রাজস্ব আদায়ে বড় ঘাটতি

রাজস্ব আদায়ে বড় ঘাটতি

চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না এনবিআর। এখন পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ের চিত্র ইঙ্গিত দিচ্ছে, বছর শেষে বড় ঘাটতির মুখে পড়তে যাচ্ছে এনবিআর।

রাজস্ব আদায়ে বড় ঘাটতির মুখে পড়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) শুল্ক–করসহ সব মিলিয়ে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৬২৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা আদায় করেছে।

এই অঙ্ক গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ বেশি হলেও নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৩ হাজার ২২৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা কম।

এনবিআরের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে রাজস্ব বোর্ডের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৮৮ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা। আর পুরো অর্থবছরে মোট ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সংস্থাটির।

গত অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৪৩১ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করেছিল এনবিআর।

এই ছয় মাসে স্থানীয় পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট), আমদানি-রপ্তানি এবং আয়কর ও ভ্রমণকর কোনো খাতে লক্ষ্য অর্জিত হয়নি।

অর্থবছর শেষে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত নাও হতে পারে—এমন সংশ্রয় খোদ এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম ইতোমধ্যেই প্রকাশ করেছেন।

গত বছরের ৩১ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, “বর্তমানে অর্থনীতির গতি কম। এর সঙ্গে নির্বাচনের বছরে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হলে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।”

চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না এনবিআর। এখন পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ের চিত্র ইঙ্গিত দিচ্ছে, বছর শেষে বড় ঘাটতির মুখে পড়তে যাচ্ছে এনবিআর।

অর্থনীতিবিদেরাও বলছেন, এই গতিতে রাজস্ব আদায় হলে চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জিত হবে না। এবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুসারে, অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের চাপ আছে। এ ছাড়া হরতাল-অবরোধসহ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় রাজস্ব আদায়ে বড় ঘাটতির মুখে পড়তে পারে এনবিআর।

গত অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে প্রায় ৪৪ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি হয়েছিল। এবার ঘাটতি আরও বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আদায়ের জন্য এনবিআরকে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার বিশাল লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে। সেই হিসাবে পুরো বছরের লক্ষ্যমাত্রার ৩৮ দশমিক ৫১ শতাংশ এখন পর্যন্ত অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। তবে আইএমএফ বলেছে, বছর শেষে অন্তত চার লাখ কোটি টাকার শুল্ক-কর আদায় করলেই চলবে।

আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ পাওয়ার অন্যতম শর্ত ছিল, প্রতিবছর রাজস্ব আদায়ের স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধির চেয়ে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দশমিক ৫ শতাংশ বেশি রাজস্ব আদায় করতে হবে।

এ বিষয়ে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “রাজস্ব খাতে বড় সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে। কেননা, অভ্যন্তরীণ খাত থেকে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। কর-জিডিপির অনুপাত সবচেয়ে কম—এমন দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। এই রাজস্ব প্রশাসন দিয়ে একটি বিশাল লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। এবার বড় ঘাটতিতে পড়বে এনবিআর।”

আর আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী রাজস্ব আদায় না হলে সংস্থাটির ঋণের বাকি কিস্তিগুলো পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন আহসান মনসুর।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আমদানি-রপ্তানি, ভ্যাট ও আয়কর—এই তিন খাতের মধ্যে কোনোটিতেই ছয় মাসের লক্ষ্য পূরণ হয়নি। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি ছিল আয়কর খাতে।

জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে আমদানি ও রপ্তানি পর্যায়ে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ ৮ হাজার ৫৬৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাটে ঘাটতি ৬ হাজার ৭০ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। আর আয়কর খাতে ঘাটতির পরিমাণ ৮ হাজার ৫৯২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।

এই ছয় মাসে আমদানি-রপ্তানি খাতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫৭ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা; আদায় হয়েছে ৪৯ হাজার ৬৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।

ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭০ হাজার ৮০৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকা; আদায় হয়েছে ৬৪ হাজার ৭৩৭ কোটি ২০ লাখ টাকা।

এ ছাড়া আয়কর ও ভ্রমণকর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬০ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা; বিপরীতে আদায় হয়েছে ৫১ হাজার ৮২৪ কোটি ২ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, দুই বছর ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মত বাংলাদেশের অর্থনীতিও বেশ চাপের মধ্যে পড়েছে। এই চাম সামাল দিতে ব্যয় সংকোচনের পথ বেছে নিয়েছে সরকার। তার অংশ হিসেবে গত অর্থবছর থেকেই আমদানিকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এলসি খোলার ক্ষেত্রেও কড়াকড়ি রয়েছে। আমদানি ঋণাত্মক হয়ে যাওয়ায় শুল্ক আদায় কমে গেছে।

একইসঙ্গে অর্থনীতির ধীরগতির কারণে ভ্যাট ও আয়কর থেকেও প্রত্যাশা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় হচ্ছে না বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

চলতি অর্থবছরে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার মোট রাজস্বের মধ্যে মূসক বা ভ্যাট থেকে ১ লাখ ৫৯ হাজার ১০০ কোটি টাকা, আয়কর থেকে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ও আমদানি-রপ্তানি শুল্ক থেকে ১ লাখ ১৬ হাজার ১০০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য ধরেছে এনবিআর।

সিগারেটে ভর করে ভ্যাট আদায়ে ১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পরবর্তী

সিগারেটে ভর করে ভ্যাট আদায়ে ১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি

কমেন্ট