কলমানি সুদহার এক যুগে সর্বোচ্চ

কলমানি সুদহার এক যুগে সর্বোচ্চ

২০১২ সালের পর এটিই কল মানির সর্বোচ্চ সুদহার। ওই বছর ১২ দশমিক ৮২ শতাংশে উঠেছিল এই সুদহার।

আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে স্বল্প সময়ের জন্য ধার করা অর্থের সুদের হার বা কলমানি রেট বেড়ে ১০ দশমিক ১৫ শতাংশে উঠেছে। এই সুদহার ১২ বছর বা এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ। সপ্তাহের শেষ দিনে বৃহস্পতিবার কলমানি বাজারে এক দিনের জন্য ধার নেওয়া টাকার গড় সুদহার উঠেছে ১০ দশমিক ১৫ শতাংশে।

২০১২ সালের পর এটিই কল মানির সর্বোচ্চ সুদহার। ওই বছর ১২ দশমিক ৮২ শতাংশে উঠেছিল এই সুদহার।

বুধবার ছিল বড় দিনের ছুটি। আগের দিন মঙ্গলবার এই সুদহার ছিল ১০ দশমিক ১০ শতাংশ।

প্রায় দেড় মাস ধরে কলমানি মার্কেটে সুদের হার ১০ শতাংশের উপরে অবস্থান করছে। গত ১৩ নভেম্বর এই সুদহার দুই অঙ্কের (ডাবল ডিজিট) ঘরে ১০ শতাংশে ওঠে। এর পর থেকে ১০ শতাংশের ওপরে রয়েছে।

কলমানি বাজারে সুদহার নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

এক বছর আগে গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর কলমানি সুদহার ছিল ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ। ছয় মাস আগে ৩০ জুন ছিল ৯ দশমিক শূন্য এক শতাংশ।

আবার চার দিন ও সাত দিনের জন্য টাকা ধারের ক্ষেত্রে এই সুদহার আরও বেশি। বৃহস্পতিবার চার দিনের ধারের ক্ষেত্রে গড় সুদহার ছিল ১১ দশমিক ৩৯ শতাংশ। সাত দিনের ধারের ক্ষেত্রে এই সুদহার ছিল ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ।

দশ দিনের ধারের ক্ষেত্রে ছিল আরও বেশি, ১২ দশমিক ৭১ শতাংশ। আর ১১ দিনের ১২ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

তবে কলমানিতে বিভিন্ন মেয়াদে ধারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি টাকা লেনদেন হয় এক দিনের ধার হিসেবে।

কলমানি হচ্ছে সরকারি–বেসরকারি ব্যাংকগুলোর নিজেদের মধ্যে টাকা ধার দেওয়া–নেওয়ার একটি ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থায় যেসব ব্যাংকের হাতে নগদ টাকার সংকট থাকে তারা তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মেটাতে যেসব ব্যাংকের কাছে অতিরিক্ত তারল্য বা অর্থ থাকে তাদের কাছ থেকে টাকা ধার করে। এ জন্য সুদ দিতে হয়।

সুদহার নির্ধারিত হয় চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে। ব্যাংকগুলো নিজেদের মধ্যে টাকা ধার দেওয়া–নেওয়া করলেও দিন শেষে লেনদেন ও সুদের তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক কলমানি বাজারের প্রতিদিনের লেনদেন ও সুদের তথ্য প্রকাশ করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১২ বছর আগে ২০১২ সালে কলমানিতে এক দিনের জন্য টাকা কর্জ বা ধার দেওয়ার ক্ষেত্রে গড় সুদের হার ১২ দশমিক ৮২ শতাংশে উঠেছিল। এর পর গত ১৩ নভেম্বরের আগ পর্যন্ত এই সুদহার দুই অঙ্কের (ডাবল ডিজিট, ১০ শতাংশ) নিচে ছিল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে ২০১৬ সাল থেকে কলমানি বাজারের তথ্য রয়েছে। সেই তথ্যে যায়, ২০১৬ সালের পর বৃহস্পতিবারই প্রথম কলমানিতে এক দিনের ধারের ক্ষেত্রে গড় সুদহার ১০ দশমিক ১৫ শতাংশে উঠেছে।

