বাজেটে বাজুসের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি

বাজেটে বাজুসের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য বাখছেন বাজুস নেতারা। ছবি-এআরএইচ

প্রস্তাবিত বাজেটে দেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি বলে জানিয়েছে এ খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন-বাজুস।

সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি জানিয়েছে, প্রাক-বাজেট আলোচনায় বাজুসের পক্ষ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ১২টি প্রস্তাব বিবেচনার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করা হয়েছিল। তার মধ্যে ১১টিই বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।               

২৬ জুন পাস হওয়া বাজেটে এই ১১টি প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে ব্যাগেজ রুলের সংশোধন করায় প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশসহ দেশের অর্থ দেশে রাখার এই আন্তরিক প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়েছে সংগঠনটি।

রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিংমলে বাজুস কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের সহসভাপতি ও স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্যারিফ অ্যান্ড ট্যাক্সেশনের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, উপদেষ্টা রুহুল আমিন রাসেল, সহসম্পাদক ও স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্যারিফ অ্যান্ড ট্যাক্সেশনের ভাইস চেয়ারম্যান সমিত ঘোষ অপু এবং স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্যারিফ অ্যান্ড ট্যাক্সেশনের সদস্য সচিব পবন কুমার আগরওয়াল।

সংবাদ সম্মেলনে আনোয়ার হোসেন বলেন, “বিশ্ববাজারে বাংলাদেশকে প্রতিযোগিতায় সক্ষম করতে জুয়েলারি যাতে আরোপিত কর ও ভ্যাট হার কমানো এবং আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করতে হবে। এতে যেমন সরকারের বৈদেশিক আয় আসবে। তেমনি বাড়বে রাজস্ব আয়। একই সঙ্গে বিপুল পরিমানে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের আরেকটি খাত তৈরি হবে।” 

তিনি বলেন, “ব্যাগেজ রুল সংশোধন করায় এদেশে স্বর্ণের চোরাচালান এবং মুদ্রা পাচার অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। কারণ ব্যাগেজ রুলের সুবিধা নিয়ে এর আগে অবাধে স্বর্ণর বার বা পিন্ড বিদেশ থেকে দেশে প্রবেশ করছে। চোরাচালানের মাধ্যমে বিদেশে পাচার হয়। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। অর্থমন্ত্রীর এই যুগান্তরকারী পদক্ষেপ বৈধভাবে স্বর্ণ আমদানীতে উৎসাহিত করবে।”

ব্যাগেজ রুলের আওতায় বিদেশ থেকে আনা গহনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সীমা ১০০ গ্রাম থেকে কমিয়ে ৫০ গ্রাম করার দাবি জানিয়ে আনোয়ার বলেন, “এতে স্থানীয় স্বর্ণ শিল্পীদের স্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি স্থানীয় জুয়েলারি শিল্পের দিকে ক্রেতা সাধারণ আকৃষ্ট হবে। স্থানীয় স্বর্ণ শিল্পীদের বাঁচানোর জন্যে এই পদক্ষেপ সময়ের দাবি। দেশের স্বর্ণ শিল্পীদের হাতে তৈরি গহনা স্থানীয় ও বিশ্ব বাজারে সমানভাবে সমাদৃত হয়ে থাকে। তাই স্থানীয় স্বর্ণ শিল্পীদের টিকিয়ে রাখার জন্যে সরকারের এই পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।”

তিনি বলেন, “প্রাক-বাজেট সংবাদ সম্মেলনে আমরা ১২টি প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলাম, যা ছিল আমাদের জুয়েলার্স মালিকদের আশার প্রতিফলন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, প্রস্তাবিত বাজেটে আমাদের ১২টি প্রস্তাবের ১টি বাদে অন্য কোনো প্রস্তাবই সংযুক্ত হয়নি, যা শুধু আমাদের আশাহতই করেনি, জুয়েলারি শিল্পকে হুমকির মুখে ফেলেছে।”

বাজুসের ১১টি প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার দাবি জানান আনোয়ার।

বাজুসের যে ১১টি প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার দাবি জানানো হয়েছে সেগুলো হলো- স্বর্ণ, স্বর্ণের অলংকার, রূপা বা রূপার অলংকার বিক্রির ক্ষেত্রে আরোপিত ভ্যাট হার ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা। ইএফডি মেশিন যতো দ্রুত সম্ভব নিবন্ধন করে সব জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে বিতরণ করতে হবে।

অপরিশোধিত আকরিক স্বর্ণের ক্ষেত্রে আরোপিত সিডি ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে আমদানি শুল্ক শর্তসাপেক্ষে ১ শতাংশ নির্ধারণ করা। আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণের ক্ষেত্রে সিডি ১০ শতাংশের পরিবর্তে আইআরসি ধারী এবং ভ্যাট কমপ্লায়েন্ট শিল্পের জন্য শুল্ক হার ৫ শতাংশ করা।

হীরা কাটিং এবং প্রক্রিয়াজাত করণের উদ্দেশ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান দ্বারা আমদানি করা রাফ ডায়মন্ডের সিডি ২৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ করা, এসডি ২ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ করা। এছাড়া ভ্যাট, এআইটি, আরডি এবং এটি অপরিবর্তিত রাখা।

বৈধ পথে মসৃন হীরা আমদানি উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান দ্বারা আমদানি করা মসৃন হীরার এসডি ৬০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ করা।

আয়কর আইনে ৪৬-(বিবি) (২) ধারার অধীনে স্বর্ণ পরিশোধনাগার শিল্পে ১০ বছরের জন্য কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া।

স্বর্ণের অলংকার প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে আমদানি করা কাঁচামাল ও মেশিনারিজের ক্ষেত্রে সকল প্রকার শুল্ক কর অব্যাহতি প্রদানসহ ১০ বছরের জন্য কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া।

বৈধভাবে স্বর্ণের বার, স্বর্ণের অলংকার, স্বর্ণের কয়েন রপ্তানি উৎসাহিত করতে কমপক্ষে ২০ শতাংশ ভ্যালু এডিশন করা শর্তে, রপ্তানিকারকদের মোট ভ্যালু এডিশন ৫০ শতাংশ হারে আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া। এইচ এস কোড ভিত্তিক অস্বাভাবিক শুল্ক হার হ্রাস করে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে শুল্ক হার সমন্বয়সহ এসআরও সুবিধা দেয়া।

মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০২২ ধারা-১২৬ক অর্থ আইন,২০১৯ (২০১৯ সালের ১০নং আইন) এর ১০২ ধারাবলে, চোরাচালান প্রতিরোধ করতে গিয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষসহ সকল আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর উদ্ধার করা স্বর্ণের মোট পরিমানের ২৫ শতাংশ সংস্থাগুলোর সদস্যদের পুরষ্কার হিসেবে দেওয়া।

 

ন্যূনতম ২০০০ টাকা কর আরও ৫ সেবায় পরবর্তী

ন্যূনতম ২০০০ টাকা কর আরও ৫ সেবায়

কমেন্ট