সমালোচনার মুখে ওষুধ, রেস্তোরাঁ, মোবাইল, পোশাকে বাড়তি ভ্যাট প্রত্যাহার

সমালোচনার মুখে ওষুধ, রেস্তোরাঁ, মোবাইল, পোশাকে বাড়তি ভ্যাট প্রত্যাহার

ব্যবসায়ীদের আন্দোলনের মুখে গত ১৬ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে রেস্তোরাঁ সেবার ওপর ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার কথা জানায় এনবিআর। এছাড়া আরও কিছু পণ্য ও সেবায় বাড়তি ভ্যাট ও শুল্ক প্রত্যাহার করা হবে বলে ওইদিন জানিয়েছিল এনবিআর।

আন্দোলন ও সমালোচনার মুখে ওষুধ ও রেস্তোরাঁ খাতের সঙ্গে মোবাইল ফোন, পোশাক, আইএসপি, মিষ্টি, নন–এসি হোটেল এবং গাড়ির গ্যারেজ ও ওয়ার্কশপ সেবায় অতিরিক্ত যে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আরোপ করেছিল অন্তবর্তী সরকার, তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।

অর্থাৎ এ সব পণ্য ও সেবায় ভ্যাট ও শুল্ক আগের হারই বহাল থাকবে। সংস্থাটি বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সংক্রান্ত চারটি প্রজ্ঞাপন জারির কথা জানিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এতে এসব পণ্য ও সেবার দাম বাড়বে না।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাঝপথে এসে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণে ৯ জানুয়ারি এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে শতাধিক পণ্য ও সেবায় ভ্যাট ও শুল্ক বাড়ানো হয়। উচ্চ মূল্যস্ফীতির এ সময়ে হঠাৎ বিপুলসংখ্যক পণ্য ও সেবায় ভ্যাট বাড়ানোর এ সিদ্ধান্তে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনও ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানায়।

অধ্যাদেশ জারির পর থেকে খাত সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন। ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্তের সমালোচনা এসেছে খোদ অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ও জাতীয় নাগরিক কমিটির কাছ থেকেও।

গত ১ জানুয়ারি উপদেষ্টা পরিষদের সভায় বিভিন্ন পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়।

পরদিন ২ জানুয়ারি সরকারি ওই সিদ্ধান্তের বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, কর বাড়লেও জিনিসপত্রের দামে প্রভাব পড়বে না। মঙ্গলবারও (২১ জানুয়ারি) সাংবাদিকদের একই কথা বলেন অর্থ উপদেষ্টা।

ব্যবসায়ীদের আন্দোলনের মুখে গত ১৬ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে রেস্তোরাঁ সেবার ওপর ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার কথা জানায় এনবিআর। এছাড়া আরও কিছু পণ্য ও সেবায় বাড়তি ভ্যাট ও শুল্ক প্রত্যাহার করা হবে বলে ওইদিন জানিয়েছিল এনবিআর।

বুধবার চারটি প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে আগের ভ্যাট ও শুল্ক হারে ফিরল এনবিআর।

ওষুধ

এনবিআর সংবাদ বিজ্ঞাপ্তিতে বলেছে, “সকল জনগোষ্ঠীর জন্য চিকিৎসা সেবাকে আরো সহজতর করার লক্ষ্যে ওষুধ শিল্পের ওপর ব্যবসায়িক পর্যায়ে বৃদ্ধিকৃত ভ্যাটের হার সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে পূর্বের হার ২ দশমিক ৪ শতাংশ বলবৎ রাখা হয়েছে।”

বাড়িয়ে এই হার ৩ শতাংশ করা হয়েছিল। এতে ওষুধের দাম বাড়বে না বলে মনে করে এনবিআর।

মোবাইলে কথা বলা

মোবাইলের সিম বা রিম কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে টেলিফোন সেবায় (টক টাইম, ইন্টারনেট ব্যবহার ইত্যাদি) সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৩ শতাংশ করা হয়েছিল। এই সম্পূরক শুল্ক হার এখন আগের জায়গায় ফেরত নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ইন্টারনেট সংস্থার (আইএসপি) সেবার ওপর আরোপিত ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্কও প্রত্যাহার করা হয়েছে।

রেস্তোরাঁ বিল

আগের মতোই রেস্তোরাঁর খাবারের বিলের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ হবে। রেস্তোরাঁর খাবারের বিলের ওপর ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছিল নতুন অধ্যাদেশে। এখন বাড়তি ভ্যাট হার প্রত্যাহার করা হয়েছে।

পোশাক, মিষ্টি ও অন্যান্য

রেস্তোরাঁর মতো তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রেও ভ্যাট কমানো হয়েছে। নিজস্ব ব্র্যান্ডের পোশাক ব্যতীত অন্যান্য পোশাক বিক্রির ক্ষেত্রে ভ্যাট হার করা হয়েছে সাড়ে ৭ শতাংশ। নতুন করে ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্তের আগে এ হার সাড়ে ৭ শতাংশই ছিল।

৯ জানুয়ারি যা বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছিল। এখন বাড়তি সেই হার প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। তবে বাড়তি ভ্যাট থাকছে ব্র্যান্ডের পোশাকের ক্ষেত্রে। এ হার করা হয়েছে ১০ শতাংশ। ৯ জানুয়ারির আগে তা ছিল সাড়ে ৭ শতাংশ।

মিষ্টির দোকানেরও ভ্যাট হার ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। ৯ জানুয়ারির আগে মিষ্টির দোকানে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট ছিল। ফলে মিষ্টির দোকানে ভ্যাট হার বাড়ল আড়াই শতাংশ।

এ ছাড়া নন-এসি হোটেলের ওপর ভ্যাট হার ১৫ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। অন্যদিকে মোটর গাড়ির গ্যারেজ ও ওয়ার্কশপের ভ্যাটেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখানেও ১০ শতাংশ ভ্যাট করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পাস করে গেলেও অভ্যুত্থানে এক মাস পরই তাদের পতন ঘটায় বাজেট বাস্তবায়নের দায়িত্ব পড়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর।

ঘোষিত বাজেটে গোটা অর্থবছরে এনবিআর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয় ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। প্রথম পাঁচ মাস অর্থাৎ জুলাই-নভেম্বর সময়ে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা। বিপরীতে আদায় হয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা। ফলে পাঁচ মাসেই ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার কোটি টাকা।

গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। তা আদায় করতে না পারায় সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা ২২ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছিল।

এবার অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসেই ঘাটতি তার দ্বিগুণ হওয়ায় পুরো বছর শেষে ঘাটতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা সরকারের চিন্তার জন্য যথেষ্ট।

এই ঘাটতি পূরণে অর্থবছরের মাঝপথে এসে বিভিন্ন পণ্য ও সেবায় মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট বা মূসক), শুল্ক ও কর বাড়িয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার।

আন্দোলন ও সমালোচনার মুখে এ সব পণ্য ও সেবার ওপর বাড়তি কর প্রত্যাহার করে নিয়েছে এনবিআর।

সমালোচনার মধ্যেও ভ্যাট নিয়ে সেই আগের কথাই বললেন সালেহ উদ্দিন পরবর্তী

সমালোচনার মধ্যেও ভ্যাট নিয়ে সেই আগের কথাই বললেন সালেহ উদ্দিন

কমেন্ট