‘স্মার্ট’ অভিযাত্রার বাজেটে মূল্যস্ফীতি কমানোই চ্যালেঞ্জ

‘স্মার্ট’ অভিযাত্রার বাজেটে মূল্যস্ফীতি কমানোই চ্যালেঞ্জ

বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ নানা সংকটের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ভোটারদের দৃষ্টি কাড়তে আরেকটি বড় বাজেট সংসদে উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। দুই বছরের করোনা মহামারির ধকল কাটতে না কাটতেই এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় তছনছ হয়ে যাওয়া বিশ্ব অর্থনীতির বেহালের মধ্যেই ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার এই বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী। বিশাল এই বাজেটে ঘাটতি ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা।

নতুন বাজেটে বাজারের আগুনে চড়তে থাকা মূল্যস্ফীতি থেকে কিছুটা রেহাই দিতে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। ৩ লাখ টাকা থেকে এই সীমা ৫০ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। অর্থাৎ যাদের বার্ষিক আয় সাড়ে ৩ লাখ টাকার কম, তাদের কোনো কর দিতে হবে না। তবে করপোরেট করে হাত দেননি অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল; কর আগের মতোই থাকছে। বিদ্যমান করপোরেট কর হিসেবে সর্বনিম্ন ১৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৪৭ শতাংশ করই অপরিবর্তিত থাকছে।

বয়স্ক ও বিধবা ভাতাসহ সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতায় বিভিন্ন ভাতার পরিমাণ এবং ভাতাভোগীর সংখ্যা বাড়িয়েছেন অর্থমন্ত্রী। বয়স্ক ভাতা বাড়ছে ১০০ টাকা; বিধবা ভাতা ৫০ টাকা বাড়িয়েছেন।

বৈশ্বিক বাস্তবতা আর নানামুখী চাপের মধ্যে দাঁড়িয়েও ‘স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে’ যাত্রার চ্যালেঞ্জ নিয়ে ভোটের আগে নতুন অর্থবছরের জন্য উচ্চাভিলাষী বাজেট জাতীয় সংসদের সামনে উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। তিনি তার এবারের বাজেটেও মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি (জিডিপি) ৭ দশমিক ৫ শতাংশ অর্জিত হবে বলে লক্ষ্য ধরেছেন। আর বর্তমান বিশ্ব পেক্ষাপটে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সূচক মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে আটকে রাখার ঘোষণা দিয়েছেন।

তবে দেশের অর্থনীতি যখন নানামুখী চাপের মধ্যে, সেই সময় নতুন অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য এবং মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নামানোর ঘোষণাকে ‘উচ্চাভিলাষী’ বলছেন অর্থনীতিবিদরা। আর মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে আটকে রাখা কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন তারা। বলেছেন, অতি আশাবাদের বদলে বাস্তবতা ও ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্য ধরাই উচিত ছিল সরকারের।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর সাফ বলে দিয়েছেন, বিরাজমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ‘পূরণ হবে না’।

এইআরএইচ ডটকমকে তিনি বলেন, “মূল্যস্ফীতির চাপ, বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে, আমদানি কমে যাচ্ছে। এই পরিবেশে প্রবৃদ্ধি খুব একটা যে হবে, সেটা আশা করা ঠিক না। এ বছর বলা হচ্ছে ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ হবে। আমার বিবেচনায় সেটাও কমে হয়তো ৫-এর ঘরে চলে আসবে। আগামী বছর যে খুব একটা ব্যতিক্রম কিছু হবে তা মনে হয় না। তাহলে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কোন জাদুবলে আসবে। এটা অসম্ভব; অবাস্তব লক্ষ্য। অতি আশাবাদের বদলে বাস্তবতা ও ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্য ধরাই উচিত ছিল সরকারের।”

তিনি বলেন, ‘গড় মূল্যস্ফীতি এখন প্রায় ৯ শতাংশ। সেই মূল্যস্ফীতি কীভাবে ৬ শতাংশে নেমে আসবে- এটাও আমার কাছে অকল্পনীয় মনে হয়। অর্থনীতির স্থিতিশীলতাকে প্রধান গুরুত্বে রেখে সরকারকে কাজ করা উচিত বলে আমি মনে করি।’

অবশ্য বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেছেন, ‘বিশ্ববাজারে জ্বালানি, খাদ্যপণ্য ও সারের মূল্য কমে আসা, দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় এবং খাদ্য সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকারি উদ্যোগের প্রভাবে আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত থাকবে এবং বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের কাছাকাছি দাঁড়াবে বলে আশা করি।’

প্রস্তাবিত বাজেটের ৭ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকার এই ব্যয় বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের (৬ লাখ ৬০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা) চেয়ে ১৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেশি। টাকার এই অঙ্ক বাংলাদেশের মোট জিডিপির ১৫ দশমিক ২১ শতাংশের সমান। বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে মুস্তফা কামালের দেয়া বাজেটের আকার ছিল ২০২১-২২ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটের ১৪ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি এবং জিডিপির ১৫ দশমিক ২৩ শতাংশের সমান।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এই বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। তার আগে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর ওই প্রস্তাবে সই করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

