অবশ্যই আমানতকারীদের রক্ষা করতে পদক্ষেপ নেব। আমানতের সুরক্ষা দেওয়া হবে। ব্যাংকগুলোকে টাকা দেওয়া হয়েছে, আশা করছি এর মাধ্যমে গ্রাহকদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসবে।”
গভর্নর বলেন, “ব্যাংকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আইন করা হচ্ছে। পাচারের টাকা ফেরত আনতে আন্তর্জাতিক সব সংস্থাকে কাজে লাগানো হচ্ছে। তবে এটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া।”
নানা অনিয়মে জর্জরিত ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ গত কয়েক মাস থেকেই বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাদাগ তথ্য বলছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর—তিন মাসে তা আগের তিন মাসের চেয়ে প্রায় ৭৪ হাজার কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা। এটি বিতরণ করা মোট ঋণের ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ১৬ লাখ ৮২ হাজার ৮২১ কোটি টাকা।
জুন শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। তারও তিন মাস আগে মার্চ শেষে ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা।
গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। যা ছিল ওই সময় পর্যন্ত বিতরণ করা ঋণের ৯ শতাংশ।
তিন মাস পর পর (প্রান্তিক) খেলাপি ঋণের তথ্য প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কমেন্ট