নতুন অর্থবছরে মাথাপিছু আয়ের লক্ষ্য ২৯৬১ ডলার

নতুন অর্থবছরে মাথাপিছু আয়ের লক্ষ্য ২৯৬১ ডলার

নতুন অর্থবছরের বাজেটে দেশের মানুষের মাথাপিছু গড় আয় ২ হাজার ৯৬১ মার্কিন ডলারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য ধরেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এই অঙ্ক বর্তমানের চেয়ে ১৯৫ ডলার বেশি।

গত ১ জুন অর্থমন্ত্রী সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের যে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন, তাতে তিনি এই লক্ষ্য ধরেছেন।

দুই বছরের করোনা মহামারির ধকল কাটতে না কাটতেই সোয়া বছর ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কার মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার (মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি) বেশ খানিকটা বেড়েছে, তবে ডলারের হিসাবে কমেছে। কমেছে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাময়িক হিসাবে আগামী ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরে চলতি বা বর্তমান মূল্যে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার দাঁড়িয়েছে ৪৪ লাখ ৩৯ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা, প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক শূন্য তিন শতাংশ। ডলারের হিসাবে জিডিপির আকার ৪৬০ দশমিক ২২ বিলিয়ন থেকে ৪৫৩ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।

আর মানুষের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৭৯৩ ডলার থেকে ২৮ ডলার কমে হয়েছে ২ হাজার ৭৬৫ ডলার।

গত ১৬ মে এই তথ্য প্রকাশ করেছে বিবিএস। তবে এটি চূড়ান্ত নয়, প্রাথমিক বা সাময়িক হিসাব। অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের (২০২২ সালের ১ জুলাই থেকে ৩১ ডিসেম্বর) তথ্য হিসাব করে এই তথ্য প্রকাশ করেছে পরিসংখ্যান ব্যুরো।

চূড়ান্ত হিসাবে জিডিপির আকার, প্রবৃদ্ধির হার ও মাথাপিছু আয়সহ অন্যান্য সূচক কিছুটা কম-বেশি হয়ে থাকে। বরাবরই এমনটা হয়।

১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ অর্জন করতে চান অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। সেই লক্ষ্য অনুযায়ী এবার তিনি জিডিপির মোট আকার ধরেছেন ৫০ লাখ ৬ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা। আর এর মধ্য দিয়ে মানুষের মাথাপিছু আয় গিয়ে দাঁড়াবে ২ হাজার ৯৬১ ডলার।

যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ও ডলারের হিসাবে জিডিপির আকার কমেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মহাপরিচালক মতিয়ার রহমান।

এআরএইচ ডটকমকে তিনি বলেন, “সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে গত বছরের ১ জুলাই থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত যেসব তথ্য পাওয়া গেছে তার ভিত্তিতে জিডিপির সাময়িক হিসাব প্রকাশ করা হয়েছে। অর্থবছর শেষ হলে দুই-এক মাসের মধ্যেই চূড়ান্ত হিসাব প্রকাশ করা হবে।”

“প্রতি ডলার ৮৬ টাকা ৩০ পয়সা ধরে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে জিডিপি ও মাথাপিছু আয়ের হিসাব প্রকাশ করা হয়েছিল। ডিসেম্বরে সেই ডলারের দাম বেড়ে ৯৭ টাকা ৮১ পয়সা হয়েছিল। সেই দর ধরেই জিডিপি ও মাথাপিছু আয়ের হিসাব করা হয়েছে। আর সে কারণেই টাকার অঙ্কে জিডিপির আকার বাড়লেও ডলারের হিসাবে কমেছে। একই কারণে মাথাপিছু আয়ও কিছুটা কমেছে।”

২০২০-২১ অর্থবছর থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরকে ভিত্তিবছর ধরে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির তথ্য প্রকাশ করছে পরিসংখ্যান ব্যুরো। তার আগে ২০০৫-০৬ অর্থবছরকে ভিত্তিবছর ধরে জিডিপির হিসাব প্রকাশ করা হতো।

গত ২০২১-২২ অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাবে টাকার অঙ্কে জিডিপির আকার ছিল ৩৯ লাখ ৭১ হাজার ৭১৬ কোটি টাকা। ডলারের হিসাবে ছিল ৪৬০ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার। আর মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৭৯৩ ডলার।

বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল ২০১৮-১৯ অর্থবছরে, ২০০৫-০৬ ভিত্তি বছরের হিসাবে যা ছিল ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। নতুন হিসাবে তা কিছুটা কমে ৭ দশমিক ৮৮ শতাংশে নেমে এসেছিল। একইভাবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ থেকে কমে ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশে নেমে আসে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ থেকে কমে ৭ দশমিক ৩২ শতাংশ হয়েছিল। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ থেকে কমে ৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ হয়।

তবে নতুন হিসাবে প্রতিবছরই মাথাপিছু আয় বেশ খানিকটা করে বেড়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে পুরোনো হিসাবে মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ২৪ ডলার। নতুন হিসাবে তা বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৩২৬ ডলার। একইভাবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৯০৯ ডলার থেকে বেড়ে ২ হাজার ২০৯ ডলার হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১ হাজার ৭৫১ ডলার থেকে বেড়ে হয় ২ হাজার ৪৩ ডলার।

বিবিএসের তথ্যে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপির আকার ছিল ৩১ লাখ ৭০ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা। প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৭৮ পয়সা হিসাবে ডলারের হিসাবে ছিল ৩৭৩ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার। মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৩২৬ ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে জিডিপির আকার বেড়ে হয় ৩৫ লাখ ৩০ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা। প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৮১ পয়সা হিসাবে ৪১৬ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার। মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৫৯১ ডলার।

বেসরকারি খাতে ২৭.৪৩% বিনিয়োগ আসবে কোন জাদুবলে পরবর্তী

বেসরকারি খাতে ২৭.৪৩% বিনিয়োগ আসবে কোন জাদুবলে

কমেন্ট