বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে

শুক্রবার উল্টো পথে হাটা শুরু করে তেলের বাজার; দুই ধরনের তেলের দামই বেশ খানিকটা কমেছে। ফাইল ছবি

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামে ‘অদ্ভুদ’ আচরণ করছে; এই বাড়ছে তো; ওই কমছে। 

বিশ্বের বৃহত্তম তেল রপ্তানিকারক সৌদি আরব ও রাশিয়া সরবরাহ কমানোর ঘোষণা দেওয়ার পর গত কয়েক দিন ধরেই চড়ছিল তেলের বাজার।

বাড়তে বাড়তে বৃহস্পতিবার  প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচারের দাম ৮২ ডলারে গিয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে ইউএস ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ক্রুড ৭৭ ডলার ছাড়িয়ে যায়। যা ছিল দুই মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

শুক্রবার উল্টো পথে হাটা শুরু করে তেলের বাজার; দুই ধরনের তেলের দামই বেশ খানিকটা কমেছে। শুক্রবার বাংলাদেশ সময় রাত ২টায় প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচারের দাম ১ ডলার ৭০ সেন্ট কমে ৮০ ডলারের নিচে, ৭৯ ডলার ৬৬ সেন্টে নেমে এসেছে। শতাংশ হিসাবে কমেছে ২ দশমিক শূন্য নয় শতাংশ। 

ইউএস ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ক্রুডের দাম কমেছে ২ দশমিক ১৬ শতাংশ বা ১ ডলার ৬৬ সেন্ট। প্রতি ব্যারেল ৭৫ ডলার ২৩ সেন্টে বিক্রি হচ্ছে। খবর রয়টার্সের। 

আগের ক্ষতি পোষানোর জন্য সৌদি আরব ও রাশিয়া সরবরাহ কমিয়ে দাম বাড়ানোর কৌশল গ্রহণ করায় দাম বেড়েছিল বলে জানিয়েছেন জ্বলানি বিশ্লেষকরা। ডলারের বিনিময় হার হ্রাসের প্রভাবও তেলের দাম বাড়ার উপর পড়েছিল। 

ডলারের বিনিময় হার কমার কারণে আমদানিকারক দেশগুলোয় তেলের চাহিদা বেড়ে যায়। স্বাভাবিক নিয়মেই বেড়ে যায় দর। 

জ্বালানি খাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান এগেইন  ক্যাপিটাল এলএলসি’র অংশীদার জন কিল্ডফ বলেন, “শুক্রবার জ্বালানি তেলের দাম যেটা কমেছে, সেটা মূলত ডলার শক্তিশালী হওয়ার কারণে কমেছে। এছাড়া তেল ব্যবসায়ীরা তাদের বিনিয়োগ থেকে মুনাফা তুলে নেওয়ার কারণে কমেছে। যেটাকে 'প্রফিট টেকিং' বলে।” 

বিশ্ববাজারে যখন জ্বালানি তেলের দাম গড়ে প্রতি ব্যারেল ১০০ ডলারের কাছাকাছি ওঠানামা করছিল, ঠিক তখন বাংলাদেশে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম একলাফে ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৫১ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়।  

গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার ডিজেল ও কেরোসিনের প্রতি লিটারের দাম ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা, পেট্রল ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা আর অকটেন ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করে। এর পর থেকেই বাস, ট্রাক, অ্যাপের প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, লঞ্চ ও হিউম্যান হলারের ভাড়া বেড়ে যায়। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আগে থেকেই বাড়তি ছিল, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে তা আরও একদফা বাড়ে।  

সরকারের মন্ত্রীরা অবশ্য বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে দেশেও জ্বালানি তেলের দাম কমানো হবে। এরপর আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কিছুটা কমলে দেশের বাজারে লিটারে মাত্র পাঁচ টাকা কমানো হয়।  

২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। করোনা মহামারির মধ্যেও টানা বেড়েছে তেলের দাম। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় তা আরও ঊর্ধ্বমুখী হয়। 

২০২১ সালের অক্টোবরের শেষ দিকে দুই ধরনের তেলের দামই ৮০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। সে সময় বাংলাদেশ সরকারও ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে নতুন দর ৮০ টাকা নির্ধারণ করে।  

গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করলে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে তেলের দাম। একপর্যায়ে প্রতি ব্যারেল ১৩৯ ডলারে গিয়ে ঠেকেছিল। এরপর থেকে বিভিন্ন উদ্যোগে ওঠানামার মধ্যেই তেলের দর ১১০ থেকে ১১৫ ডলারের মধ্যে ছিল। 

মে মাসের শেষের দিকে তেলের দাম বেড়ে ১২০ ডলার ছাড়িয়ে যায়।  

এর পর থেকে অবশ্য তেলের দাম নিম্মমূখীই ছিল। কমতে কমতে গত জুন মাসে দুই ধরনের তেলের ব্যারেলই ৭০ ডলারের নিচে নেমে আসে।  

২০২০ সালের করোনা মহামারির শুরুতে সারা বিশ্বে যখন লকডাউন চলছিল, তখন জ্বালানি তেলের দাম মাইনাস ৩৭ ডলারে নেমে এসেছিল। অর্থাৎ এক ব্যারেল তেল কিনলে ক্রেতাকে উল্টো ৩৭ ডলার দেয়া হয়েছে। এরপর ওপেক ও রাশিয়া ধারাবাহিকভাবে তেল সরবরাহ কমিয়ে মূল্যবৃদ্ধি করে।  

২০২০ সালের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক বাজারে গড়ে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ছিল ৪২ ডলার। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ছিল ৪৯ ডলার। এরপর থেকে গড়ে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ছিল ফেব্রুয়ারিতে ৫৩ ডলার, মার্চে ৬০, এপ্রিলে ৬৫, মে-তে ৬৪, জুনে ৬৬, জুলাইয়ে ৭৩ এবং আগস্টে ৭৪ ডলার। 

অক্টোবরে এই দাম ৮৫ ডলারে ওঠে। সে সময়ই দেশের বাজারে তেলের দাম বাড়ানো হয়।  

এরপর অবশ্য তেলের দাম খানিকটা কমে আসে। যুদ্ধের কারণে ফের তা বাড়তে থাকে। ইউক্রেনে রুশ হামলার সঙ্গে সঙ্গে তেলের দাম ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়।

বেশি দামে কাঁচা মরিচ বিক্রি: স্বপ্ন ও মীনা বাজারকে জরিমানা পরবর্তী

বেশি দামে কাঁচা মরিচ বিক্রি: স্বপ্ন ও মীনা বাজারকে জরিমানা

কমেন্ট

এই সংক্রান্ত আরও খবর