কালোটাকা সাদার পক্ষে বিআইডিএস, তবে...
সংসদে বাজেট প্রস্তাবের দুদিন পর শনিবার তা নিয়ে নিজেদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে ‘২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ও বাংলাদেশের অর্থনীতির মধ্যমেয়াদী প্রেক্ষিত’ শীর্ষক অনুষ্ঠান আয়োজন করে বিআইডিএস।
প্রস্তাবিত বাজেটে কালোটাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ দিয়েছে সরকার। ১৫ শতাংশ কর দিয়ে বিনা প্রশ্নে এই সুযোগ দেওয়া হয়েছে এক বছরের জন্য। এই সুযোগকে সমর্থন জানিয়েছে বিআইডিএস। তবে করের হার কয়েকটি স্তরে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াতে বলছে সংস্থাটি।
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন, তাতে তিনি এই প্রস্তাব করেছেন।
বাজেটে কালোটাকা সাদা করার এই সুযোগ রাখায় চলছে সমালোচনা; বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি), সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম), টিআইবিসহ দেশের প্রায় সব অর্থনীতিবিদ সমালোচনা করে বলছে, বিনা প্রশ্নে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ সৎ করদাতাদের প্রতি চরম অন্যায় করা হয়েছে। এটি নৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিবেচনায় অগ্রহণযোগ্য।
তবে সরকারের আর্থে পরিচালিত গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষনা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) কালোটাকা সাদা করার সুযোগের পক্ষে। তবে এ ক্ষেত্রে করের হার বাড়ানোর সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।
অর্থমন্ত্রী মাহমুদ আলী তার বাজেট প্রস্তাবে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে টাকা সাদা করার সুযোগ রেখেছেন। বিআইডিএস তা কয়েকটি স্তরে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াতে বলছে।
সংসদে বাজেট প্রস্তাবের দুদিন পর শনিবার তা নিয়ে নিজেদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে ‘২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ও বাংলাদেশের অর্থনীতির মধ্যমেয়াদী প্রেক্ষিত’ শীর্ষক অনুষ্ঠান আয়োজন করে বিআইডিএস।
বাজেটে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ দুর্নীতিকে উৎসাহ দেবে বলে সিপিডি, টিআইবি, সানেমের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া এলেও একে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন না বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন।
তিনি বলেন, “আমাদের চলে আসা সংস্কৃতি অনুযায়ী অনেক ক্ষেত্রেই সাধারণ মানুষের বৈধ অর্থই অপ্রদর্শিত হয়ে পড়ে। যেমন অনেকে জমি, ফ্ল্যাট বা অন্য কোনও সম্পদ বিক্রির সময় কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য কম মূল্য দেখায়। অথচ তাদের হাতে যে অতিরিক্ত টাকা যাচ্ছে। এই অতিরিক্ত টাকাটা অপ্রদর্শিত অর্থ হয়ে যাচ্ছে।
“আবার অনেকের কাছে অবৈধভাবে আয় করা টাকাও রয়েছে। এভাবে অনেক ধরনের অপ্রদর্শিত অর্থ রয়েছে। আমার অপ্রদর্শিত আয় আছে…হয়ে গেছে … নানা কারণে হয়েছে। সেটাকে আমি প্রদর্শনের সুযোগ দেব।”
কিন্তু এর করহার হার এক না রাখার পক্ষে মত দিয়ে তিনি বলেন, “বাজেটে ১৫ শতাংশ ফ্ল্যাট রেট কোথা থেকে আসল? ফিক্সড কেন? সেটা ১৫ শতাংশ হতে পারে, ২০ শতাংশ হতে পারে সেটা ৩০ শতাংশও হতে পারে।”
অর্থাৎ যে পরিমাণ অর্থ সাদা কেউ করতে চাইবেন, তার অঙ্কের ওপর ভিত্তি করে করের হার পরিবর্তনের পক্ষপাতি বিনায়ক সেন।
এই সময়ে অর্থনীতির সবচেয়ে উদ্বেগজনক সূচক মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ঘর থেকে ৬ শতাংশের ঘরে নামিয়ে আনার যে লক্ষ্য অর্থমন্ত্রী ঠিক করেছেন, তা অর্জন নিয়ে সংশয় রয়েছে বিনায়কের।
অতি দরিদ্রসহ নিম্ন আয়ের মানেুষের জন্য বিশেষ উদ্যোগ বিশেষ করে কম মুল্যে খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা আরও সম্প্রসারণ করার পরামর্শ দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক মনজুর হোসেন বলেন, আগামী অর্থবছরের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলার ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়ে খেলাপি ঋণ এবং ভর্তুকি কমানোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
এসময় তিনি জ্বালানি খাতে দক্ষতা বাড়ানো, মুদ্রা বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা এবং সার্বিকভাবে রিজার্ভ বাড়ানোর মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি কমানোর উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ রাখেন।
তিনি বলেন, দেশে উপযুক্ত বিনিয়োগ পরিবেশ নিশ্চিত করার মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পারলে রিজার্ভের উন্নতি করা সম্ভব।
অনুষ্ঠানে বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক এস এম জুলফিকার আলী বলেন, বাজেটে শিক্ষায় ৬ হাজার ৫৪৭ কোটি এবং স্বাস্থ্যে ৩ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়িয়েছে। দক্ষতা বাড়িয়ে সেই বরাদ্দের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
কমেন্ট