৭০ টাকায় নেমেছে পেঁয়াজ, কমেছে সবজির দাম
ফাইল ছবি
চড়তে থাকা বাজারে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। আমদানি শুরুর পর সেঞ্চুরি হাকানো দেশি পেঁয়াজের কেজি ৭০ টাকায় নেমে এসেছে। আমদানি করা ভারতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়।
দাম আরও কমে যেতে পারে বলে খুচরা ব্যবসায়ীরা পাইকারি বাজার থেকে এখন অল্প পেঁয়াজ কিনে এনে বিক্রি করছেন। বেশি আনলে দাম কমে লোকসান হবে-এই আশঙ্কায় তারা একদিনে যতোটুকু পেঁয়াজ বিক্রি হয়, ততোটুকুই পাইকারি বাজার থেকে কিনে আনছেন।
খুব শিগগিরই দেশি পেঁয়াজের কেজি ৫০ টাকায় নামবে বলে বলে আভাস দিয়েছেন বিক্রেতারা।
অন্য পণ্যের মধ্যে সবজির দামও খানিকটা কমেছে। তবে চিনি বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। প্যাকেটজাত চিনি বাজার থেকে উধাও; কোনো বাজারেই মিলছে না। খুচরা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা কেজি দরে।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুর কাঁচাবাজার, হাতিরপুল ও শেওড়াপাড়া বাজার ঘুরে এই চিত্র পাওয়া গেছে।
শেওড়াপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী রিপন কুমার এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “আজ আমরা ৭ টাকা কেজিতে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করেছি। ভারতের আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি করেছি ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। দু-একদিনের মধ্যে দাম আরও কমবে। মনে হচ্ছে ৫০ টাকায় নেমে আসবে।”
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশও (টিসিবি) বলছে,শুক্রবার ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আমদানি করা ভারতের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫৫ টাকায়।
এক সপ্তাহ আগে টানা বাড়তে বাড়তে দেশি পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকায় উঠেছিল। আর গত মাসের এই সময়ে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়।
টিসিবির তথ্যমতে, গত বছর এই সময়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দর ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা।
আমদানি করা পেঁয়াজ দেশে ঢুকতেই ঝাঁজ কমছে এই কৃষিপণ্যের। আমদানির ঘোষণা দেয়ার পরপরই হঠাৎ দাম পড়ে যাওয়ার কোনো যৌক্তিক ব্যাখা দিতে পারছেন না আড়তদাররা।
তাদের দাবি, ভারতীয় পেঁয়াজ প্রবেশের ফলে দাম পড়ে গেছে। এত দামের পেছনে মজুতদাররা জড়িত তা মানতে নারাজ পেঁয়াজের আড়তদাররা। তাদের দাবি, কৃষকরা বেশি দাম পাওয়ার জন্য মাল বিক্রি করত না। তবে ভারতীয় পেঁয়াজ প্রবেশে চলতি সপ্তাহে খুচরা বাজারে ৫০ টাকার কমে চলে আসবে বলে মনে করছেন ক্রেতারা।
দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন পর্যন্ত ৪ লাখ ৩৪ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। মঙ্গলবার পর্যন্ত ১ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ দেশের বাজারে ঢুকেছে। ভারত থেকে আনা পেঁয়াজের দাম কেজিতে পড়ছে ১৪ থেকে ১৭ টাকা।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসেও ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছিল পেঁয়াজ। গত মাসে হঠাৎ দাম বাড়তে শুরু করে। তারপর সপ্তাহ ব্যবধানে ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকা কেজি প্রতি বাড়তে থাকে। পাশাপাশি এ মাসেই কোথাও কোথাও সেঞ্চুরি অর্থাৎ ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয় মসলা জাতীয় এ পণ্য।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত দুই বছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে ১০ লাখ টনেরও বেশি। এ বছর দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ টনের বেশি। বর্তমানে মজুত আছে ১৮ লাখ ৩০ হাজার টন। কিন্তু উপযুক্ত সংরক্ষণের অভাবে বা প্রতিকূল পরিবেশের কারণে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৬ থেকে ২৮ লাখ টন।
বর্তমানে এক কেজি দেশি পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ ২৮ থেকে ৩০ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি উন্মুক্ত থাকায় পেঁয়াজ আমদানি বেশি হয়েছিল। তখন দেশি পেঁয়াজের বাজারদর কম ছিল, প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা ছিল। কৃষকেরা কম দাম পেয়েছিলেন। সে জন্য পেঁয়াজ চাষে কৃষকের আগ্রহ ধরে রাখতে এবার আমদানি সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছিল কৃষি মন্ত্রণালয়
