বাড়ছে গমের দাম, উদ্বিগ্ন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা

বাড়ছে গমের দাম, উদ্বিগ্ন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা

বুধবার ইউরোপের বাজারে গমের দাম আগের দিনের থেকে ৮ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। দাম বাড়ার পর প্রতি টন গম এখন বিক্রি হচ্ছে ২৫৩ দশমিক ৭৫ ইউরোতে।

শস্যচুক্তি বা ব্ল্যাক সি গ্রেইন ইনিশিয়েটিভ (বিএসজিআই) চুক্তি নয়ায়ন না হওয়ায় বিশ্ববাজারে গমের দাম হু হু করে বাড়ছে। বিবিসি বলেছে, বুধবার ইউরোপের বাজারে গমের দাম আগের দিনের থেকে ৮ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। দাম বাড়ার পর প্রতি টন গম এখন বিক্রি হচ্ছে ২৫৩ দশমিক ৭৫ ইউরোতে। এছাড়া ভুট্টার দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ।

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে গমের দাম এক লাফে বেড়েছে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। যা ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর থেকে দেশটিতে একদিনে সর্বোচ্চ মূল্যবৃদ্ধি। 

এদিকে বিএসজিআই চুক্তি নয়ায়ন না হওয়ায় গমের দাম বাড়তে থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ী নেতারা। বিশ্বজুড়ে মানব বিপর্যয় এড়াতে এই চুক্তি অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। 

বুধবার বাংলাদেশের ছয়টি শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী সংগঠন এক যৌথ বিবৃতিতে এ আহ্বান জানিয়ে বলেছে, ১৭ জুলাই থেকে ব্ল্যাক সি গ্রেইন ইনিশিয়েটিভ চুক্তি রাশিয়ার বন্ধ করার সিদ্ধান্তের কারণে গমের সুষ্ঠু সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার আশংকা এবং বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষের খাদ্য ঘাটতির বিষয়ে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন। 

বিবৃতিতে বলা হয়, “বিএসজিআই চুক্তি নবায়ন না হলে শুধু মানবিক বিপর্যয় ঘটবে না, বরং বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতিও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। বিএসজিআইয়ের অধীনে ৩২ মিলিয়ন মেট্রিক টন খাদ্যসামগ্রী ৩টি ইউক্রেনীয় বন্দর থেকে ৩টি মহাদেশের ৪৫টি দেশে রপ্তানি করা হয়েছে। এর ফলে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর গম আমদানির পরিমাণ যুদ্ধ-পূর্ব সময়ের তুলনায় অনেকাংশে অপরিবর্তিত ছিল। কিন্তু রাশিয়া এই চুক্তির মেয়াদ না বাড়ানোর কারণে আফগানিস্তান, ইথিওপিয়া, কেনিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ইয়েমেনে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির মানবিক কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে ব্যাহত হবে এবং লাখ লাখ মানুষ, বিশেষ করে শিশুরা খাদ্যঘাটতির শিকার হবে।” 

“ইউক্রেনীয় এবং রাশিয়ান খাদ্য ও সার রপ্তানি অব্যাহত রাখা বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ,” বলা হয় বিবৃতিতে। 

এই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা জোরালোভাবে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার সমর্থন করেন। কারণ, রাশিয়া থেকে অর্থ প্রেরণ, বিমা এবং রাশিয়ার নিজস্ব কৃষিপণ্য রপ্তানিতে বর্তমানে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের মাধ্যমে বিএসজিআই চুক্তির নবায়ন বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তার জন্য অত্যাবশ্যক। 

বিবৃতিতে সই করেছে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিন, ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি) বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার সামীর সাত্তার, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, ঢাকার (এমসিসিআই) সভাপতি সাইফুল ইসলাম, চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম এবং ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআই) সভাপতি নাসের এজাজ বিজয়।

আইসিসি বাংলাদেশ অফিস থেকে বিবৃতিটি পাঠানো হয়। 

এর আগে গত ১১ জুলাই এই ছয় ব্যবসায়ী সংগঠন এক যৌথ বিবৃতিতে এই চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে জোরালোভাবে চেষ্টা চালাতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আবেদন জানিয়েছিল। 

ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, বিএসজিআই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের খাদ্যনিরাপত্তার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ লাইফলাইন। এই চুক্তি নবায়ন না হলে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ঝুঁকির মুখোমুখি হবে। 

আগের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বিএসজিআই এখন পর্যন্ত তিনটি ইউক্রেনীয় বন্দর থেকে তিনটি মহাদেশের ৪৫টি দেশে ৩ কোটি ২০ লাখ মেট্রিক টনের বেশি খাদ্যসামগ্রী রপ্তানির সুযোগ তৈরি করেছে। এর মাধ্যমে স্বল্পোন্নত অর্থনীতিতে রপ্তানি করা গমের পরিমাণ যুদ্ধের আগের তুলনায় অনেকাংশে অপরিবর্তিত রয়েছে। 

খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই চুক্তির প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে রাশিয়া থেকে খাদ্য ও সার রপ্তানির বৃদ্ধি পাওয়ায় গত বছরের মার্চ থেকে বিশ্বব্যাপী খাদ্যের দাম ২২ শতাংশ কমেছে।   

জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠান বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি বিএসজিআই ব্যবস্থার আওতায় ইউক্রেন থেকে ২০২১ সালের মতো একই পরিমাণ, অর্থাৎ সাত লাখ টন গম কিনেছে। এই শস্য আফগানিস্তান, ইথিওপিয়া, কেনিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ইয়েমেনে তাদের মানবিক কার্যক্রমে সহায়তা করছে। 

ইউক্রেন ও রাশিয়ার খাদ্য ও সার রপ্তানির অব্যাহত সুবিধা সে কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্যনিরাপত্তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফলে এই চুক্তি নবায়ন না হলে তা বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষের জন্য খাদ্যের প্রাপ্যতা এবং ক্রয়ক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে হুমকির সম্মুখীন করবে।   

“এটা হবে এমন এক পরিস্থিতি যার সত্যিকার অর্থে সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সবার ওপরে একটি মানবিক পরিণতি থাকবে।”   

গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরু করার পর দেশটি থেকে শস্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। এতে বিভিন্ন দেশে খাদ্যসংকট তৈরির শঙ্কা দেখা দিলে গত বছরের ২২ জুলাই জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় ইউক্রেনের তিনটি বন্দর দিয়ে নিরাপদে শস্য রপ্তানিতে দুই দেশের মধ্যে বিএসজিআই চুক্তি হয়।   

চুক্তির পর গত বছরের ১ আগস্ট ইউক্রেন থেকে শস্য রপ্তানি শুরু হয়। এর আগে কয়েক দফায় এই চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে।

  

কৃষ্ণসাগরে ইউক্রেনের বন্দরগুলো অবরুদ্ধ করে রেখেছে রাশিয়া। চুক্তি নবায়ন না হওয়ায় ইউক্রেনের বন্দর থেকে কোনো শস্যবাহী জাহাজ বিশ্বের কোনো দেশে যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছে না রাশিয়া। কৃষ্ণসাগর এড়িয়ে সাগরপথে বিকল্প কোনো রুট নেই ইউক্রেনের। 

বিশ্বজুড়ে বাড়ছে গমের দাম 

এদিকে চুুক্তি নবায়ন না হওয়ায় বিশ্ববাজারে গমের দাম বাড়তে শুরু করেছে। বিবিসি জানিয়েছে, বুধবার ইউরোপের বাজারে গমের দাম আগের দিনের থেকে ৮ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। দাম বাড়ার পর প্রতি টন গম এখন বিক্রি হচ্ছে ২৫৩ দশমিক ৭৫ ইউরোতে। এছাড়া ভুট্টার দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। 

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে গমের দাম এক লাফে বেড়েছে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। যা ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর থেকে দেশটিতে একদিনে সর্বোচ্চ মূল্য বৃদ্ধি। 

ইউক্রেনের কৃষিমন্ত্রী মাইকোলা সোলস্কি বলেছেন, ওডেসা বন্দরে রাশিয়ার হামলায় ৬০ হাজার টন শস্য ধ্বংস হয়ে গেছে এবং শস্য রপ্তানি অবকাঠামোর উল্লেখযোগ্য অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

মূলত শস্য চুক্তি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মঙ্গলবার ভোরে ইউক্রেনের বন্দরগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা শুরু করে রাশিয়া। 

ম্যারেক্স ক্যাপিটাল বিশ্লেষক চার্লি সারনাটিঙ্গার বলেছেন, চলমান যুদ্ধে এই ধরনের উত্তেজনা বৃদ্ধি ও হামলার হুমকি ‘কৃষ্ণসাগর দিয়ে সমুদ্রপথে সকল ধরনের শস্যের চালান বন্ধ করে দিতে পারে। আর তেমনটি হলে যুদ্ধের শুরুতে যে চিত্র দেখা গিয়েছিল এখনও সেই একই পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। 

এ/সি ট্রেডিংয়ের প্রেসিডেন্ট জিম গারলাচ বলেছেন, “ইউক্রেনের পরিস্থিতি আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। সেখানে সত্যিকার অর্থেই ভয়াবহ হামলা চলছে এবং কেউ এর মাঝখানে যাবে না। এই অঞ্চলটি ইউরোপের রুটির ঝুড়ি এবং জাহাজগুলোকে সেখান থেকে সরিয়ে রাখা হচ্ছে।” 

বিবিসি বলছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন বুধবার শস্য চুক্তিকে পশ্চিমা দেশগুলো ‘রাজনৈতিক ব্ল্যাকমেইল’ হিসাবে ব্যবহার করার বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। এছাড়া ইউক্রেন ‘যুদ্ধের উদ্দেশ্যে’ কৃষ্ণসাগরের শস্য করিডোর ব্যবহার করেছে বলেও অভিযোগও করেছে মস্কো।

থাইল্যান্ডের মত ‘শুকনো ফল’ দেখতে চান প্রধানমন্ত্রী পরবর্তী

থাইল্যান্ডের মত ‘শুকনো ফল’ দেখতে চান প্রধানমন্ত্রী

কমেন্ট

এই সংক্রান্ত আরও খবর