সিগারেটে ভর করে ভ্যাট আদায়ে ১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি

সিগারেটে ভর করে ভ্যাট আদায়ে ১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি

ভ্যাট কর্মকর্তারা বলছেন, ভ্যাট আহরণে এবার অভাবনীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। অর্থনীতিতে নানামুখী চ্যালেন্জ সত্ত্বেও সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের জুনে গত বছরের জুনের চেয়ে প্রায় ১৮ শতাংশ বেশি ভ্যাট আদায় হয়েছে। প্রতীকী ছবি

চূড়ান্ত হিসাবে বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১ লাখ ২৫ হাজার ৪২৪ কোটি টাকার ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) আদায় করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর। এই অঙ্ক আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৭ শতাংশ বেশি। 

সবচেয়ে বেশি ভ্যাট আদায় হয়েছে সিগারেট থেকে। এ খাত থেকে ভ্যাট এসেছে ৩২ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় তিন হাজার কোটি টাকা বেশি। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ শতাংশ। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, গত অর্থবছরে মোট ভ্যাটের ২৬ দশমিক ১৬ শতাংশই এসেছে ভ্যাট থেকে।

মোবাইল ফোন অপারেটরদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় হয়েছে ৯ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা, প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১১ শতাংশ। 

ভ্যাট কর্মকর্তারা বলছেন, ভ্যাট আহরণে এবার অভাবনীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। অর্থনীতিতে নানামুখী চ্যালেন্জ সত্ত্বেও সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের জুনে গত বছরের জুনের চেয়ে প্রায় ১৮ শতাংশ বেশি ভ্যাট আদায় হয়েছে।

২০২২-২০২৩ অর্থবছরের ভ্যাটের চূড়ান্ত হিসাবে এনবিআরের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭ শতাংশ।২০২১-২০২২ অর্থবছরে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ। 

বৃহস্পতিবার ভ্যাট আদায়ের চূড়ন্ত এই হিসাব প্রখাশ করেছে এনবিআর। তাতে দেখা যায়, পূর্ববর্তী ২০২১-২০২২ অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৭ হাজার ৪ কোটি টাকা ভ্যাট বেশি আদায় হয়েছে। মোট ভ্যাট আহরণ হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ৪২৪ কোটি টাকার ভ্যাট আদায় হয়েছে। আগের অর্থবছরে আদায়ের অঙ্ক ছিল ১ লাখ ৮ হাজার ৪২০ কোটি টাকা। 

বিদায়ী অর্থবছরের শেষ মাস জুনে ভ্যাট আদায়ে এনবিআরের অর্জন লক্ষ্যণীয়। জুন মাসে ভ্যাট আদায় হয়েছে ১৫ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা। গত বছরের জুনে এই আদায় ছিল ১৫ হাজার ৫৯ কোটি টাকা। এ হিসাবেজুন মাসে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭ দশমিক ৭০ শতাংশ।   

এনবিআরের ভ্যাট উইং এর মাঠ পর্যায়ে ১২টি ভ্যাট কমিশনারেট রয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম, খুলনা ও ঢাকা দক্ষিণ সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। গত অর্থবছরের তাদের অর্জন যথাক্রমে ৩৮.৭১%, ২৪.৭১% এবং ১৯.৮৯%। 

সর্বোচ্চ ভ্যাট আহরণ করেছে এলটিইউ ভ্যাট কমিশনারেট।এই কমিশনারেটের মোট আহরণ হয়েছে ৫৮ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা। যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ৬,১৩৩ কোটি টাকা বেশি। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১.৭০ শতাংশ;  যা পূর্ববর্তী বছরে ছিল ৬.৪৬ শতাংশ। 

ভ্যাট কর্মকর্তারা জানান, গেল অর্থবছরে অনেকটা বিরূপ পরিস্থিতি ছিল। সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতিমালার কারণে বেশ কিছু প্রকল্প থেকে ভ্যাট পাওয়া যায়নি। অনেক প্রতিষ্ঠান নিয়মিত এলসি খুলে পণ্যের কাঁচামাল আমদানি করে স্বাভাবিক উৎপাদন করতে পারেনি। এছাড়া অনেক ক্ষেত্রে ইউটিলিটি মূল্য বৃদ্ধি এবং সরবরাহ পরিস্থিতিতে পণ্যের স্বাভাবিক উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। 

এছাড়া ভোজ্য তেলসহ কতিপয় পণ্যে ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়। ফলে অব্যাহতিপ্রাপ্ত পণ্য থেকেও ভ্যাট পাওয়া যায়নি বলে জানান কর্মকর্তারা।

এনবিআরের সদস্য (মূসক বাস্তবায়ন ও আইটি) ড. মইনুল খান এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “নানা চ্যালেন্জ সত্ত্বেও এনবিআরের ভ্যাটের ১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি একটি বড় অর্জন। আর এই অর্জন সম্ভব হয়েছে তিনটে মূল কারণে। প্রথমত, এনবিআর থেকে মাঠ পর্যায়ে ভ্যাট আহরণে কঠোর মনিটরিং এবং মাঠপর্যায়ের  কর্মকর্তাদের নিরলস প্রচেষ্টা। দ্বিতীয়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উপকরণ- উৎপাদ সহগ হালনাগাদকরণ জোরদার এবং তৃতীয়ত, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট ফাঁকি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ।” 

এনবিআরের তথ্যে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি ভ্যাট আদায় হয়েছে সিগারেট থেকে। এই আইটেম থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আদায় হয়েছে ৩২ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা; যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা বেশি। 

প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। মোবাইল ফোন অপারেটরদের থেকে ভ্যাট আদায় হয়েছে ৯ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা। এই খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১১ শতাংশ।

কয়েকটি আইটেমে বেশ ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এর মধ্যে এমএস রড ৫৮.৪৬ শতাংশ,, কোমল পানীয় ৩১.১৯ শতাংশ, সিমেন্ট ৩৩.৭২ শতাংশ, বাণিজ্যিক স্থান ভাড়া ২০.১১ শতাংশ। পেট্রোবাংলার গ্যাস ও বিপিসির পেট্রোলিয়াম পণ্যেও প্রবৃদ্ধি হয়েছে যথাক্রমে ২১.৬৮% ও ২৩.৪৩%।  

প্রচেষ্টা নির্ভর খাতে ভ্যাট উইং ভাল করেছে। এসব খাতে ভ্যাট আহরণ এনবিআর থেকে সরাসরি তদারকি করা হয়। মিষ্ট-তেে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৮%; আবাসিক হোটেলে হয়েছে ৩৯%। রেস্টুরেন্টে ভ্যাট হার ১৫% থেকে ৫% এ কমিয়ে আনা হয়। তা সত্ত্বেও এই খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬.৭৮%। ইটভাটার ভ্যাট আদায়ে মাঠ কর্মকর্তারা তৎপর ছিলেন। ফলে অধিকাংশ ভ্যাট অফিস শতভাগ ভ্যাট আদায় করেছে। 

ভ্যাট অনুবিভাগের জন্য ২০২২-২৩ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল ১ লাখ ৩৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এই লক্ষ্যমাত্রার ৯২ শতাংশ অর্জন করেছে ভ্যাট অনুবিভাগ।

বিদায়ী অর্থবছরে পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে: এডিবি পরবর্তী

বিদায়ী অর্থবছরে পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে: এডিবি

কমেন্ট

এই সংক্রান্ত আরও খবর