বিদায়ী অর্থবছরে পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে: এডিবি
ম্যানিলাভিত্তিক এই উন্নয়ন সংস্থাটি বলেছে, বিদায়ী অর্থবছরে বাংলাদেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি আগের পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি অর্জিত হবে।
৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি, ৬ শতাংশ অর্জিত হবে বলে জানিয়েছে উন্নয়ন সহযোগী এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবি।
ম্যানিলাভিত্তিক এই উন্নয়ন সংস্থাটি বলেছে, বিদায়ী অর্থবছরে বাংলাদেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি আগের পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি অর্জিত হবে।
বুধবার এডিবির এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও) জুলাই সম্পূরক প্রতিবেদন এই পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। সকালে ফিলিপিন্সের রাজধানী ম্যানিলায় অবস্থিত সংস্থাটির সদর দপ্তর থেকে এই প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।
গত এপ্রিলে প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুকে (এডিও) পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল, ২০০২২-২০২৩ অর্থবছরে শেষে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে আসতে পারে, যা সরকারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেকটাই কম।
গত অর্থবছরে সরকার ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরেছিল। বাং লাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সাময়িক যে হিসাব প্রকাশ করেছে, তাতে বলা হয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬ দশমিক শূন্য তিন শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।
এতে দেখা যাচ্ছে, গত অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে সরকার যে হিসাব দিচ্ছে, তার সঙ্গে এডিবির হিসাব মিলে যায়।
এশিয়ার বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার সর্বশেষ পরিস্থিতি বিশ্নেষণ করে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে এডিবি। এতে আমদানি, রপ্তানি, বিনিয়োগসহ বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে বেশ কিছু উন্নতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এডিবি প্রতি বছর এপ্রিলে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক প্রকাশ করা হয়ে থাকে। পরে বিশ্ব অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করে তিনটি আপডেট রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। একটি করা হয় জুলাইয়ে। পরেরটা প্রকাশ করা হয় সেপ্টেম্বরে। আর সর্বশেষটা প্রকাশ করা হয় ডিসেম্বরে।
জুলাইয়ের প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে বুধবার। এটিসহ সেপ্টেম্বর ও ডিসেম্বরের প্রতিবেদনকে সম্পূরক প্রতিবেদন বলা হয়ে থাকে।
জুলাইয়ের এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুকে (এডিও) বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়েছে, রপ্তানি খাতে প্রত্যাশার চেয়েও ভালো করেছে বাংলাদেশ। আমদানি যতোটা কমবে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল, ততোটা কমেনি। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি আগের চেয়ে স্বস্তিদায়ক অবস্থায় আছে।
“সে কারণেই আগের পূর্বাভাসের চেয়ে বেড়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে বাংলাদেশে। আর ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ।”
এডিবি বলেছে, বন্যা-ঘুর্ণিঝড়ের কারণে কৃষি খাতে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তবে সরকারি নীতি সহায়তার শতভাগ সুযোগ নিয়েছে এই শিল্প। তাই রপ্তানি বেড়েছে।
“ভর্তুকি, প্রণোদনা এবং সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্ঠনীর আওতায় অন্যান্য কর্মসূূচি অব্যাহত আছে। সরকারি বিনিয়োগ প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ছিল।”
তবে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ে স্পষ্ট পরিসংখ্যান না বললেও এটি বাড়ার আভাস দিয়েছে এডিবি। বলছে, সরকারি ব্যয় ও বিনিয়োগ দুটোই বেড়েছে। পণ্য আমদানি নিয়ন্ত্রণে আছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল ও খাদ্যের দাম কমায় এশিয়া মহাদেশে মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়াবে ৩ দশমিক ৬ শতাংশে। এভাবে চললে দ্রুতই কোভিড মহামারির আগের অবস্থায় পৌঁছানো সম্ভব। এই অঞ্চলে প্রবৃদ্ধি হবে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ধরেছে সরকার। যদিও বর্তমান বিশ্ব পেক্ষাপটে এই লক্ষ্য অর্জন কোনো ক্রমেই সম্ভব নয় বলে বলছেন অর্থনীতিবিদরা।
২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে ৭ দশমিক ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল।
কমেন্ট