বাজেটের সঙ্গে আইএমএফের শর্তের কোনো সম্পর্ক নেই: অর্থমন্ত্রী

বাজেটের সঙ্গে আইএমএফের শর্তের কোনো সম্পর্ক নেই: অর্থমন্ত্রী

২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের সঙ্গে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত বা পরামর্শের কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

জাতীয় সংসদে বাজেট প্রস্তাব তোলার পরদিন শুক্রবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তেরে তিনি এ কথা বলেন।

আইএমএফের শর্ত মেনে বাজেট হয়েছে কি না- এই প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমি আপনাদের নিশ্চিত করে বলতে পারি তাদের শর্ত বা পরামর্শ মোতাবেক আমরা আমাদের বাজেট করি নাই।”

আগের দিন বৃহস্পতিবার বাজেট বক্তৃতায় আর্থিক খাতসহ বিভিন্ন খাতে নানা ধরনের সংস্কারের ঘোষণা দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। আইএমএফ বাংলাদেশকে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে যেসব শর্ত দিয়েছে, তার মধ্যে আছে এই সংস্কার।

এরই মধ্যে সরকার আইএমএফের ঋণের প্রথম কিস্তি ৪৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার  পেয়েছে। পরের কিস্তি সেপ্টেম্বরের দিকে পাওয়া যাবে বলে আশা করছে সরকার। সেই কিস্তি পেতে বাজেট প্রণয়নের পরিকল্পনায় আন্তর্জাতিক অর্থায়নকারী সংস্থাটির দেওয়া পরামর্শের ছাপ দেখা গিয়েছিল।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, “আর্থিক খাতে সুশাসন ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে।”

তবে বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “তাদের (আইএমএফ) যে পরামর্শ আছে সেটা আমরা পুরোপুরি দেখি না। তাদের সার্বিক পরামর্শ যা আছে, যা তারা বলে, সেখান থেকে যেটুকু গ্রহণ করা উচিত বলে আমরা মনে করি সেটুকু আমরা গ্রহণ করব, বাকিটা আমরা নিজেদের মত করে নেব। সেখানে তাদের কোনো আপত্তি নাই।”

আইএমএফের সঙ্গে কাজ করাকে ভালো হিসেবেই দেখছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, “কেবল আইএমএফ না, সবাই দেখে ব্যালেন্স শিট ঠিক আছে কি না, রেভিনিউ অ্যাকাউন্ট ঠিক আছে কি না, ট্রায়াল ব্যালান্স ঠিক আছে কি না, আয়-ব্যয়ের পার্থক্য ঠিক আছে কি না।

“শুধু আমাদেরটা না, সবারটাই দেখে, আর এই দেখাটা ভালো। আইএমএফের সঙ্গে যারা কাজ করে, আমি মনে করি এটা ভালো দিক এজন্য যে, তারা শুধু অর্থ দিয়ে মানে লোন দিয়ে সাহায্য করে না, পাশাপাশি কিছু প্রকল্পের পরামর্শ দেয়। সেগুলো কীভাবে কম সময়ে বাস্তবায়ন করা যাবে, এগুলোও তারা পরমার্শ দেয়। তাই আমি মনে করি, এসব থেকে শেখার অনেক কিছু থাকে এবং আমরা সমৃদ্ধ হই।”

অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে মুস্তফা কামাল বলেন, “আমরা এখন পৃথিবীতে সবাই সবার সঙ্গে সম্পর্কিত, একই রেখায় যুক্ত। কেউ আলাদাভাবে বসবাস করার কোনো সুযোগ নেই। আপনি আমদানি করলেও কাউকে না কাউকে লাগবে, রপ্তানি করলেও লাগবে। আর এখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ হচ্ছে, অন্য দেশ থেকে বলে দেওয়া হচ্ছে কোন দেশ থেকে পণ্য পাওয়া যাবে, কোথায় থেকে আমরা তা পেতে পারি।”