গত বছর বাজেট দিতে গিয়ে ‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায়’ প্রত্যাবর্তনের সংকল্প করেছিলেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় পরিবর্তিত বিশ্ববাজার, জ্বালানি ও ডলারসংকট এবং মূল্যস্ফীতি তার সেই প্রত্যাবর্তনের গল্পটা মধুর হতে দেয়নি।

পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকে হাঁটতে হয়েছে কৃচ্ছ্রের পথে। তার ওপর বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভে স্বস্তি আনার চেষ্টায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ঋণ নিতে গিয়ে আর্থিক খাতের নানামুখী সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিতে হয়েছে।

সরকারের বর্তমান মেয়াদের শেষ বছরে এবং দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগের বছরে জনতুষ্টির খুব বেশি সুযোগ রাখার পথ মুস্তফা কামালের সামনে নেই। তার পরও স্মার্ট বাংলাদেশে পৌঁছানোর নির্বাচনী স্লোগানটিকেই তিনি বাজেটে ফিরিয়ে এনেছেন। তার এবারের বাজেটের শিরোনাম ‘উন্নয়নের অভিযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা’।

বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, “আমাদের ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ মাথাপিছু আয় হবে কমপক্ষে ১২ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার; দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকবে ৩ শতাংশের কম মানুষ আর চরম দারিদ্র্য নেমে আসবে শূন্যের কোঠায়; মূল্যস্ফীতি সীমিত থাকবে ৪-৫ শতাংশের মধ্যে; বাজেট ঘাটতি থাকবে জিডিপির ৫ শতাংশের নিচে; রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত হবে ২০ শতাংশের ওপরে; বিনিয়োগ হবে জিডিপির ৪০ শতাংশ। শতভাগ ডিজিটাল অর্থনীতি আর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক স্বাক্ষরতা অর্জিত হবে। সবার দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে যাবে। স্বয়ংক্রিয় যোগাযোগব্যবস্থা, টেকসই নগরায়ণসহ নাগরিকদের প্রয়োজনীয় সব সেবা থাকবে হাতের নাগালে। তৈরি হবে পেপারলেস ও ক্যাশলেস সোসাইটি। সবচেয়ে বড় কথা, স্মার্ট বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হবে সাম্য ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা।”

২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য ঠিক করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের বাজেটগুলোতে উন্নয়ন খাত বরাবরই বেশি গুরুত্ব পেয়ে আসছিল। কিন্তু মহামারির ধাক্কায় সেই ধারায় কিছুটা ছেদ পড়ে। পরিবর্তিত বাস্তবতায় এবার বিশ্বের অনেক দেশে মন্দার ঝুঁকি থাকলেও বাজেটের আকার বাড়িয়ে পরিকল্পনা সাজিয়েছেন মুস্তফা কামাল।

৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেটে এবার উন্নয়ন ব্যয় ১৫ শতাংশ বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এরই মধ্যে এডিপি অনুমোদন করা হয়েছে।

নতুন বাজেটে পরিচালন ব্যয় (ঋণ, অগ্রিম ও দেনা পরিশোধ, খাদ্য হিসাব ও কাঠামোগত সমন্বয় বাদে) ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৮১ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত অনুন্নয়ন বাজেটের চেয়ে প্রায় ১৪ দশমিক ৭২ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে ৯৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা যাবে সরকারের ঋণের সুদ পরিশোধে, যা মোট অনুন্নয়ন ব্যয়ের প্রায় ২০ শতাংশ। অনুন্নয়ন ব্যয়ের আরও প্রায় ১৬ দশমিক ২০ শতাংশ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধে ব্যয় হয়ে, যার পরিমাণ অন্তত ৭৭ হাজার কোটি টাকা।

মহামারির ধাক্কা সামলে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল হতে শুরু করলে বেড়ে যায় আমদানি। তাতে সরকারের জমানো ডলারের ওপর চাপ তৈরি হয়। রপ্তানি বাড়লেও আমদানির মতো অতটা না বাড়ায় এবং রেমিট্যান্সের গতি ধীর হয়ে আসায় উদ্বেগ বাড়তে থাকে। এর মধ্যে ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্বজুড়ে খাদ্য আর জ্বালানির দাম বাড়তে শুরু করে। মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকায় ডলার বাঁচাতে সরকার বিলাসপণ্য আমদানিতে লাগাম দেয়ার পাশাপাশি কৃচ্ছ্রের পথে হাঁটতে শুরু করে।

রাজস্ব আহরণে এনবিআর বিদায়ী অর্থবছরের লক্ষ্যের চেয়ে অনেকটা পিছিয়ে থাকলেও অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল আশা করছেন, নতুন অর্থবছরের সম্ভাব্য ব্যয়ের প্রায় ৬৬ শতাংশ তিনি রাজস্ব খাত থেকে পাবেন।

