ঢাকায় শোরুম খুলছে নাইকি, অ্যাডিডাস ও লিভাইস
উচ্চবিত্ত-উচ্চ মধ্যবিত্তদের জন্য সুখবর। বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড নাইকি, অ্যাডিডাস ও লিভাইসের সব ধরনের পণ্য হাতের নাগালে চলে আসছে।
পুমার পর বৈশ্বিক স্পোর্টসওয়্যার ব্র্যান্ড নাইকি ও অ্যাডিডাসের বিক্রয়কেন্দ্র চালু হচ্ছে ঢাকায়, সঙ্গে চালু হচ্ছে ডেনিমের বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক লেভি স্ট্রস অ্যাং কোং, যা সংক্ষেপে লিভাইস নামে অধিক পরিচিত।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী ডিবিএলের হাত ধরে ২০১৯ সালে ঢাকায় পুমার যাত্রা শুরু হয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতায় এবার নাইকি, অ্যাডিডাস ও লিভাইসের বিক্রয়কেন্দ্র চালু করছে ডিবিএল।
ডিবিএল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান এম এ রহিম বৃহস্পতিবার প্রথম এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “ইতোমধ্যে নাইকি, অ্যাডিডাস ও লিভাইসের সঙ্গে প্রাথমিক চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে।”
তাদের সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তি হওয়ার পর ঢাকায় বিক্রয়কেন্দ্র খোলার কার্যক্রম শুরু হবে। আগামী ডিসেম্বরে বা জানুয়ারি নাগাদ বিশ্বখ্যাত এই ব্র্যান্ডগুলোর বিক্রয়কেন্দ্র চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিতে বিশ্বে সুপরিচিত এই তিন ব্র্যান্ডের বিক্রয়কেন্দ্র ঢাকায় চালু করবে ডিবিএল গ্রুপ। শুরুতে রাজধানীর বনানীর ১১ নম্বর সড়ক এবং ধানমন্ডির ২৭ নম্বর সড়কে নাইকি ও লিভাইসের দুইটি করে চারটি বিক্রয়কেন্দ্র চালু হতে পারে।
আর গুলশান অ্যাভিনিউয়ে একটি বিক্রয়কেন্দ্র দিয়ে অ্যাডিডাসের যাত্রা শুরু হবে—আপাতত এমন পরিকল্পনার কথাই জানালেন এম এ রহিম।
“আমরা আরও দুই-তিনটি বৈশ্বিক ব্র্যান্ডকে বাংলাদেশে নিয়ে আসার জন্য আলাপ-আলোচনা করছি। আশা করছি সেক্ষেত্রেও সফল হবো।”
তবে সেগুলো চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত নাম প্রকাশ করতে চাননি তিনি।
২০১৯ সালের এপ্রিলে বনানীর ১১ নম্বর সড়কে পুমার প্রথম বিক্রয়কেন্দ্র উদ্বোধন হয়। পরবর্তী সময়ে ধানমন্ডি, বসুন্ধরা শপিং সিটি ও চট্টগ্রামে পুমার বিক্রয়কেন্দ্র চালু হয়। আগামী বছর উত্তরায় এই ব্র্যান্ডের নতুন একটি বিক্রয়কেন্দ্র উদ্বোধন হবে।
ডিবিএল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান এম এ রহিম বলেন, “বাংলাদেশে পুমা এখন লাভজনক প্রতিষ্ঠান। এই ব্র্যান্ডের ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা দামের স্নিকার বা কেডস প্রতিনিয়তই বিক্রি হচ্ছে। কারণ, বাংলাদেশের অর্থনীতি বড় হয়েছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। পুমা সফল হওয়ার কারণেই আমরা নাইকি ও অ্যাডিডাসের মতো ব্র্যান্ডকে বাংলাদেশে নিয়ে আসছি।”
বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড পুমা বর্তমানে ১২০টির বেশি দেশে ব্যবসা করছে। তাদের কর্মীর সংখ্যা ২০ হাজার। রুডলফ ডেসলার নামের একজন জার্মান ১৯৪৮ সালে পুমা ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করেন।
মজার বিষয় হচ্ছে, রুডলফের বড় ভাই অ্যাডলফ ডেসলার খেলার সামগ্রীর আরেক বিখ্যাত ব্র্যান্ড অ্যাডিডাসের প্রতিষ্ঠাতা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে দুই ভাই মিলে ডেসলার ব্রাদার্স সু ফ্যাক্টরি নামে একটি জুতার কারখানা চালাতেন।
