সংকটে আসছে ‘সতর্ক’ বাজেট

সংকটে আসছে ‘সতর্ক’ বাজেট

আগামী ৬ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করবেন। এটি হবে মাহমুদ আলীর প্রথম বাজেট। আর দেশের ৫৩তম এবং আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২৫তম বাজেট।

সংকটের মধ্যেই আরেকটি বাজেট দিতে যাচ্ছে শেখ হাসিনার সরকার। কোভিড মহামারির ধকল কাটতে না কাটতেই সোয়া দুই বছরে ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় বেহাল বিশ্ব অর্থনীতির মধ্যেই এই বাজেট আসছে।

সরকারের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, নানা চাপের মধ্যে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারই হবে এবারের বাজেটের প্রধান লক্ষ্য।

আগামী ৬ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করবেন। ৩০ জুন সেই বাজেট পাস হবে।

এটি হবে মাহমুদ আলীর প্রথম বাজেট। আর দেশের ৫৩তম এবং আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২৫তম বাজেট।

বৈশ্বিক সংকট সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সরকারকে। একদিকে স্বস্তি দিতে গিয়ে অন্য দিকে টান পড়ছে। কৃচ্ছ্রসাধন করেই চলেছে, আবার প্রতি মুহূর্তে খেয়াল রাখতে হচ্ছে আইএমএফের শর্তের বিষয়েও, যেন কোনও অবস্থাতেই ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের বাকি কিস্তিগুলো আটকে না যায়।

অন্যদিকে বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে অর্থনীতির সবচেয়ে স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ সূচক মূল্যস্ফীতির পারদ চড়ছে। তা প্রায় এক বছর ধরে সাড়ে ৯ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।

অর্থনীতিতে টানাপড়েন, আইএমএফের নানা শর্ত পূরণ আর অর্থনীতির স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখে প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকার সতর্ক বা সাবধানী বাজেট দিতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী মাহমুদ আলী, এমনই জানা গেল অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে।

আগের বছরগুলোর তুলনায় এবারের বাজেট খুব একটা বাড়ছে না। অতীতে দেখা গেছে, নতুন বাজেট আগের বছরের চেয়ে ১২ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। গত বছরের ১ জুন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেছিলেন, যা ছিল আগেরটির তুলনায় ১২ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেশি। বিশাল সেই বাজেটে ঘাটতি ছিল ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা।

চলতি বাজেটের তুলনায় মাত্র ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ বাড়িয়ে প্রায় ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের রূপরেখা তৈরি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

সরকার আগামী বাজেটে খাদ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, ঘাটতি রোধ, রাজস্ব আদায় বাড়ানো এবং গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিনিয়োগ ও কৃষকদের জন্য সহায়তা কর্মসূচির মাধ্যমে সকলের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্য ঠিক করতে চাইছে।

জিডিপির অনুপাতে এক দশকে সবচেয়ে ছোট বাজেট

বৈশ্বিক এবং স্থানীয় সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে ব্যয় সাশ্রয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এক বৈঠকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকার বাজেটের রূপরেখা চূড়ান্ত করেছে, যা জিডিপির ১৪ দশমিক ২০ শতাংশ। জিডিপির অনুপাতে গত এক দশকে সবচেয়ে ছোট বাজেট হবে এটি।

এবারের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে। এছাড়া বাজেটে মূল্যস্ফীতির হার সাড়ে ৬ শতাংশে আটকে রাখার প্রাক্কলন করা হচ্ছে।

‘বাজেট মনিটরিং অ্যান্ড রিসোর্সেস কমিটি অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅর্ডিনেশন কাউন্সিল অন ফিসক্যাল, মানিটরি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রেট পলিসি’র বৈঠকে শীর্ষ নীতিনির্ধারকেরা বাজেটের খসড়া এ রূপরেখার অনুমোদন করেছেন।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মোট আয় প্রাক্কলন করা হচ্ছে ৫ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি। এ আয়ের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

প্রায় ২ লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বাজেট ঘাটতি মেটানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ১ লাখ কোটি টাকার বিদেশি ঋণ এবং বাকি ১ লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকা দেশের ব্যাংকিং খাত ও অন্যান্য উৎস থেকে ঋণ দেওয়া হবে।