এদিন এক দিনের জন্য কলমানিতে ৪ হাজার ৩২০ কোটি টাকা লেনদেন হয়, যার সর্বোচ্চ সুদহার ছিল ১১ শতাংশ। আর সর্বনিম্ন সুদহার ছিল ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এক দিনের ধারের ক্ষেত্রে কলমানিতে গড় সুদহার প্রথম ১০ শতাংশে উন্নীত হয় ১৩ নভেম্বর। ওই দিন এই বাজারে এক দিনের জন্য ৩ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল।

ব্যাংকাররা বলছেন, বর্তমানে কিছু ব্যাংক তীব্র তারল্যসংকটে রয়েছে। এসব ব্যাংকের সংকট এতটাই প্রকট যে গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী টাকাও ফেরত দিতে পারছে না। আবার সরকারি ট্রেজারি বিল–বন্ডের সুদহার বেড়ে যাওয়ায় অনেক ব্যাংক বেশি লাভের আশায় কলমানির বদলে বিল–বন্ডে অর্থ বিনিয়োগ করছে।

ফলে কলমানিতে টাকা ধার দেওয়া বা এই বাজারে লেনদেনে অংশ নেওয়া ব্যাংকের সংখ্যা কমে গেছে। একসময় বিদেশি ব্যাংকগুলো কলমানিতে বেশি অর্থ লগ্নি বা ধার দিত। বর্তমানে এই বাজারে বিদেশি ব্যাংকের অংশগ্রহণ একেবারেই কমে গেছে বলে খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান।

একাধিক ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে ব্যাংক খাতে নগদ টাকার ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের সংকট রয়েছে। বাজারে খুব বেশি তারল্য নেই। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকও রেপোর নিলাম কমিয়ে দিয়েছে। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো খুব বেশি টাকা ধার করতে পারছে না।

এ ছাড়া কলমানি বাজারে চড়া সুদে যেসব ব্যাংক টাকা ধার চাইছে অনেক ব্যাংক তাদের টাকা ধার দিতে রাজি হচ্ছে না। সব মিলিয়ে তাই কলমানিতে সুদহার সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, ব্যাংক খাতে এখন নগদ অর্থের ব্যবস্থাপনা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। কিছু ব্যাংকে তীব্র তারল্যসংকট রয়েছে। আবার যাদের হাতে অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে তারা দুর্বল ব্যাংকগুলোকে টাকা ধার দিতে খুব বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে না। বিদেশি ব্যাংকগুলো কলমানি বাজারের বদলে সরকারি বিলে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। আবার বাংলাদেশ ব্যাংকও রেপোর নিলাম সপ্তাহের দুই দিনের বদলে এক দিনে নামিয়ে এনেছে।

“সবটা মিলিয়ে তাই কলমানিতে টাকা ধার দেওয়া ব্যাংকের সংখ্যা কমে গেছে। এ জন্য সুদহারও সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে।”

আগে দেখা গেছে, সাধারণত দুই ঈদের আগে ব্যাংকগুলোর নগদ টাকার চাহিদা বেড়েও যাওয়ায় কলমানি সুদের হার বেড়ে যেত। ঈতের পরে স্বাভাবিক অবস্থায় নেমে আসত। তবে গত কয়েক বছর দুই ঈদের আগেও কলমানি সুদের হার তেমন বাড়েনি।

এমডি পেল রূপালী ব্যাংক, বেতন ৬ লাখ টাকা পরবর্তী

এমডি পেল রূপালী ব্যাংক, বেতন ৬ লাখ টাকা

কমেন্ট