বাজেট পাস, সোমবার থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর

বাজেট পাস, সোমবার থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর

অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী গত ৬ জুন জাতীয় সংসদে ‘টেকসই উন্নয়নের পরিক্রমায় স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রা’ স্লোগান সংবলিত এই বাজেট পেশ করেন।

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়েছে। ৩০ জুন রবিবার শেষ হচ্ছে ২০২৩-২৪ অর্থবছর। ১ জুলাই সোমবার থেকে শুরু হবে নতুন অর্থবছর।

অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী গত ৬ জুন জাতীয় সংসদে ‘টেকসই উন্নয়নের পরিক্রমায় স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রা’ স্লোগান সংবলিত এই বাজেট পেশ করেন।

রবিবার বাজেট পাসের প্রক্রিয়ায় মন্ত্রীগণ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ব্যয় নির্বাহের যৌক্তিকতা তুলে ধরে মোট ৫৯টি মঞ্জুরি দাবি সংসদে উত্থাপন করেন। এই মঞ্জুরি দাবিগুলো সংসদে কণ্ঠভোটে অনুমোদিত হয়।

এই সব মঞ্জুরি দাবির যৌক্তিকতা নিয়ে বিরোধীদলের ৬ জন সংসদ সদস্য মোট ২৫১টি ছাঁটাই প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এর মধ্যে আইন ও বিচার বিভাগ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় খাতে তিনটি মঞ্জুরি দাবিতে আনীত ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর স্বতন্ত্র ও বিরোধী দলের সদস্যরা আলোচনা করেন। পরে কণ্ঠভোটে ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো নাকচ হয়ে যায়।

ছাঁটাই প্রস্তাবে আলোচনা করেন জাতীয় পার্টির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, স্বতন্ত্র সদস্য হামিদুল হক খন্দকার, পংকজ নাথ, আবুল কালাম ও নাসের শাহরিয়ার জাহেদী।

এরপর সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়ে নির্দিষ্টকরণ বিল-২০২৪ পাসের মাধ্যমে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট অনুমোদন করেন।

এর আগে শনিবার সংসদে অর্থ বিল-২০২৪ পাসের মাধ্যমে বাজেটের আর্থিক ও কর প্রস্তাব সংক্রান্ত বিধি-বিধান অনুমোদন করা হয়।

২০২৪-২৫ অর্থ বছরের বাজেটে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা।

বাজেটে মোট রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে আয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য সূত্র থেকে কর রাজস্ব ধরা হয়েছে ৬১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআর বহির্ভূত ১৫ হাজার কোটি টাকা কর ব্যতীত প্রাপ্তি ৪৬ হাজার কোটি টাকা।

সামগ্রিক বাজেট ঘাটতি ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা দেখানো হয়েছে, যা জিডিপির ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের বাজেটে ঘাটতি ছিল জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ।

ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক ঋণ থেকে ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা আহরণ করা হবে। বৈদেশিক ঋণের মধ্যে ঋণ পরিশোধ খাতে ৩৬ হাজার ৫০০ কোটি রাখা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, ব্যাংকবহির্ভূত উৎস থেকে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা সংস্থানের ব্যবস্থা রাখা  হয়েছে।

নতুন বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে রাখার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাজেটে সামাজিক অবকাঠামো খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ লাখ ৬ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ২৫ দশমিক ৯২ শতাংশ। এর মধ্যে মানবসম্পদ খাতে (শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য খাত) বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা।

ভৌত অবকাঠামো খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২ লাখ ১৬ হাজার ১১১ কোটি টাকা বা ২৭ দশমিক ১২ শতাংশ, যার মধ্যে সার্বিক কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ৯৫ হাজার ২৮৩ কোটি, যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে ৮০ হাজার ৪৯৮ কোটি এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৩০ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

সাধারণ সেবা খাতে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৭০১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা মোট বরাদ্দের ২১ দশমিক ১৭ শতাংশ। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি), বিভিন্ন শিল্পে আর্থিক সহায়তা, ভর্তুকি, রাষ্ট্রায়ত্ত, বাণিজ্যিক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের জন্য ব্যয় বাবদ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৮৩ হাজার ৫৪৩ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১০ দশমিক ৪৮ শতাংশ।

সুদ পরিশোধ বাবদ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১৪ দশমিক ২৪ শতাংশ। নিট ঋণদান ও অন্যান্য ব্যয় খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৮ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ।

বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা, যোগাযোগ অবকাঠামো, ভৌত অবকাঠামো, আবাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, কৃষি, মানবসম্পদ উন্নয়ন খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

ধনীদের করে ছাড় দিয়ে অর্থবিল পাস পরবর্তী

ধনীদের করে ছাড় দিয়ে অর্থবিল পাস

কমেন্ট