আরেক আদেশে কোম্পানির ক্ষেত্রে রিটার্ন জমার সময় এক মাস বাড়িয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে ১৬ মার্চ করা হয়েছে।

ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের বার্ষিক আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় আরও ১৬ দিন বাড়ানো হয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এক ঘোষণায় জানিয়েছে, কোম্পানি ব্যতিত ২০২৪-২৫ করবর্ষের সব করদাতার জন্য জরিমানা ছাড়া রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। অনলাইন ও অফলাইন উভয়ক্ষেত্রেই এই নতুন সময়সীমা কার্যকর হবে।

বৃহস্পতিবার এক অফিস আদেশে এনবিআর বলেছে, আয়কর আইন, ২০২৩ এর ধারা ৩৩৪ এর দফা (খ) এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড জনস্বার্থে সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে কোম্পানি ব্যতিত সকল করদাতার ২০২৪-২৫ করবর্ষের জন্য নির্ধারিত করদিবস ৩১ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখের পরিবর্তে ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখ নির্ধারণ করিল।

আরেক আদেশে কোম্পানির ক্ষেত্রে রিটার্ন জমার সময় এক মাস বাড়িয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে ১৬ মার্চ করা হয়েছে।

অতীতে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিবারই আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় বাড়ানো হয়েছে। কোনো কোনো বার দুই-তিন বারও বাড়ানো হয়েছে।

গত বার এক দফায় দুই মাস সময় বাড়ানো হয়েছিল। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত রিটার্ন জমা দিতে পেরেছিলেন করদাতারা। এবার তিন দফায় আড়াই মাস বাড়ানো হলো।

আয়কর আইন অনুযায়ী, জরিমানা ছাড়া ব্যক্তি শ্রেণির করদাতার রিটার্ন জমা শেষ সময় ৩০ নভেম্বর। বোর্ড চাইলে এরপর একক সিদ্ধান্তেই আরও এক মাস সময় বাড়াতে পারে।

তবে মহামারীসহ নানা সংকটকালীন সময়ে সরকার চাইলে সময় বাড়াতে পারে। সেক্ষেত্রে সরকারের অনুমোদনের মাধ্যমে এনবিআর আদেশ জারি করতে পারে।

অর্থ উপদেষ্টার কাছ থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে আদেশ জারি করেছে এনবিআর।

রিটার্ন জমার সময় বাড়ানোর ক্ষেত্রে এবার ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। এর আগে রিটার্ন জমা দেওয়ার নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পর ওইদিন রাতে সময় বাড়ানোর ঘোষণা দিত এনবিআর; এবার প্রথম দফায় বেঁধে দেওয়া সময়ের দুই সপ্তাহ আগেই (১৭ নভেম্বর) এক মাস সময় বাড়ানো হয়; ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়।

বাড়ানো সময় শেষ হওয়ার তিন দিন আগে (২৯ ডিসেম্বর) আরও এক মাস বাড়িয়ে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত করা হয়।

সবশেষ বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) আরও ১৬ দিন বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জরিমানা ছাড়া রিটার্ন জমা দিতে পারবেন করদাতারা।

বর্তমানে এক কোটির বেশি কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) আছেন। তাদের মধ্যে প্রতিবছর ৪০ লাখের বেশি টিআইএনধারী রিটার্ন দেন।

এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত আয়কর রিটার্ন জমা পড়েছে ৩৩ লাখ ৯৮ হাজার ৯৩৭টি; এর মধ্যে অনলাইনে জমা পড়েছে ১১ লাখ ৬৯ হাজার ৭৫২টি। এর মাধ্যমে ৫ হাজার ৯ কোটি টাকার কর আদায় হয়েছে।

গত করবর্ষে আয়কর রিটার্ন জমা পড়েছিল ৪৩ লাখের বেশি।

বিধান অনুযায়ী, বছরে আয় সাড়ে তিন লাখ টাকার বেশি হলে আয়কর প্রযোজ্য হয়। ব্যাংক হিসাব খোলা, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারসহ বেশ কিছু কাজে এখন রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক।

রিটার্ন জমা দিলে ব্যাংকে সঞ্চয়ে সুদ বা মুনাফা এবং পুঁজিবাজারে লভ্যাংশের ওপর ১৫ শতাংশের বদলে ১০ শতাংশ আয়কর দেওয়া যায়।

জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলন, ব্যবসা-বাণিজ্যে অনিশ্চয়তাসহ বিভিন্ন কারণে সময় বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন এনবিআরের কর্মকর্তারা।

এবার কিছু ক্ষেত্রে রিটার্ন জমার ধরন পাল্টে অনলাইনে জমা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যেমন গত ২২ অক্টোবর এনবিআরের আদেশে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকার সরকারি কর্মকর্তা, তফসিলি ব্যাংক, মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানির কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানির কর্মকর্তাদের অনলাইনে রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

বহুজাতিক কোম্পানিগুলো হলো ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড, ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেড, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড, বাটা শু কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড ও নেসলে বাংলাদেশ পিএলসি।