নতুন বাজেটে সরকারের পরিচালন ব্যয় ধরা হচ্ছে ৫ লাখ ৩১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৮১ কোটি টাকা।

পরিচালন বাজেটে ব্যয় বেশ কিছুটা বাড়লেও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ বাড়ছে খুব সামান্য, মাত্র ২ হাজার কোটি টাকা। নতুন বাজেটে এডিপিতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি বাজেটে এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা।

অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপনের আগে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে অনুমোদন করিয়ে নিতে হয়। প্রথা অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এনইসি বৈঠকে নতুন এডিপি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার

বাজেটে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে তিনি মূল্যস্ফীতির চাপে থাকা নিম্ন আয়ের মানুষকে স্বস্তি দিতে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে ভাতাভোগীর সংখ্যা বাড়াতে বলেছেন।

গত সোমবার গণভবনে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতি নিয়ে এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এসব নির্দেশনা দেন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে দেশে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ। এ সময় খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০ দশমিক ২২ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থসচিব এবং অন্যান্য নীতিনির্ধারকরা স্বীকার করেন যে, জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৭ শতাংশে নামিয়ে আনার চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না।

বাজার অভিযান, বিশেষ ব্যবস্থায় ভারত থেকে পণ্য আমদানিসহ মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের একাধিক বৈঠকের পরও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অধরা থেকে গেছে।

অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “বিশ্বজুড়েই উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। তুরস্কে মূল্যস্ফীতির হার ৬০ শতাংশের বেশি। আমাদের এখনও ১০ শতাংশের কম আছে। আগামী অর্থবছরে আমরা যেকোনো মূল্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বাজেট প্রণয়ন করছি।”

তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। একইসঙ্গে ব্যাংকঋণের সুদহারও বাড়ছে। ডলারের তুলনায় টাকার মূল্য স্থিতিশীল হয়েছে। ফলে মূল্যস্ফীতির হার কমবে।”

নতুন অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ বা রাজস্ব আদায় বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “ব্যাংক খাতসহ আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিভিন্ন কৌশল বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, যার সুফল আমরা পেতে শুরু করেছি।”

“সব মিলিয়ে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারই হবে আমাদের এবারের বাজেটের প্রধান লক্ষ্য,” বলেন ওয়াসিকা আয়শা খান।

রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা

ব্যবসায়ীরা যখন গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট, ব্যাংকের সুদহার বৃদ্ধি, ডলারের বাড়তি দামের ফলে ব্যয় বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে অনেক শিল্প বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, তখন আগামী অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়েছে।

চার লাখ ৭৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকার প্রাক্কলিত লক্ষ্যমাত্রা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১৬ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে চার লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা।

অর্থ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ২ লাখ ৫৯ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা। এই নয় মাসে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫ দশমিক ২৭ শতাংশ বেশি রাজস্ব আদায় হলেও নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম আদায় হয়েছে ২৫ হাজার কোটি টাকা।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) রাজস্ব আয়ের গতিধারা বিশ্লেষণ করে বলেছে, চলতি অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ দাঁড়াবে সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকায়।

কোঅর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠকে এনবিআর রাজস্ব আদায় বাড়াতে বেশকিছু পরিকল্পনা তুলে ধরে। এর মধ্যে রয়েছে চলতি বছরের ৫০ লাখ টাকার বদলে আগামী অর্থবছর থেকে ১০ লাখ টাকা বা তার অধিক পরিমাণ ভ্যাটের জন্য ই-পেমেন্ট বা স্বয়ংক্রিয় চালান বাধ্যতামূলক করা।

জেলা পর্যায়ে ভ্যাট আদায় বাড়াতে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ৬০ হাজার ইলেকট্রনিক ফিসকাল ডিভাইস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম স্থাপনের পরিকল্পনা চলছে।

এনবিআর বলেছে, আয়কর আইন-২০২৩ বাস্তবায়ন করা হবে। নতুন করদাতা শনাক্তকরণে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি), নির্বাচন কমিশন এবং সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। অর্থাৎ, গাড়ির মালিক, অধিক বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী ব্যক্তি, নির্বাচনী প্রার্থীদের সম্পদ তালিকা ও সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্সপ্রাপ্তদের কাছ থেকে আয়কর আদায়ের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সরকারের পর্যাপ্ত রাজস্ব আহরণ না হওয়ায় গত কয়েক বছর ধরে গ্যাস-বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন খাতের ভর্তুকি পরিশোধ করতে পারছে না সরকার। এ বছর সুদবাহী বন্ড ইস্যু করে স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর (আইপিপি) ছয় হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে এখনও বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর সরকারের কাছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা পাওনা রয়েছে।