আমাদের সাধ বা সাধ্য এখন এককভাবে পরিচালন করা সম্ভব না, মাঝে মাঝে সমস্যা দেখা দিলে আমরা তা ফ্লেক্সিবলভাবে সমাধানের চেষ্টা করি।”

প্রস্তাবিত বাজেটের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের জিজ্ঞাসার জবাব দিতে ছয়জন মন্ত্রী এবং সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন অর্থমন্ত্রী।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শুক্রবার বিকাল সোয়া ৩টায় এই সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়।

নিজের ডান পাশে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, অর্থ সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শরিফা খানকে বসিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

বাম পাশে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন, এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম এবং পরিকল্পনা বিভাগের সচিব সত্যজিত কর্মকারকে রেখে সংবাদ সম্মেলন শুরু করেন অর্থমন্ত্রী।

বৈশ্বিক বাস্তবতা আর নানামুখী চাপের মধ্যে দাঁড়িয়েও ‘স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে’যাত্রার চ্যালেঞ্জ নিয়ে বৃহস্পতিবার নতুন অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী।

আকারের দিক থেকে এটিই হবে দেশের বৃহত্তম বাজেট। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এই বাজেট নিয়ে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল সংসদে পঞ্চম বাজেট উপস্থাপন করলেন। গত বছরের ৯ জুন তিনি ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেছিলেন।

মুস্তফা কামাল ২০১৯ সালের ১৩ জুন তার প্রথম বাজেট (২০১৯-২০ অর্থবছর) উপস্থাপন করেছিলেন। ২০২০ সালের ১১ জুন উপস্থাপন করেন দ্বিতীয় বাজেট। ২০২১ সালের ৩ জুন উপস্থাপন করেন তৃতীয় বাজেট। গত বছরের ৯ জুন উপস্থাপন করেন তার চতুর্থ বাজেট।

অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল তার এবারের বাজেটের শিরোনাম দিয়েছেন ‘উন্নয়নের অভিযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা’। এতে স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার এবং স্মার্ট সমাজ করার কথা তুলে ধরবেন তিনি।

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের শিরোনাম ছিল ‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’। তার আগের বাজেটের (২০২১-২২) শিরোনাম ছিল জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ। ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের শিরোনাম ছিল 'অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথ পরিক্রমা'।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তার প্রথম বাজেট দিয়েছিলেন ২০১৯ সালের ১৩ জুন। ২০১৯-২০ অর্থবছরের সেই বাজেটের শিরোনাম ছিল ‘সমৃদ্ধ আগামীর পদযাত্রায় বাংলাদেশ: সময় এখন আমাদের সময় এখন বাংলাদেশের’।

এই পাঁচ বাজেটের প্রথমটি বেশ অসুস্থ অবস্থায় দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। বাজেট বক্তৃতা শুরুর পর বারবার থেমে যাচ্ছিলেন অর্থমন্ত্রী। পরে ওই বাজেটের বাকি অংশ উপস্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পরের তিনটি বাজেট করোনা মহামারি আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সংকটের মধ্যে দিতে হয়েছে অর্থমন্ত্রীকে। এবারও সেই সংকটের মধ্যেই বর্তমান সরকারের মেয়াদের শেষ বাজেট দিতে হলো তাকে। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে জাতীয় নির্বাচন আর আইএমএফের শর্তের চাপ।

সুদ পরিশোধেই চলে যাবে লাখ কোটি টাকা পূর্ববর্তী

সুদ পরিশোধেই চলে যাবে লাখ কোটি টাকা

বাজেট অবাস্তব, দুই হাজার টাকা ন্যূনতম কর ‘অযৌক্তিক’: সিপিডি পরবর্তী

বাজেট অবাস্তব, দুই হাজার টাকা ন্যূনতম কর ‘অযৌক্তিক’: সিপিডি

কমেন্ট