৬০ কোটি ডলার দিচ্ছে এডিবি, বাড়বে রিজার্ভ

৬০ কোটি ডলার দিচ্ছে এডিবি, বাড়বে রিজার্ভ

আগামী সপ্তাহেই এই অর্থ ছাড় করবে সংস্থাটি; যা যোগ হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভে। তখন রিজার্ভ বেশ খানিকটা বাড়বে বলে জানিয়েছেন এডিবি ঢাকা অফিসের বহিঃসম্পর্ক বিভাগের প্রধান গোবিন্দ বার।

আর্থিক খাতের সংস্কারে বাংলাদেশকে ৬০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা দিচ্ছে ম্যানিলাভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ১২০ টাকা) হিসাবে এই অর্থের পরিমাণ ৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা।

বুধবার ফিলিপিন্সের রাজধানী ম্যানিলায় সংস্থাটির সদর দপ্তরে বোর্ড সভায় এ ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে এডিবি।

আগামী সপ্তাহেই এই অর্থ ছাড় করবে সংস্থাটি; যা যোগ হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভে। তখন রিজার্ভ বেশ খানিকটা বাড়বে বলে জানিয়েছেন এডিবি ঢাকা অফিসের বহিঃসম্পর্ক বিভাগের প্রধান গোবিন্দ বার।

এআরএইচ ডট নিউজকে তিনি বলেন, “ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পরই আর্থিক খাতের সংস্কারে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এডিবি। সেই প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবেই বাজেট সাপোর্ট হিসেবে এই ৬০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহেই এই অর্থ পাবে বাংলাদেশ; যোগ হবে রিজার্ভে।”

গত বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংক যে ‘উইকলি সিলেক্টেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন) হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ১৮ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৪ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার।

রিজার্ভের প্রধান দুই উৎস হচ্ছে—রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের ঊর্ধ্বমূখী ধারা অব্যাহত রয়েছে। এ অবস্থায় এডিবি’র বাজেট সহায়তার ৬০ কোটি ডলার যোগ হলে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা প্রকল্প সহায়তার পাশাপাশি বাজেট সহায়তাও দিয়ে থাকে। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের বিপরীতে বিনিয়োগ হিসেবে সহায়তা দেয় তারা। এ ছাড়া সরকারকে অনেকটা নগদ অর্থ হিসেবে বাজেট সহায়তা দেয়। এই অর্থ সরকার নিজের মতো করে খরচ করতে পারে।

তবে দুই ক্ষেত্রেই নানা ধরনের সংস্কারের শর্তও থাকে। বাজেট সহায়তা ঋণে প্রকল্প ঋণের চেয়ে নমনীয় শর্ত থাকে।

এডিবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনীতির উন্নয়ন ও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ সহজীকরণ কর্মসূচীতে এ অর্থ ব্যয় করা হবে। এটা একটা নীতিভিত্তিক ঋণ, যার মাধ্যমে দেশের শাসন ও অর্থনৈতিক কাঠামোগত সংস্কার, বিশেষ করে রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থা, সরকারি বিনিয়োগ প্রকল্পের দক্ষতা উন্নয়ন, বেসরকারি খাত ও বিদেশি বিনিয়োগ সহজীকরণ এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠায় এ অর্থ ব্যয় হবে।

এডিবির আঞ্চলিক প্রধান অর্থনীতিবিদ আমিনুর রহমান বলেন, “এই নীতিভিত্তিক ঋণ রাজনৈতিক পট পরিবর্তন পরবর্তী তাৎক্ষণিক প্রয়োজনে দেওয়া হচ্ছে। অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও শাসন ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি অর্থনীতিকে স্বচ্ছ ও প্রতিযোগিতামূলক করতে এই ঋণ দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশকে।”

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা দেখানো হয়েছে। ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক ঋণ নেওয়া হবে এক লাখ ২৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা। বাজেটের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের জিডিপির আকার ৪৬৬ বিলিয়ন ডলার।

এডিবি জানিয়েছে, এ ঋণ কর্মসূচীর বিষয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্ব ব্যাংক ও অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে পরামর্শ করা হয়েছে। বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে কম, জিডিপির মাত্র ৭ দশমিক ৪ শতাংশ রাজস্ব আহরণকারী দেশ।

এই ঋণ দিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নের মৌলিক নীতি, বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণ বাড়াতে নীতিগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। রাজস্ব আহরণসহ সব ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি প্রবর্তন, পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ এবং ভর্তুকি ও করছাড় যৌক্তিকীকরণ করা হবে।

স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি নিশ্চিত করে সরকারি বিনিয়োগ প্রকল্পগুলোর স্বচ্ছতা ও দক্ষতা উন্নত করা এ ঋণের আরেক উদ্দেশ্য। এর মাধ্যমে একটি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা হবে, যাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা উৎসাহিত হয়।

এ কর্মসূচীর আওতায় ব্যবসা সহজীকরণ করতে ১৩০টি সরকারি সেবাকে অনলাইন করা হবে। রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, কর্মদক্ষতা পর্যবেক্ষণ এবং বিদেশি বিনিয়োগ অনুমোদন প্রক্রিয়া সহজীকরণ, ব্যবসা শুরুর খরচ কমানো এবং রপ্তানি বহুমুখীকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া সামগ্রিকভাবে সংস্কার করে সহজীকরণই করাই এই ঋণ কর্মসূচীর মূল উদ্দেশ্য।

বাড়ি-অফিসে গিয়ে খেলাপি ঋণ আদায়ে কতটা সুফল মিলবে পরবর্তী

বাড়ি-অফিসে গিয়ে খেলাপি ঋণ আদায়ে কতটা সুফল মিলবে

কমেন্ট