ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের তথ্য দিতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ
ব্যাংকিং খাতের প্রধান সমস্যা খেলাপি ঋণ প্রায় সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ লাখ কোটি টাকার বেশি।
ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতাদের যাবতীয় তথ্য দিতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
তিন মাস অন্তর অন্তর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোতে (সিআইবি) তথ্য জমা দিতে হবে; সেখানে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের নাম, পরিচয়সহ যাবতীয় তথ্য দেওয়া বাধ্যতামূলক।
বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ–সংক্রান্ত একটি সার্কুলার আদেশ জারি করে সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে ২০২৪ সালের ১২ মার্চ এই ধরনের আরেকটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল। তখন ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, এসব তথ্য দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। এখন ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও অধিকতর সংশোধন করা হয়েছে।
নতুন সার্কুলার অনুসারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের তথ্য দেওয়া (রিপোর্টিং) ক্ষেত্রে তিন ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রথমত, ব্যাংক কর্তৃক ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণ গ্রহীতা শনাক্ত ও চূড়ান্তকরণের পর তা বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবিতে পাঠাতে হবে। ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতাদের সিআইবি ‘উইলফুল ডিফল্টার’ হিসেবে প্রদর্শন করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, ব্যাংক কর্তৃক ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতার ক্রম পুঞ্জীভূত তথ্য ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে বিবরণী আকারে পাঠাতে হবে। এ ছাড়া তিন মাস শেষ হওয়ার পরবর্তী মাসের ১০ তারিখের মধ্যে ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগে দাখিল করতে হবে। পাশাপাশি তাদের যাবতীয় দলিলপত্রও দিতে হবে।
তৃতীয়ত, ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতাদের বিষয়ে ব্যাংকের শনাক্তকরণ ইউনিটের সদস্যদের নাম, মোবাইল নম্বর ও ই-মেইল অ্যাড্রেস—এসব তথ্য দিতে হবে।
তিন মাস পরপর ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণসংক্রান্ত তথ্য কীভাবে দিতে হবে, এর নমুনা ফরম তৈরি করা হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা ব্যক্তি হলে নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, জন্মতারিখ, ব্যাংক শাখার নাম, কবে চূড়ান্তভাবে ইচ্ছাকৃত খেলাপির তালিকায় এসেছে—এসব তথ্য দিতে হবে।
ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে স্বত্বাধিকারীর নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, জন্মতারিখ, ব্যাংক শাখার নাম, কবে চূড়ান্তভাবে ইচ্ছাকৃত খেলাপির তালিকায় এসেছে, এসব তথ্য দিতে হবে।
বাংলাদেশে ব্যাংক খাতে প্রধান সমস্যা যে খেলাপি ঋণ, তা কমার তো লক্ষণ নেই, বরং বেড়েই চলছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্যে দেখা যায়, ব্যাংকিং খাতের প্রধান সমস্যা খেলাপি ঋণ প্রায় সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ লাখ কোটি টাকার বেশি। ছয় মাসে বেড়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা। তিন মাসে বেড়েছে ৬০ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা।
তিনি জানান, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা, যা গত সেপ্টেম্বর শেষে ছিল ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা।
ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের ঋণস্থিতি ছিল ১৭ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলো এই পরিমাণ টাকা ঋণ হিসাবে বিতরণ করেছে। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। এ হিসাবে মোট বিতরণ করা ঋণের ২০ দশমিক ২০ শতাংশ খেলাপি হয়ে গেছে।
২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। এ হিসাবে এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে দুই লাখ কোটি টাকা বেশি।
কমেন্ট