এছাড়া সার আমদানির ভর্তুকির অর্থও বন্ড ছেড়ে পরিশোধ করেছে সরকার। সরকারের নিয়মিত ব্যয় মেটাতে গিয়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়েও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ছাপিয়ে ঋণ নিয়েছে সরকার। ফলে সরকারের ব্যাংকঋণের পরিমাণ বেড়ে গেছে।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে ঋণের সুদ পরিশোধে বরাদ্দ ছিল ৯৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা। তবে উচ্চ সুদে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার কারণে সংশোধিত বাজেটে তা এক লাখ পাঁচ হাজার ৩০০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে সুদব্যয়ের জন্য অতিরিক্ত সাত হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।

ঘাটতি

চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি প্রাথমিকভাবে জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ ধরা হয়েছিল। তবে সংশোধিত বাজেট সাত লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকায় নির্ধারণে ঘাটতি কমে জিডিপির ৪ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসে। অর্থ মন্ত্রণালয় আগামী অর্থবছরে এ ঘাটতি জিডিপির সাড়ে ৪ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রত্যাশা করছে। বিদেশি ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতার কারণে সরকারকে ঋণের সহজপন্থা হিসেবে ব্যাংক থেকে চড়া সুদে ঋণ নিতে হচ্ছে।

রপ্তানি ও রেমিটেন্স আয় দুমাস ধরে বাড়তে থাকায় বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকবে বলে আশাবাদী বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। তবে ৯ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঘাটতিতে থাকা ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট কবে ব্যালেন্সে ফিরবে, সে সম্পর্কে কোনও পূর্বাভাস দিতে পারেননি তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক বাজারে ঋণের সুদহার না কমা পর্যন্ত আর্থিক হিসেবে ঘাটতি কমবে না।

“আন্তর্জাতিক বাজারে ঋণের সুদহার কমলে এবং দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে ব্যবসায়িক আস্থা বাড়লে, ব্যবসায়ীরা বিদেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ নিতে ঝুঁকবেন। তারা যখন ঋণ পরিশোধের তুলনায় বেশি পরিমাণ ঋণ নেবেন, তখন ধীরে ধীরে ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট পজেটিভ [ইতিবাচক] হবে,” বলেন ওই কর্মকর্তা।

নতুন বাজেট নিয়ে সতর্কতার কথা শুনিয়েছেন অর্থনীতির গবেষক বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।

এআরএইচ ডট নিউজকে তিনি বলেন, “প্রথমে স্বীকার করে নিতে হবে– আমরা ভালো নেই। আমাদের অর্থনীতি ভালো নেই। তাই অর্থনীতির স্বাস্থ্য আগে ভালো করতে হবে। আর সেটা এই বাজেটের মাধ্যমেই করতে হবে।

“আমরা অনেক ভুল করেছিলাম, যার মাশুল এখন দিতে হচ্ছে অর্থনীতিকে। এখন আর ভুল করা যাবে না। ভেবেচিন্তে সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর এ সবের প্রতিফলন হতে হবে নতুন বাজেটে।”

তিনি বলেন, “বাজেটটা অবশ্যই ছোট হতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের এখন জিডিপি প্রবৃদ্ধির দিকে না তাকিয়ে অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। আর সেটা বাজেটের মাধ্যমে করতে হবে।”

“আমি মনে করি, আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি যদি ৫ শতাংশও হয়, তাতেও কোনও সমস্যা নেই। অর্থনীতিকে সঠিক রাস্তায় আনাই হবে আমাদের প্রধান কাজ,” বলেন দীর্ঘদিন আইএমএফের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করে আসা আহসান এইচ মনসুর।

নতুন এডিপি বাড়ছে মাত্র ২ হাজার কোটি টাকা পরবর্তী

নতুন এডিপি বাড়ছে মাত্র ২ হাজার কোটি টাকা

কমেন্ট