পিছু হটল সরকার, রেস্তোরাঁয় ভ্যাট ৫ শতাংশই থাকল

পিছু হটল সরকার, রেস্তোরাঁয় ভ্যাট ৫ শতাংশই থাকল

রাজস্ব আদায়ে বড় ঘাটতির মধ্যে অর্থ বছরের মাঝামাঝিতে এসে গত ৯ জানুয়ারি শতাধিক পণ্য ও সেবায় ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। পাশাপাশি বিভিন্ন পণ্যে সম্পূরক শুল্কও বাড়ানো হয়। এর মধ্যে রেস্তোরাঁ সেবায় ভ্যাট হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়।

হোটেল-রেস্তোরাঁর মালিক কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে এই খাতের ভ্যাট আগের মতো ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর ঢাকার আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের ডেকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন মূসক অনু বিভাগের দ্বিতীয় সচিব (মূসক আইন ও বিধি) বদরুজ্জামান মুন্সী।

এসময় তিনি জানান, সম্প্রতি যে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে সেগুলোর মধ্যে দুয়েকটার কমিয়ে আনার চিন্তা-ভাবনা চলছে।

রাজস্ব আদায়ে বড় ঘাটতির মধ্যে অর্থ বছরের মাঝামাঝিতে এসে গত ৯ জানুয়ারি শতাধিক পণ্য ও সেবায় ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। পাশাপাশি বিভিন্ন পণ্যে সম্পূরক শুল্কও বাড়ানো হয়। এর মধ্যে রেস্তোরাঁ সেবায় ভ্যাট হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়।

মূল্যস্ফীতি যখন দুই অঙ্কের কোঠায়, তখন শতাধিক পণ্য ও সেবায় ভ্যাট-কর বাড়ানোর এই পদক্ষেপের সমালোচনা করছেন অর্থনীতিবিদরা। ব্যবসায়ী মহল থেকেও উঠেছে বিরোধিতা। বাংলাদেশে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি তা ঠেকাতে সেদিনই অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের হুমকি দেয়।

ওই আদেশে ওষুধ, এলপি গ্যাস, গুঁড়ো দুধ, বিস্কুট, আচার, সস, সিগারেট, জুস, টিস্যু পেপার, ফলমূল, সাবান, ডিটারজেন্ট পাউডার, মিষ্টি, চপ্পল (স্যান্ডেল), বিমান টিকেটসহ শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর বিভিন্ন স্তরে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়।

রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি ৯ জানুয়ারিই সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, ভ্যাট আগের মতো ৫ শতাংশ করা না হলে রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা প্রথমে মানববন্ধন করবেন। তাতে দাবি মানা না হলে সারা দেশে একদিনের জন্য রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখা হবে। এরপরও দাবি মানা না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়া হবে।

দাবি আদায়ে হোটেল-রেস্তারাঁর মালিক-কর্মচারীরা এনবিআর ভবন সংলগ্ন এলাকায় মানববন্ধন করে আসছিলেন। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি সারা দেশেই এ কর্মসূচি পালন করছিলেন তারা।

এমন প্রেক্ষাপটে রেস্তোরাঁ খাতের ভ্যাট আগের মতো ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সাংবাদিকদের ডেকে জানিয়েছেন এনবিআর কর্মকর্তা বদরুজ্জামান মুন্সী। এসময় তিনি হোটেল-রেস্তোরাঁর আন্দোলনরত মালিক-কর্মচারীদের কাজে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানান।

বদরুজ্জামান মুন্সী বলেন, “মূল্য সংযোজন আইন ও সম্পূরক শুল্ক সংক্রান্ত অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে রেস্টুরেন্ট সেবার ক্ষেত্রে যে ৫ শতাংশ ভ্যাট ছিল, সেটিকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ আরোপ করা হয়। পরবর্তী সময়ে সরকার কর্তৃক এই সিদ্ধান্ত কিছুটা পরিবর্তন করে পুনরায় ৫ শতাংশে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত দিয়েছে এবং সে মোতাবেক জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।

“আমরা আশা করি, আজকে (বৃহস্পতিবার) বা রবিবারের ভেতরে এসআরও (পরিপত্র) জারির মাধ্যমে পূর্বের অবস্থায় অর্থাৎ ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হবে। অর্থাৎ রেস্তোরাঁ সেবার ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ভ্যাটের স্থলে এখন ৫ শতাংশ আরোপ করা হবে।”

রেস্তোরাঁ মালিক-কর্মচারীদের আন্দোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ইতোপূর্বে গতকাল (বুধবার) রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতিকে চিঠি দিয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

“তথাপি ওনারা কেন মানববন্ধনে আসছেন বিষয়টি একটু দেখার বিষয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ইতোমধ্যেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে রেস্তোরাঁ সেবার ভ্যাট হার ৫ শতাংশ করার। যে কারণে এখন মানববন্ধনের প্রয়োজন নেই বলে আমরা মনে করি। আমরা তাদেরকে অনুরোধ করি স্ব স্ব স্থানে কাজে ফিরে যাওয়ার জন্য।”