তার প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এই অঙ্ক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত রাজস্ব আয়ের ১৫ দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে কর হিসেবে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা যাবে বলে আশা করছেন কামাল। ফলে এনবিআরের কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে ১৬ শতাংশের বেশি। টাকার ওই অঙ্ক মোট বাজেটের ৫৬ দশমিক ৪৪ শতাংশের মতো।

গতবারের মতো এবারও সবচেয়ে বেশি কর আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে, ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা। এই অঙ্ক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১২ শতাংশের মতো। বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটে ভ্যাট থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা ছিল ১ লাখ ৪১ হাজার ১৯২ কোটি টাকা। সংশোধনে তা বাড়িয়ে ১ লাখ ৪৬ হাজার ২২৭ কোটি টাকা করা হয়।

আয়কর ও মুনাফার ওপর কর থেকে ১ লাখ ৫৩ হাজার ২৬০ কোটি টাকা রাজস্ব পাওয়ার আশা করা হয়েছে এবারের বাজেটে। বিদায়ী সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২১ হাজার ৯৪ কোটি টাকা।

অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ, ব্যয় দক্ষতা বৃদ্ধি ও সাশ্রয়ী অর্থায়নের দেশি-বিদেশি উৎস অনুসন্ধান হবে রাজস্ব খাতের নীতি-কৌশল। রাজস্ব আহরণে সব সম্ভাবনাকে আমরা কাজে লাগাতে চাই। রিটার্ন দাখিল পদ্ধতি সহজীকরণসহ অন্যান্য সংস্কারের মাধ্যমে কর নেট সম্প্রসারণ, কর অব্যাহতি যৌক্তিকীকরণ, স্বয়ংক্রিয় ও স্বচ্ছ পদ্ধতিতে মূল্য সংযোজন কর আদায় সহায়ক ইলেকট্রনিক ফিসকাল ডিভাইস স্থাপন ও সম্প্রসারণ, অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন, কর প্রশাসনের অটোমেশন ইত্যাদি কার্যক্রমের মাধ্যমে কর রাজস্ব আদায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি করা হবে।’

২০২২-২৩ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। সংশোধনে তা ৬ লাখ ৬০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। নতুন অর্থবছরের জন্য অর্থমন্ত্রী যে বাজেট প্রস্তাব সংসদের সামনে তুলে ধরেছেন, তাতে আয় ও ব্যয়ের সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে রেকর্ড ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশের সমান।

সাধারণত ঘাটতির পরিমাণ ৫ শতাংশের মধ্যে রেখে বাজেট প্রণয়নের চেষ্টা হয়। তবে টাকা জোগানোর চাপ থাকায় কয়েক বছর ধরেই তা সম্ভব হচ্ছে না। বরাবরের মতোই বাজেট ঘাটতি পূরণে অর্থমন্ত্রীকে নির্ভর করতে হবে অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক ঋণের ওপর।

তিনি আশা করছেন, বিদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯০ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ঋণ করে ওই ঘাটতি তিনি মেটাবেন। অভ্যন্তরীণ খাতের মধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে রেকর্ড ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে আরও ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছে বাজেটে।

বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ঠিক করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। ছয় মাসের (জুলাই-ডিসেম্বর) প্রাক্কলনের ভিত্তিতে অর্থবছর শেষে তা ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ হবে বলে সরকার ধারণা করছে। তার পরও অর্থমন্ত্রী আশা করছেন, তার নতুন বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারলে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে আটকে রেখেই ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি পাওয়া সম্ভব হবে।

নতুন বাজেটে আমদানি শুল্ক থেকে ৪৬ হাজার ১৫ কোটি টাকা, সম্পূরক শুল্ক থেকে ৬০ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা, রপ্তানি শুল্ক থেকে ৬৬ কোটি টাকা, আবগারি শুল্ক থেকে ৪ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা এবং অন্যান্য কর ও শুল্ক থেকে ১ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করেছেন অর্থমন্ত্রী। এ ছাড়া বৈদেশিক অনুদান থেকে ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা পাওয়া যাবে বলে বাজেট প্রস্তাবে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।

বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা, সংশোধনে তা সামান্য কমিয়ে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা করা হয়, যদিও মার্চ পর্যন্ত সময়ে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৬০ শতাংশ অর্জিত হয়েছে।

সামাজিক সুরক্ষায় বরাদ্দ বাড়ল ১২৬২৪ কোটি টাকা পূর্ববর্তী

সামাজিক সুরক্ষায় বরাদ্দ বাড়ল ১২৬২৪ কোটি টাকা

বয়স্ক ও বিধবা ভাতা বাড়ছে পরবর্তী

বয়স্ক ও বিধবা ভাতা বাড়ছে

কমেন্ট