সুখবর, সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার বাড়ছে

সুখবর, সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার বাড়ছে

সঞ্চয়পত্রের ধরন অনুযায়ী মুনাফার হার বেড়ে হতে যাচ্ছে ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত। বর্তমানে চার ধরনের সঞ্চয়পত্রে ১১ দশমিক চার শতাংশ থেকে ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা দেওয়া হয়।

অনেক দুঃসংবাদের মধ্যে দেশের সাধারণ মানুষের জন্য একটি সুসংবাদ আসছে। কয়েক দফা কমার পর এবার সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বাড়াচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। এতে সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে এখন আগের চেয়ে বেশি মুনাফা পাবেন বিনিয়োগকারীরা।

রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ঘাটতির মুখে পড়েছে সরকার। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪২ হাজার কোটি টাকা পিছিয়ে। এই ঘাটতি মেটাতে ভ্যাট, কর বাড়িয়েই চলেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।

একইসঙ্গে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে বেশি ঋণ বা ধার করতে সঞ্চয় প্রকল্পগুলোর বিক্রি বাড়াতে সুদের হার বাড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের আওতায় পরিচালিত সঞ্চয় প্রকল্পগুলোর (স্কিম) মুনাফার হার বাড়ছে। সঞ্চয়পত্রের ধরন অনুযায়ী এ হার বেড়ে হতে যাচ্ছে ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত।

বর্তমানে চার ধরনের সঞ্চয়পত্রে ১১ দশমিক চার শতাংশ থেকে ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা দেওয়া হয়।

বর্ধিত মুনাফার হার নির্ধারণের আদেশ জারি করতে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগকে (আইআরডি) বুধবার অনুরোধ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ।

অর্থ বিভাগ আইআরডিকে বলেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস অর্থ বিভাগের তৈরি এ বিষয়ে প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন। সুপারিশটি এসেছে অর্থ সচিবের নেতৃত্বাধীন নগদ ও ঋণ ব্যবস্থাপনা কমিটি (সিডিএমসি) থেকে। এ কমিটিকে সহায়তা করেছে অর্থ বিভাগের ট্রেজারি ও ঋণ ব্যবস্থাপনা অনু বিভাগ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইআরডি সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বাড়াতে কিছুদিন হলো কাজ চলছিল। ট্রেজারি বন্ডের সুদের হারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার নির্ধারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সে উদ্যোগের অংশ হিসেবেই সঞ্চয়পত্রের মুনাফা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার।”

আইআরডিকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার নির্ধারণ করা হবে ৫ বছর মেয়াদি ও ২ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের গড় সুদের হার অনুযায়ী। তবে নতুন মুনাফার হার নির্ধারণ করতে এ দুই ধরনের ট্রেজারি বন্ডের সর্বশেষ ছয়টি নিলামকে বিবেচনায় রাখতে হবে।

ছয় মাসের বন্ডের সুদের গড় হার বেরও করে দিয়েছে অর্থ বিভাগ। এ হার ১২ দশমিক ২৫ থেকে ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ পর্যন্ত।

চিঠিতে বলা হয়েছে, নতুন হার ১ জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত। ছয় মাস পর নতুন হার নির্ধারণ করা হবে, যা প্রযোজ্য হবে জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের জন্য। নতুন হার প্রযোজ্য হবে নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য। তবে ১ জানুয়ারির আগের বিনিয়োগকারীরা সঞ্চয়পত্রের মুনাফা আগের হারেই পাবেন।

সঞ্চয় অধিদপ্তরের চালু সঞ্চয় কর্মসূচির সংখ্যা ৯। এগুলোর মধ্যে পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, পেনশনার সঞ্চয়পত্র ও পরিবার সঞ্চয়পত্র।

এ ছাড়া রয়েছে ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক সাধারণ হিসাব ও ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক মেয়াদি হিসাব। প্রবাসীদের জন্য বন্ড রয়েছে তিনটি- ওয়েজ আর্নারস ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড এবং ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড। বন্ডের মুনাফার হারের কোনও পরিবর্তন আনার কথা বলা হয়নি চিঠিতে। যদিও এ তিনটিও সঞ্চয় কর্মসূচি।

চিঠির সঙ্গে অর্থ বিভাগ দুটি সংযুক্তিও দিয়েছে, যাতে সঞ্চয়পত্রের ধরন ও মেয়াদ অনুযায়ী মুনাফার হারের কথা উল্লেখ করেছে।

বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কোনও সঞ্চয়পত্রের মুনাফাই ১২ শতাংশের কম হবে না। সবচেয়ে কম মুনাফা পাওয়া যাবে ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকের বিপরীতে। এর হার ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ। আর সবচেয়ে বেশি মুনাফা পাওয়া যাবে পেনশনার সঞ্চয়পত্রে, যে হার হবে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার নিচের বিনিয়োগকারীদের জন্য আরও বেশি হার রাখারও সুপারিশ করেছে অর্থ বিভাগ।

শুধু সুদের হারের পরিবর্তন নয়, বিনিয়োগকারীদের ধাপেও পরিবর্তন আনার কথা বলা হয়েছে চিঠিতে।

বর্তমানে ধাপ রয়েছে তিনটি- ১৫ লাখ টাকা; ১৫ লাখ ১ টাকা থেকে ৩০ লাখ টাকা এবং ৩০ লাখ ১ টাকার বেশি। প্রতিটি ধাপে রয়েছে আলাদা মুনাফার হার।

বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী, পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে বর্তমানে মেয়াদ শেষে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যায়। এই সঞ্চয়পত্রে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগকারীরা মেয়াদ শেষে মুনাফা পাবেন ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ হারে। আর ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ থাকলে মুনাফার হার হবে সাড়ে ৯ শতাংশ।

নতুন নিয়মে দুটি ধাপের কথা বলা হয়েছে। একটি ধাপে থাকবেন ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার নিচের বিনিয়োগকারীরা। আরেকটি ধাপে থাকবেন এর ওপরের বিনিয়োগকারীরা।

পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের উদাহরণ দিয়েই বলা যায়, নতুন হারে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার নিচের বিনিয়োগকারীরা পাবেন ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ। আর ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি বিনিয়োগকারীরা পাবেন সামান্য কম অর্থাৎ ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

অন্যগুলোর ক্ষেত্রেও এভাবে দুটি করে হার হবে। বরাবরের মতো নতুন হারেও সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবেন পেনশনার সঞ্চয়পত্রের বিপরীতে বিনিয়োগকারীরা। ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার নিচের বিনিয়োগকারীরা পাবেন ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এর বেশি বিনিয়োগকারীরা পাবেন ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। তবে মেয়াদপূর্তির আগে ভাঙালে সব সঞ্চয়পত্রের বিপরীতেই মুনাফার হার কমবে।

নতুন হার ১ জানুয়ারি থেকে প্রযোজ্য হওয়ার কথা বলা হলেও এরই মধ্যে নয় দিন পার হয়ে গেছে এবং আইআরডির প্রজ্ঞাপন হতে হতে আরও কয়েক দিন লাগতে পারে। এই সময়ে বিনিয়োগ হয়েছে এবং আরও হবে। সে ক্ষেত্রে কী হবে?

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “একটি উপায় বের করা হবে।”

সঞ্চয়পত্রের সুদের বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “ট্রেজারি বন্ডের সুদের হারের পাশাপাশি ব্যাংকে আমানতের সুদের হারও এখন বেশি। সরকার তাই সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার বৃদ্ধির বিষয়ে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে রাজস্ব আয় ভালো না থাকার কারণেও সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকতে পারে।”

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশের প্রধান কর আদায়কারী সংস্থা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। গত নভেম্বর পর্যন্ত অর্থাৎ জুলাই-নভেম্বর সময়ে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার কোটি টাকা। অর্থবছর শেষে ঘাটতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেটা নিয়ে চিন্তিত সরকার।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিয়েছিল বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকার। এর মধ্যে ঘাটতি ধরা আছে ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।

এই ঘাটতি পূরণে সঞ্চয়পত্র থেকে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা টাকা ঋণ বা ধরা করার লক্ষ্য ধরা আছে।

অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সঞ্চয়পত্র বিক্রির তথ্য প্রকাশ করেছে সঞ্চয় অধিদপ্তর। তাতে দেখা যায়, এই তিন মাসে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা।

অর্থাৎ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে সঞ্চয়পত্র থেকে ৮ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার।

আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল গ্রাহকদের পরিশোধের পর যেটা অবশিষ্ট থাকে, তাকে বলা হয় নিট বিক্রি। ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। বিনিময়ে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের প্রতি মাসে সুদ দিতে হয়।

এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়।

সঞ্চয়পত্র বিক্রি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় বিক্রির চাপ কমাতে ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে মুনাফার ওপর উৎসে করের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। একই সঙ্গে এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) বাধ্যতামূলক করা হয়।

ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি না করার শর্ত আরোপসহ আরও কিছু কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তারপরও বাড়তে থাকে বিক্রি।

২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ২ শতাংশের মতো কমিয়ে দেয় সরকার।

বাধ্যতামূলক ছুটিতে ৬ ব্যাংকের এমডি পরবর্তী

বাধ্যতামূলক ছুটিতে ৬ ব্যাংকের এমডি

কমেন্ট