ফাইল ছবি

যেমনটা আশঙ্কা করা হয়েছিল, তেমনই চতে চলেছে। সরকারের রাজস্ব আদায়ে বড় ঘাটতি নিয়েই শেষ হচ্ছে অর্থবছর।

৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) ২ লাখ ৮০ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর।

এই অঙ্ক গত ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ শতাংশ বেশি হলেও নির্ধারিত লক্ষ্য পূরণ করতে হলে শেষ মাস জুনে ৮৯ হাজার ২২৪ কোটি টাকা আদায় করতে হবে। যেটা কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর।

বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব প্রাপ্তির মোট লক্ষ্যমাত্রা ধরা আছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরকে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি আদায়ের লক্ষ্য দেয়া হয়। সংশোধিত বাজেটেও একই লক্ষ্য রাখা হয়।

এনবিআর বৃহস্পতিবার রাজস্ব আদায়ের ১১ মাসের অর্থাৎ জুলাই-মে সময়ের প্রাথমিক তথ্য প্রকাশ করেছে। কোন খাত থেকে কী পরিমাণ কর আদায় হয়েছে, তা আগামী সপ্তাহের প্রথম দিকে প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন বোর্ডের কর্মকর্তারা।

৩০ জুন শেষ হবে ২০২২-২৩ অর্থবছর। সে হিসাবে রাজস্ব আদায়ের পুরো অর্থবছরের (জুলাই-জুন) তথ্য পেতে শুধু চলতি জুন মাসের তথ্য বাকি।

১ জুলাই থেকে শুরু হবে ২০২৩-২৪ অর্থবছর।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে শেষ মাস জুনে ৮৯ হাজার ২২৪ কোটি টাকা আদায় করতে হবে এনবিআরকে। ১১ মাসের কর আদায়ের হিসাব অনুযায়ী, প্রতি মাসে গড়ে ২৫ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা আদায় হয়েছে।

প্রতিবারই অর্থবছরের শেষ মাসে অন্য মাসগুলোর চেয়ে বেশি রাজস্ব হয়। সে হিসাবে চলতি জুন মাসে ৩০ হাজার কোটি টাকা বা খুব বেশি হলে ৩৫ হাজার কোটি টাকা আদায় হতে পারে। তারপরও মোটা অঙ্কের ঘাটতি থাকবে।

অর্থনীতির গবেষক বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর এআরএইচ ডটকমকে বলেন, অর্থবছরের ১১ মাসে রাজস্ব আদায়ের গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণ করে পিআরআই-এর প্রাক্কলন হচ্ছে, অর্থবছর শেষে ৩ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার মতো রাজস্ব আদায় করতে পারবে এনবিআর।

“সে হিসাবে লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে থাকবে ৫০ হাজার কোটি টাকার মত। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) লক্ষ্যমাত্রা থেকেও পিছিয়ে থাকবে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। আইএমএফ ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য দিয়েছিল।’

বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি (৪.৭ বিলিয়ন) ডলার ঋণ অনুমোদনের বিপরীতে আইএমএফের দেওয়া অন্যতম শর্ত হচ্ছে, আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছর কর-জিডিপি অনুপাত শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বাড়াতে হবে। এ জন্য আগামী অর্থবছর এনবিআরকে অন্তত ৪ লাখ কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ করতে হবে।

সরকার নতুন বাজেটে এনবিআরকে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য দিয়েছে।

রাজস্ব খাতে বড় ধরনের সংস্কার ছাড়া এক বছরের ব্যবধানে রাজস্ব আদায়ে বড় এই উল্লম্ফন সম্ভব নয় বলে মনে করেন আহসান মনসুর।