জার্মানিভিত্তিক অ্যাডিডাসের বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দুই হাজারের বেশি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। তাদের কর্মীর সংখ্যা প্রায় ৫৯ হাজার। গত বছর তারা ৪১ কোটি ৯০ লাখ জোড়া জুতা, ৪৮ কোটি ২০ লাখ পিস পোশাক এবং ১১ কোটি ৭০ লাখ পিস বিভিন্ন ধরনের খেলার সামগ্রী উৎপাদন করেছে। গত বছর অ্যাডিডাসের বিক্রি ছিল ২ হাজার ২৫১ কোটি ইউরো।
অন্যদিকে নাইকির প্রতিষ্ঠা ১৯৬৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে। ১৯৭২ সালে তারা জুতার ব্র্যান্ড হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। বর্তমানে বিশ্বের ৮০টি দেশে তাদের বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে প্রায় ২ হাজার ২০০টি। গত বছর ৪ হাজার ৬৭১ কোটি ডলার আয় করেছে নাইকি। প্রতিবেশী দেশ ভারতে নাইকির একশ’র বেশি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে।
১৮৫৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে লেভি স্ট্রস অ্যান্ড কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন লেভি স্ট্রস। ১৮৭৩ সালে প্রতিষ্ঠানটি ব্লু জিনস তৈরি করার উদ্যোগ নেয়। ১৮৮৬ সালে লিভাইস তাদের প্যান্টে দুই ঘোড়াসংবলিত লোগো ব্যবহার শুরু করে, যা পরে খুব পরিচিতি পায়। পরে যদিও তাদের লোগো পরিবর্তন হয়। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লিভাইসের ২ হাজার ৮০০টি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে।
লিভাইসের বিক্রয়কেন্দ্র চালু করার বিষয়ে এম এ রহিম বলেন, “লিভাইস ১০০ বছরের পুরোনো কোম্পানি। আমাদের দেশ থেকে অনেকেই লিভাইসের প্যান্ট কিনতে ভারত, ব্যাংকক কিংবা সিঙ্গাপুরে যান। ফলে দেশে লিভাইসের বিক্রয়কেন্দ্র হলে অনেককেই আর দেশের বাইরে যেতে হবে না, তারা দেশেই শপিং করতে পারবেন।”
বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডগুলো দেশে বিক্রয়কেন্দ্র খুললে দেশীয় প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতায় পড়বে কি না এমন প্রশ্নে রহিম বলেন, “আমরা মনে করি, এতে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো উপকৃত হবে। কারণ, বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডগুলোর পণ্য দেখে আমাদের দেশের উদ্যোক্তারা তাদের পণ্যের মান ও নকশার উন্নয়ন করতে পারবেন।”
এর ফলে স্থানীয় পণ্যের বিক্রি বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের বাজারে এসব বৈশ্বিক ব্র্যান্ডের প্রবেশ এদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বিপুল সম্ভাবনার প্রতি তাদের আস্থারই প্রতিফলন। গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি দ্রুতলয়ে বেড়েছে। সেই সুবাদে, বর্তমানে দেশে সচ্ছল ও মধ্যবিত্ত ভোক্তার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩ কোটি।
এদিকে বাংলাদেশের বাজারে বর্তমানে নাইকি ও অ্যাডিডাসের কিছু পণ্য পাওয়া গেলেও –সেগুলোর দাম অনেক বেশি।
যেমন-১০০০ টাকা মূল্যছাড় দেওয়ার পরও পুরুষদের জন্য অ্যাডিডাসের অ্যাডিজিরো সিলেক্ট স্নিকার ১৮,৯৯৯ টাকায় বিক্রি করছে বাটা। অথচ একই স্নিকারের দাম ৮৮ ইউরোর কম। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৯,১৫০ টাকা বা বাটার বিক্রয়মূল্যের অর্ধেকেরও কম।
নাইকি, অ্যাডিডাস ও পুমার প্রধান পণ্যসামগ্রী হলো জুতা বা বিশেষত স্পোর্টস সু। এছাড়া তারা স্পোর্টসওয়্যার, ব্যাগ, ক্যাপসহ অন্যান্য পোশাক পণ্য বিক্রি করে।
কমেন্ট