মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে আটকে রাখতে চান অর্থমন্ত্রী
বর্তমান বিশ্ব পেক্ষাপটে অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সূচক হচ্ছে মূল্যস্ফীতি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও মূল্যস্ফীতির পারদ চড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে এই সূচক ৬ শতাংশে আটকে রাখতে চান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের যে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন, তাতে তিনি এই আশার কথা শুনিয়েছেন।
এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের অবসান কবে হবে তা কেউ বলতে পারছেন না। ফলে আগামী বছরও উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রবণতা থাকবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন অর্থনীতিবিদরা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারিতে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি বা মাসভিত্তিক) দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। মার্চে তা বেড়ে ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশে উঠে। এপ্রিলে তা সামান্য কমে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে নেমেছে। বাজারে জিনিসপত্রের দাম আরেক দফা বেড়েছে। মে মাসের তথ্য পাওয়া গেলে সেটা দুই অঙ্কের ঘরে (ডাবল ডিজিট) গিয়ে পৌঁছতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।
বিশ্ববাজারের অস্থিরতাকে সঙ্গী করে সরকার যখন আইএমএফ এর ঋণের শর্ত মেনে ভর্তুকি তুলে নিয়ে ধাপে ধাপে জ্বালানির দাম বাড়াচ্ছে, সেই সময়ে গড় মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে আটকে রাখার লক্ষ্য ধরেছেন অর্থমন্ত্রী।
বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেন, “বিশ্ববাজারে জ্বালানি, খাদ্যপণ্য ও সারের মূল্য কমে আসা, দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় এবং খাদ্য সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকারি উদ্যোগের প্রভাবে আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত থাকবে এবং বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের কাছাকাছি দাঁড়াবে বলে আশা করি।”
বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান এই সূচককে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে বেঁধে রাখার লক্ষ্য ঘোষণা করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। পরে তা সংশোধন করে ৬ শতাংশ করা হয়। তবে সেই লক্ষ্যও পূরণ করা যায়নি।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে ১০ মাসের গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশে, যা বহু বছরের মধ্যে বেশি। তাতে নিম্নবিত্ত আর মধ্যবিত্তের সংসারে তেল-নুনের হিসাব মেলাতে স্বাভাবিকভাবেই প্রচণ্ড চাপ পড়ছে।
এমন বাস্তবতায় গড় মূল্যস্ফীতি কী করে ৬ শতাংশে রাখা যাবে, তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় দেননি।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের চাপের মুখে অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফেরাতে গত বছর আইএমএফ এর ঋণের আবেদন করেছিল বাংলাদেশ। ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার হাতে আসে।
এর আগে ও পরে বাংলাদেশ পরামর্শ অনুযায়ী বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি কমানোসহ আর্থিক খাতের কাঠামো ও নীতি সংস্কারে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করে।
চলতি বছর ১৮ জানুয়ারি সরকারের নির্বাহী আদেশে শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বাণিজ্যিক খাতে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। এরপর ৩১ জানুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয় তিন দফা, প্রতিবার গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ে গড়ে ৫ শতাংশ করে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ে পণ্যমূল্যে।
আগে ৪২২টি পণ্যের মূল্য ধরে মূল্যস্ফীতি হিসাব করত পরিসংখ্যান ব্যুরো। আইএমএফ এর পরামর্শ মেনে মে মাস থেকে আরও প্রায় ৩০০ পণ্যকে ‘ঝুড়িতে’ যুক্ত করা হয়।
গত বছরের অগাস্টে মূল্যস্ফীতি (পয়েন্ট টু পয়েন্ট) এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে উঠে গিয়েছিল। এরপর তা কিছুটা কমে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে ৮ শতাংশের ঘরে থাকলেও মার্চে ফের ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশে উঠে যায়।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সে সময় মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে না যেতে স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করার কথা জানিয়েছিলেন। এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি সামান্য কমে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ হয়।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, “সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি বাড়লেও সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও জনগণের ওপর এর প্রভাব প্রশমনে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।”
কমেন্ট