সংকটের মধ্যে এবারও ৭.৫% জিডিপি প্রবৃদ্ধির আশা
বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি (জিডিপি) ৭ দশমিক ৫ শতাংশ অর্জিত হবে বলে লক্ষ্য ধরেছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ছয় মাসের (জুলাই-ডিসেম্বর) হিসাব কষে বলেছে- এবার ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।
বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও এডিবি বলছে ৫ শতাংশের কিছু বেশি হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এখনো চলছে; কবে শেষ হবে- নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারছেন না। যুদ্ধের প্রভাব প্রতিনিয়ত পড়ছে অর্থনীতিতে। ডলারের দর বেড়েই চলেছে; ৮৬ টাকার ডলার হাতে গুনে ১০৯ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এক বছরে বেড়েছে প্রায় ২৭ শতাংশ। ডলারের এই উল্লম্ফনের নেতিবাচক প্রভাব অর্থনীতির সব খাতেই পড়ছে।
এদিকে অস্থির বৈশ্বিক পরিস্থিতির মধ্যে যোগ হয়েছে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিরতা। এসব সংকটের মধ্যেও আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটেও জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ অর্জন করতে চান অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। আর সেই লক্ষ্য অনুযায়ী এবার জিডিপির মোট আকার নির্ধারণ করা হচ্ছে ৫০ লাখ ৬ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার যে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন তাতেও ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ধরেছেন তিনি।
অর্থনীতি চাপে থাকার পরও কেন এবার বেশি প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা করছেন, সেই ব্যাখ্যা বাজেট বক্তৃতায় দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “ধীরে হলেও বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে, বিশেষ করে, আমাদের বাণিজ্য ও প্রবাস আয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দেশসমূহে পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং তা অব্যাহত থাকবে মর্মে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এপ্রিল, ২০২৩ সময়ে প্রক্ষেপণ করেছে। একই সাথে, আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্য, সার ও জ্বালানির মূল্য স্বাভাবিক হয়ে আসার সুবাদে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি হ্রাস পাবে বলেও আইএমএফ এর প্রক্ষেপণে প্রকাশ পেয়েছে।”
অর্থমন্ত্রী বলেন, “বিশ্ব অর্থনীতির অনুকূল পরিবর্তন আমাদের জন্য আশার সঞ্চার করছে। একইসাথে, কোভিড পরিস্থিতির সার্বিক উন্নয়নে দেশের অভ্যন্তরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে পূর্ণ গতি সঞ্চার হয়েছে। এছাড়াও, অর্থবছরের শেষাংশে কৃষিখাতে ভাল ফলন আসছে। সার্বিকভাবে, উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ ও উৎপাদশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এবং সুসংহত অভ্যন্তরীণ চাহিদার কল্যাণে পূর্বের ধারাবাহিকতায় আগামী অর্থবছরে আমরা উচ্চ প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরে আসব এবং ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারব বলে আশা করছি।”
করোনাভাইরাস মহামারির আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ। ধারাবাহিক অগ্রগতির পথ ধরে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ (ভিত্তি বছর পরিবর্তনের পর যা ৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ) প্রবৃদ্ধি অর্জন করে বাংলাদেশ, যা ছিল দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি।
গত এক দশকে জিডিপি প্রবৃদ্ধির গড় হার ছিল ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। আর চার বছরে এই হার ছিল ৭ শতাংশের ওপরে।
তবে ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও তছনছ হয়ে যায়; পাল্টে যায় সব হিসাব-নিকাশ। তার পরও ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে আগের বারের (২০১৯-২০) মতো ৮ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির বড় লক্ষ্য ধরেছিলেন উচ্চাভিলাষী অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল।
করোনার ধাক্কায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশে নেমে আসে, যা ছিল তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম।
মহামারির কারণে বিশ্বের প্রায় সব দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমেছিল। কোনো কোনো দেশে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হলেও এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছিল বাংলাদেশ।
কমেন্ট