বাজেট সংস্কারমুখী ও আশাবাদী: আতিউর রহমান
আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ৫ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় এবং মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে ধরে রাখার যে লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে সেটা বাস্তবায়ন করা ‘কঠিন’ হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর এবং বেসরকারি গবেষণা সংস্থা উন্নয়ন সমন্বয়ের সভাপতি আতিউর রহমান।
তিনি বলেছেন, “২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটটি উচ্চাভিলাষী নয়; বরং সংস্কারমুখী এবং আশাবাদী। তবে ৫ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা আদায় কঠিন হবে। সেইসঙ্গে ঊর্ধ্বমূখী মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে আটকে রাখার যে লক্ষ্য ধরেছেন অর্থমন্ত্রী তা খুবই চ্যালেঞ্জিং হবে।”
শনিবার প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আতিউর রহমান এ সব কথা বলেন।
রাজধানীতে উন্নয়ন সমন্বয় অফিসের খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ কনফারেন্স কক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন অর্থনীতিবিদ আতিউর রহমান।
তিনি বলেন, “সার্বিক বিবেচনায় প্রস্তাবিত বাজেটটি উচ্চাভিলাষী নয়। বরং সংস্কারমুখী এবং আশাবাদী। বিদ্যমান সামষ্টিক অর্থনৈতিক বাস্তবতায় এই চ্যালেঞ্জ নেয়ার বিকল্প ছিল না। তবে ৫ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা এবং মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে ধরে রাখা খুবই চ্যালেঞ্জিং হবে।”
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিশাল এই বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা।
এই বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। আর মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে আটকে রাখতে চেয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
দেশের বাইরে অবস্থান করায় সংবাদ সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যোগ দেন আতিউর রহমান।
তিনি বলেন, “ঘাটতি অর্থায়ন এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগের পাশাপাশি মুদ্রানীতিতেও পদক্ষেপ থাকতে হবে। তাই বাজেট ও মুদ্রানীতির সুসমন্বয় নিশ্চিত করা একান্ত জরুরি।”
উন্নয়ন সমন্বয়ের এমেরিটাস ফেলো খন্দকার সাখাওয়াত আলীর সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন সংস্থার লিড ইকোনমিস্ট রবার্ট শুভ্র গুদা এবং সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট শাহনাজ হীরা।
আতিউর বলেন, “করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৩ লাখ করায় মুদ্রাস্ফীতির চাপ থেকে কিছুটা স্বস্তি পাবেন অনেক নাগরিক। তবে ধনীদের সম্পদের ওপর করের সীমা ৩ কোটি টাকা থেকে ৪ কোটিতে উন্নীত করা, শিক্ষার্থী ও শ্রমিকদের বিদেশ যাত্রায় বাড়তি করারোপের আওতায় রাখার মতো কিছু কর প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে।”
আর করযোগ্য নন এমন ব্যক্তিদের জন্যও ন্যূনতম ২ হাজার টাকা করের প্রস্তাবটি রাজস্ব আয় এবং কর প্রদানের সংস্কৃতির প্রসারে সহায়ক হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
“তবে এটা যেন সাধারণ মানুষের হয়রানির কারণ না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।”
প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে বরাদ্দ দেয়া হয়নি বলে তৃণমূল পর্যায়ের চাহিদা মেটাতে নতুন নতুন সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি চালুর প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন রবার্ট শুভ্র গুদা। বর্তমানে সামাজিক সুরক্ষার উপকারভোগীদের মধ্যে মাত্র এক-চতুর্থাংশ নিম্নআয় শ্রেনি থেকে আসছেন বলে জানান তিনি।
শাহনাজ হীরা বলেন, “বাস্তবায়নের অদক্ষতার দোহাই দিয়ে স্বাস্থ্যখাতের জন্য বরাদ্দ না বাড়ানোয় জনগণের ওপর স্বাস্থ্য ব্যয়ের চাপ বাড়ছে। বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শূন্য পদে লোকবল নিয়োগে বরাদ্দ বাড়ালে গ্রামাঞ্চলে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রার্থীদের আউট-অফ-পকেট স্বাস্থ্য ব্যয়ের অনুপাত ৬৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫০ শতাংশের কাছাকাছি নিয়ে আসা সম্ভব।”
কমেন্ট