বঙ্গবন্ধুর ছবিসহ নতুন নোট ঈদে আসছে না
এর আগে বলা হয়েছিল, ঈদ সামনে রেখে আগামী ১৯ মার্চ থেকে নতুন টাকা পাওয়া যাবে। আগের নকশার সেসব নোটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি এবং সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের স্বাক্ষরই থাকবে।
ঈদে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নতুন টাকার নোট ছাড়ার যে রেওয়াজ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছিল, তাতে এবার ছেদ পড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার জানিয়েছে, আসছে রোজার ঈদ উপলক্ষে জনসাধারণের মাঝে নতুন নোট ছাড়া হবে না।
এর আগে বলা হয়েছিল, ঈদ সামনে রেখে আগামী ১৯ মার্চ থেকে নতুন টাকা পাওয়া যাবে। আগের নকশার সেসব নোটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি এবং সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের স্বাক্ষরই থাকবে।
বঙ্গবন্ধুর ছবি বাদ দিয়ে নতুন নকশার টাকার নোট আগামী মাস এপ্রিলের শেষে বা মে মাসের শুরুতে বাজারে আসবে বলেও জানানো হয় তখন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, টাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি থাকায় কয়েকটি পক্ষ থেকে আপত্তি উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে ঈদ সামনে রেখে নতুন নোট বিতরণ কার্যক্রম স্থগিত করার জন্য ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাই এবার ঈদে মিলবে না বঙ্গবন্ধুর ছবিসহ নতুন নোট।
তবে বাজারে বঙ্গবন্ধুর ছবিসহ যেসব নোট রয়েছে, তার ব্যবহার অব্যাহত থাকবে।
সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক আনোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এবার ঈদে নতুন টাকাই আর ছাড়া হবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “রোজার ঈদকে সামনে রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নতুন টাকার নোট দেওয়া ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। তবে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে নতুন নোট দেওয়া হবে না।”
কী কারণে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এর কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জানানো হয়নি। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা প্রতি বছর যে নতুন নোট পায়, আমরাও সেটা এবার পাব না।”
মুখপাত্র পরিষ্কার করে কিছু না বললেও গুঞ্জন রয়েছে, শেখ মুজিবের ছবিওয়ালা নোট নিয়ে আপত্তি থাকায় এবার ঈদে আর আগের নকশার নতুন নোট বাজারে ছাড়া হচ্ছে না।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর-২০২৫ উপলক্ষে জনসাধারণের মাঝে ফ্রেশ নোট বা নতুন নোট বিনিময় কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।”
ব্যাংকগুলোর শাখায় যেসব ‘ফ্রেশ’ নোট গচ্ছিত রয়েছে তা বিনিময় না করে সংশ্লিষ্ট শাখায় সংরক্ষণ করতে বলা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
এ ছাড়া পুনঃপ্রচলনযোগ্য নোট দিয়ে সব নগদ লেনদেন কার্যক্রম চালানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশের মুদ্রা ছাপানোর কাজটি করে দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশন (বাংলাদেশ) লিমিটেড, যা টাকশাল নামে পরিচিত। ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠা পেলেও ১৯৮৮ সালের জুন মাসে এক টাকা ছাপানোর মধ্য দিয়ে এ প্রেসের নোট ছাপানো শুরু হয়।
ওই বছরের নভেম্বর মাসে ১০ টাকার নোটও ছাপানো হয় সেখানে। প্রতিটি নোট ছাপানোর আগে এর নকশা অনুমোদন করে সরকার। সেজন্য দরপত্র ডেকে চিত্র শিল্পীদের দিয়ে নোটের নকশা করানো হয়।
নকশা চূড়ান্ত হলে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে কাগজ, কালি ও প্লেট তৈরি করা হয়। নকশা অনুযায়ী বিদেশ থেকে প্লেট তৈরি করে আনার পর ছাপার কাজটি করে টাকশাল।
সবশেষ নতুন নকশায় ২০০ টাকার নোট চালু হয় ২০২০ সালে। ওই নোটে বঙ্গবন্ধুর ছবিতে নতুন রূপ দেওয়া হয়।
আগে ছাপানো নোটে ব্যবহৃত বঙ্গবন্ধুর ছবি বাদ দিয়ে আরও স্পষ্ট করে দুই ধরনের ছবি ব্যবহার করা হয় ২০২০ সাল থেকে। এরপর ছাপানো সব নোটে ওই দুই ধরনের ছবিই ব্যবহার করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর ছবি ছাড়া সবশেষ নোট ছাপা হয় ২০০৯ সালে। তখন গভর্নরের দায়িত্বে থাকা সালেহ উদ্দিন আহমেদ এখন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা। ওই সময় ছাপা লাল রঙের ৫০০ টাকা এবং এক হাজার টাকার কিছু নোট এখনও দেখা যায়।
টাকা ছাপানোর সঙ্গে যুক্ত একজন কর্মকর্তা এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, বিশ্বের মাত্র ৮-১০টি কারখানা থেকে ১৯০টি দেশ টাকা ছাপানোর কাগজ কিনে থাকে। ফলে চাইলেই হঠাৎ করে টাকার নকশা পরিবর্তন করে নতুন নোট ছাপানো যায় না। এছাড়া কালি, ডাইসসহ টাকা ছাপানোর সব সরঞ্জাম বিদেশ থেকে আনতে হয়।
ফলে নকশা পরিবর্তন করে নতুন নোট আনতে দুই বছর সময় প্রয়োজন। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দ্রুত সময়ে নতুন নোট আনতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এতে টাকার নিরাপত্তার পাশাপাশি মানও বিবেচনায় রাখতে হচ্ছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
কমেন্ট