২০১৯ সালের নভেম্বরে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতের পর পেঁয়াজের দাম হঠাৎ বেড়ে এক থেকে দুদিনের মধ্যে দেড়শ থেকে ১৮০ টাকায় উঠে যায়। এরপর সপ্তাহ না হতেই দাম বেড়ে আড়াইশ টাকায় উঠে যায় পেঁয়াজের কেজি। বাংলাদেশের ইতিহাসে ওটাই ছিল পেঁয়াজের সর্বোচ্চ দর। নতুন পেঁয়াজ ওঠায় পরে অবশ্য তা কমে আসে।
মাস খানেক ধরে পেঁয়াজের দর ফের বাড়তে থাকে। সপ্তাহ খানেক আগে এর কেজি ১০০ টাকায় গিয়ে ওঠে।
এই দামের লাগাম টেনে ধরতে দুই সপ্তাহ ধরে পেঁয়াজ আমদানির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি চেয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করেছিল। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছিলেন।
শেষ পর্যন্ত গত রোববার পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয় কৃষি মন্ত্রণালয়। সোমবার থেকেই পাশের দেশ ভারতের পেঁয়াজ বিভিন্ন স্থল বন্দর দিয়ে দেশে ঢুকতে শুরু করেছে।
রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কৃষি মন্ত্রণালয় জানায়, পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সীমিত আয়ের, শ্রমজীবী মানুষের কষ্ট লাঘবসহ ভোক্তাদের স্বার্থরক্ষায় পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পেঁয়াজ আমদানি করতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ শাখা থেকে আমদানির অনুমতি বা আইপি নিতে হয়। কৃষকের স্বার্থ বিবেচনা করে পেঁয়াজ আমদানি সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছিল মন্ত্রণালয়।
গত রমজানের পর থেকে দেশের বাজারে হুহু করে বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম। কয়েক দফা বেড়ে দেশের বাজার প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১০০ টাকার বেশি দামে বিক্রি হতে থাকে, পাইকারি বাজারে যা ছিল ৯০ থেকে ৯৫ টাকা পর্যন্ত।
গত বছর চাহিদার চেয়ে অধিক আমদানির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হন পেঁয়াজচাষিরা। তাই চাষিদের পেঁয়াজ চাষে উৎসাহিত করতে এবার পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছিল সরকার।
কমেছে সবজির দাম
বেশ কিছু দিন বাজারে সব ধরনের সবজির দাম বেশ চড়া ছিল। ৮০ টাকার নিচে কোনো সবজি মিলছেল না। এখন অবশ্য তা খানিকটা কমে এসেছে।
শুক্রবার রাজধানীর বাজারগুলোতে বেশিরভাগ সবজি ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে মৌসুম না হওয়ায় দু-একটি সবজি সেগুলো এখনও ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মোহাম্মদপুর কাঁচাবাজারে করলা বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজিতে। শসা ৬০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, কাঁচা কলা প্রতি হালি ৪০ টাকা, বরবটি প্রতি কেজি ৬০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, ঝিঙা ৪০ টাকা, ধুন্দল ৪০ টাকা, গাজর ৮০ টাকা, চাল কুমড়া ও জালি প্রতি পিস ৪০ টাকা, কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, টমেটো ৮০ টাকা, কাঁকরোল ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৪০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
হাতিরপুল বাজারে বাজার করতে আসা চাকরিজীবী রইছ উদ্দিন এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “সবজির দাম বাড়তিই। তবে গত কয়েক সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা কমেছে। কয়েক মাস থেকে গত সপ্তাহ পর্যন্ত ৬০ থেকে ৭০ এর ঘরে ছিল সব সবজির দাম। তবে আজকের বাজারে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়ও কিছু সবজি পাওয়া যাচ্ছে। আবার অনেক সবজি আছে যেগুলো এখনও ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।”
শেওড়াপাড়া বাজারের সবজি বিক্রেতা মারুফ বলেন, “গত কিছুদিন ধরে সবজির যে দাম ছিল, সেই তুলনায় আজ দাম কিছুটা কম। আসলে কিছুদিন আগ পর্যন্ত নতুন করে সবজি উঠছিল না, যা ছিল তা আগের বা পুরাতন গাছের সবজি। নতুন করে কিছু কিছু সবজি উঠতে শুরু করার কারণে দাম কমছে।”
“আমরা যখন যে দামে সবজি কিনি তেমন দামেই বিক্রি করি। কিছুদিন আগে পাইকারি বাজারেই আমাদের বেশি দামে সবজি কেনা লেগেছে, তাই বেশি দামে বিক্রি করেছি। এখন কম দামে কিনতে পারছি, তাই বিক্রিও করছি কম দামে।”
মাছ ও মাংসের দাম খুব একটা হেরফের হয়নি। গত সপ্তাহের চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে।
কমেন্ট