খুচরা বাজারেও কমছে পেঁয়াজের ঝাঁজ
খুচরা বাজারেও পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। বুধবার রাজধানীর বাজারগুলোতে দেশি পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। আমদানি করা ভারতের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়।
পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতে এখনও ৮০ টাকার বেশি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। খুব শিগগিরই ৫০ টাকায় নেমে আসবে বলে আভাস দিয়েছেন বিক্রেতারা।
রাজধানীর শেওড়াপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী রিপন কুমার এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “আজ আমরা ৭৫ টাকা কেজিতে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করেছি। ভারতের আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি করেছি ৬৫ টাকায়। দু-একদিনের মধ্যে দাম আরও কমবে। মনে হচ্ছে ৫০ টাকায় নেমে আসবে।”
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, বুধবার ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মঙ্গলবার এই পেঁয়াজের কেজি ছিল ৮০ থেকে ৯০ টাকা।
এক সপ্তাহ আগে এই দাম ছিল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। আর গত মাসের এই সময়ে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। সে হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজিতে ৪০ টাকার মতো বেড়ে ১০০ টাকায় উঠেছিল।
টিসিবির তথ্যমতে, গত বছর এই সময়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দর ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা।
রাজধানীর শ্যামবাজারের আড়তে দেশি পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকা কেজিতে। কারওয়ান বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা দরে। আর চট্টগ্রামের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজিতে।
সব বাজারেই ভারতীয় পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
আমদানি করা পেঁয়াজ দেশে ঢুকতেই ঝাঁজ কমছে এই কৃষিপণ্যের। আমদানির ঘোষণা দেয়ার পরপরই হঠাৎ দাম পড়ে যাওয়ার কোনো যৌক্তিক ব্যাখা দিতে পারছেন না আড়তদাররা।
তাদের দাবি, ভারতীয় পেঁয়াজ প্রবেশের ফলে দাম পড়ে গেছে। এত দামের পেছনে মজুতদাররা জড়িত তা মানতে নারাজ পেঁয়াজের আড়তদাররা। তাদের দাবি, কৃষকরা বেশি দাম পাওয়ার জন্য মাল বিক্রি করত না। তবে ভারতীয় পেঁয়াজ প্রবেশে চলতি সপ্তাহে খুচরা বাজারে ৫০ টাকার কমে চলে আসবে বলে মনে করছেন ক্রেতারা।
দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন পর্যন্ত ৪ লাখ ৩৪ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। মঙ্গলবার পর্যন্ত ১ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ দেশের বাজারে ঢুকেছে। ভারত থেকে আনা পেঁয়াজের দাম কেজিতে পড়ছে ১৪ থেকে ১৭ টাকা।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসেও ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছিল পেঁয়াজ। গত মাসে হঠাৎ দাম বাড়তে শুরু করে। তারপর সপ্তাহ ব্যবধানে ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকা কেজি প্রতি বাড়তে থাকে। পাশাপাশি এ মাসেই কোথাও কোথাও সেঞ্চুরি অর্থাৎ ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয় মসলা জাতীয় এ পণ্য।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত দুই বছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে ১০ লাখ টনেরও বেশি। এ বছর দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ টনের বেশি। বর্তমানে মজুত আছে ১৮ লাখ ৩০ হাজার টন। কিন্তু উপযুক্ত সংরক্ষণের অভাবে বা প্রতিকূল পরিবেশের কারণে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৬ থেকে ২৮ লাখ টন।
বর্তমানে এক কেজি দেশি পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ ২৮ থেকে ৩০ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি উন্মুক্ত থাকায় পেঁয়াজ আমদানি বেশি হয়েছিল। তখন দেশি পেঁয়াজের বাজারদর কম ছিল, প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা ছিল। কৃষকেরা কম দাম পেয়েছিলেন। সে জন্য পেঁয়াজ চাষে কৃষকের আগ্রহ ধরে রাখতে এবার আমদানি সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছিল কৃষি মন্ত্রণালয়।
২০১৯ সালের নভেম্বরে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতের পর পেঁয়াজের দাম হঠাৎ বেড়ে এক থেকে দুদিনের মধ্যে দেড়শ থেকে ১৮০ টাকায় উঠে যায়। এরপর সপ্তাহ না হতেই দাম বেড়ে আড়াইশ টাকায় উঠে যায় পেঁয়াজের কেজি। বাংলাদেশের ইতিহাসে ওটাই ছিল পেঁয়াজের সর্বোচ্চ দর। নতুন পেঁয়াজ ওঠায় পরে অবশ্য তা কমে আসে।
মাস খানেক ধরে পেঁয়াজের দর ফের বাড়তে থাকে। তিন-চার দিন আগে এর কেজি ১০০ টাকায় গিয়ে ওঠে।
এই দামের লাগাম টেনে ধরতে দুই সপ্তাহ ধরে পেঁয়াজ আমদানির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি চেয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করেছিল। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছিলেন।
শেষ পর্যন্ত রোববার পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয় কৃষি মন্ত্রণালয়। গত সোমবার থেকেই পাশের দেশ ভারতের পেঁয়াজ বিভিন্ন স্থল বন্দর দিয়ে দেশে ঢুকতে শুরু করেছে।
রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কৃষি মন্ত্রণালয় জানায়, পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সীমিত আয়ের, শ্রমজীবী মানুষের কষ্ট লাঘবসহ ভোক্তাদের স্বার্থরক্ষায় পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পেঁয়াজ আমদানি করতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ শাখা থেকে আমদানির অনুমতি বা আইপি নিতে হয়। কৃষকের স্বার্থ বিবেচনা করে পেঁয়াজ আমদানি সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছিল মন্ত্রণালয়।
গত রমজানের পর থেকে দেশের বাজারে হুহু করে বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম। কয়েক দফা বেড়ে দেশের বাজার প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১০০ টাকার বেশি দামে বিক্রি হতে থাকে, পাইকারি বাজারে যা ছিল ৯০ থেকে ৯৫ টাকা পর্যন্ত।
গত বছর চাহিদার চেয়ে অধিক আমদানির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হন পেঁয়াজচাষিরা। তাই চাষিদের পেঁয়াজ চাষে উৎসাহিত করতে এবার পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছিল সরকার।
কমেন্ট