আরেক প্রশ্নের জবাবে এনবিআর কর্মকর্মা বদরুজ্জামান মুন্সী বলেন, “গুরুত্বপূর্ণ আরও একটা- দুইটা আইটেমের ক্ষেত্রে ভ্যাট কমানোর চিন্তা-ভাবনা চলছে। কিন্তু এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। রেস্তোরাঁর বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত হলো, সেটা আমরা জানিয়ে দিলাম।”

ওষুধ-পোশাকসহ নিত্যপণ্যের ভ্যাট রিভিউ হচ্ছে’

এদিকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ওষুধ ও পোশাকসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর যে বাড়তি ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে- তা রিভিউ করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

বাড়তি ভ্যাটের কারণে বাজারে পণ্যের দামে এরই মধ্যে প্রভাব পড়েছে—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “ভ্যাটের কারণে সম্পূর্ণ না। দামের প্রভাব কিছু কিছু জায়গায় হয়তো ভ্যাটের কারণে হয়েছে। সম্পূর্ণভাবে এটা হলো ম্যানুপুলেশন, সাপ্লাই চেনের ওপর।”

“ভ্যাটের মাধ্যমে আমি কয়েকটি জিনিসের দাম বাড়িয়েছি। ফোন, বিদেশি ফলের জুস কয়টা মানুষ কেনে। অতএব ওটার ওপর পড়েছে (ভ্যাটের কারণে দাম বেড়েছে) তা না। তবু আজ আমরা রিভিউ করছি, কিছু কিছু ম্যাটার। আপনারা পরে জানতে পারবেন।”

তিনি বলেন, “অত্যাবশ্যকীয় কিছু কিছু জিনিসের বিষয়ে আমরা বলেছি। তারপর ওষুধ ও পোশাকসহ অত্যাবশ্যকীয় যেসব পণ্য সাধারণ লোকজনের ওপর প্রভাব ফেলে সেগুলো রিভিউ করা হচ্ছে।”

এবার প্রক্রিয়াজাত শিল্প মালিকদের হুমকি

বর্ধিত ভ্যাট ও শুল্ক প্রত্যাহার করতে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির পর এবার সরকারকে সাতদিনের ‘আল্টিমেটাম’ দিলো বাংলাদেশ এগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন (বাপা)। এর মধ্যে সিদ্ধান্ত বদল না হলে কারখানা বন্ধসহ রাস্তায় নামার ঘোষণা দিয়েছে কৃষি খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকারী ব্যবসায়ীদের এই সংগঠনটি।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর শাহবাগের ঢাকা ক্লাবে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের ওপর ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আরোপ এবং প্রস্তাবিত গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিল বাপা। এ সময় গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব প্রত্যাহার করারও দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, রাষ্ট্রীয় সংস্কারের উদ্দেশ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়েছে। সংস্কার অর্থ-গবির মানুষের স্বল্পমূল্যের খাদ্যে ভ্যাট বাড়িয়ে দাম বাড়ানো নয়। কৃষক, রিকশাওয়ালার পকেটের টাকা কেড়ে সরকারি কর্মকর্তাদের বর্ধিত বেতনের অর্থের যোগান দেওয়া নয়।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ না করে ক্যালকুলেটর টিপে গরিব মানুষের ৫ টাকা, ১০ টাকার খাবার পণ্যে ভ্যাট ৩০০ শতাংশ বাড়িয়ে সরকারের রাজস্ব আদায় করার বুদ্ধি যারা দেয়, তারা এ সরকারের ভালো চায় না। তারা এ সরকারকে বিপদে ফেলতে চায়। কারণ এভাবে ভ্যাট বাড়িয়ে রাজস্ব আদায় বাড়ে না। বেভারেজ শিল্প এর খুব ভালো উদাহরণ বলে জানান তারা।

রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির দাবির পর ভ্যাট প্রত্যাহার হচ্ছে—জানিয়ে বাংলাদেশ অটো বিস্কুটস অ্যান্ড ব্রেড ম্যানফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিকুর রহমান ভূঁইয়া সরকারকে সতর্ক করে বলেন, “দাবি না মানলে কী করতে হবে, তা আমাদের জানা আছে।”

প্রাণ গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান খান চৌধুরী বলেন, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পের ৯০ শতাংশ পণ্যের ক্রেতা নিম্নআয়ের সাধারণ মানুষ। এসব পণ্য ৫ টাকা থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হয়। উৎপাদন পর্যায়ে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির পর প্যাকেটজাত ৫ টাকার বিস্কুট বিক্রি করে কোম্পানির কোনো মুনাফা হয় না।

“এ অবস্থায় ভ্যাট বাড়ালে কোম্পানি এ পণ্যের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য বাড়াতে পারবে না। ফলে এ খরচ কোম্পানির ওপর পড়বে। এ অবস্থায় ব্যবসায় লোকসান হলে কারখানা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া এ খাতের ব্যবসায়ীদের বিকল্প কোনো উপায় থাকবে না।”

অর্থ সংকটে ৬ মাসে এডিপি বাস্তবায়ন মাত্র ১৮% পরবর্তী

অর্থ সংকটে ৬ মাসে এডিপি বাস্তবায়ন মাত্র ১৮%

কমেন্ট