জ্বালানি তেলের দাম ফের বাড়ছে, ৩ মাসে সর্বোচ্চ

জ্বালানি তেলের দাম ফের বাড়ছে, ৩ মাসে সর্বোচ্চ

প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচারের দাম ৮০ ডলার ছাড়িয়ে প্রায় ৮৪ ডলারে উঠেছে। আর ইউএস ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ক্রুডের দাম উঠেছে প্রায় ৮০ ডলারে।

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ফের বাড়ছে। প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচারের দাম ৮০ ডলার ছাড়িয়ে প্রায় ৮৪ ডলারে উঠেছে। আর ইউএস ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ক্রুডের দাম উঠেছে প্রায় ৮০ ডলারে। 

এই দাম তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এপ্রিলের মাঝামাাঝি সময়ের পর বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল দাম এত উচ্চতায় উঠেনি বলে জানিয়েছে রয়টার্স। 

গত ৩ জুলাই বিশ্বের বৃহত্তম তেল রপ্তানিকারক সৌদি আরব ও রাশিয়া সরবরাহ কমানোর ঘোষণা দেওয়ার পর  থেকেই চড়ছিল তেলের বাজার। বাড়তে বাড়তে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচারের দাম ৮২ ডলারে গিয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে ইউএস ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ক্রুড ৭৭ ডলার ছাড়িয়ে যায়।  

কিন্তু ১৫ জুলাই থেকে উল্টো পথে হাটা শুরু করে তেলের বাজার; দুই ধরনের তেলের দামই বেশ খানিকটা কমতে থাকে। ১৮ জুলাই প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচারের দাম কমে ৭৮ ডলার ৫৯ সেন্টে নেমে আসে। ইউএস ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ক্রুডের দাম নেমে আসে ৭৪ ডলার ২৫ সেন্টে বিক্রি হচ্ছে। 

জ্বালানি খাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান এগেইন  ক্যাপিটাল এলএলসি’র অংশীদার জন কিল্ডফ ওই সময় বলেছিলেন, “জ্বালানি তেলের দাম যেটা কমেছে, সেটা মূলত ডলার শক্তিশালী হওয়ার কারণে কমেছে। এছাড়া তেল ব্যবসায়ীরা তাদের বিনিয়োগ থেকে মুনাফা তুলে নেওয়ার কারণে কমেছে। যেটাকে 'প্রফিট টেকিং' বলে।”

কিন্তু গত সোমবার থেকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ফের বাড়তে শুরু করেছে। মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১২টায় প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচারের দাম ১ ডলার ৬ সেন্ট বেড়ে ৮৩ ডলার ৮০ সেন্টে উঠেছে। শতাংশ হিসাবে বেড়েছে ১ দশমিক ২৮ শতাংশ।   

ইউএস ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ক্রুডের দাম বেড়েছে ১ দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ বা ১ ডলার ৮ সেন্ট। প্রতি ব্যারেল ৭৯ ডলার ৮২ সেন্টে বিক্রি হচ্ছে। 

ওপেক ও এর সহযোগী দেশগুলো আবারও তেলের উৎপাদন হ্রাস করার বিষয়ে আলোচনা করছে। এর আগেই বিশ্বের বৃহত্তম তেল রপ্তানিকারক সৌদি আরব ও রাশিয়া সরবরাহ কমানোর ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। এতে সরবরাহ কমে যেতে পারে এ আশঙ্কায় বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। 

 এছাড়া বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের অর্থনীতি চাঙ্গা করতে দেশটির সরকারের নানা পদক্ষেপের ঘোষণাও তেলের দাম বাড়াচ্ছে বলে মনে করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। 

তারা বলছেন, চীনের অর্থনীতি চাঙ্গা হলে দেশটিতে তেলের চাহিদা বাড়বে। তার প্রভাব পড়বে দামে। 

বাংলাদেশর বাজার 

বিশ্ববাজারে যখন জ্বালানি তেলের দাম গড়ে প্রতি ব্যারেল ১০০ ডলারের কাছাকাছি ওঠানামা করছিল, ঠিক তখন বাংলাদেশে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম একলাফে ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৫১ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়।    

গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার ডিজেল ও কেরোসিনের প্রতি লিটারের দাম ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা, পেট্রল ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা আর অকটেন ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করে।  

এর পর থেকেই বাস, ট্রাক, অ্যাপের প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, লঞ্চ ও হিউম্যান হলারের ভাড়া বেড়ে যায়। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আগে থেকেই বাড়তি ছিল, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে তা আরও একদফা বাড়ে।    

সরকারের মন্ত্রীরা অবশ্য বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে দেশেও জ্বালানি তেলের দাম কমানো হবে। এরপর আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কিছুটা কমলে দেশের বাজারে লিটারে মাত্র পাঁচ টাকা কমানো হয়।   

২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। করোনা মহামারির মধ্যেও টানা বেড়েছে তেলের দাম। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় তা আরও ঊর্ধ্বমুখী হয়।   

২০২১ সালের অক্টোবরের শেষ দিকে দুই ধরনের তেলের দামই ৮০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। সে সময় বাংলাদেশ সরকারও ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে নতুন দর ৮০ টাকা নির্ধারণ করে।

    

গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করলে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে তেলের দাম। একপর্যায়ে প্রতি ব্যারেল ১৩৯ ডলারে গিয়ে ঠেকেছিল। এরপর থেকে বিভিন্ন উদ্যোগে ওঠানামার মধ্যেই তেলের দর ১১০ থেকে ১১৫ ডলারের মধ্যে ছিল।   

মে মাসের শেষের দিকে তেলের দাম বেড়ে ১২০ ডলার ছাড়িয়ে যায়।    

এর পর থেকে অবশ্য তেলের দাম নিম্মমূখীই ছিল। কমতে কমতে গত জুন মাসে দুই ধরনের তেলের ব্যারেলই ৭০ ডলারের নিচে নেমে আসে। 

২০২০ সালের করোনা মহামারির শুরুতে সারা বিশ্বে যখন লকডাউন চলছিল, তখন জ্বালানি তেলের দাম মাইনাস ৩৭ ডলারে নেমে এসেছিল। অর্থাৎ এক ব্যারেল তেল কিনলে ক্রেতাকে উল্টো ৩৭ ডলার দেয়া হয়েছে। এরপর ওপেক ও রাশিয়া ধারাবাহিকভাবে তেল সরবরাহ কমিয়ে মূল্যবৃদ্ধি করে।    

২০২০ সালের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক বাজারে গড়ে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ছিল ৪২ ডলার। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ছিল ৪৯ ডলার। এরপর থেকে গড়ে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ছিল ফেব্রুয়ারিতে ৫৩ ডলার, মার্চে ৬০, এপ্রিলে ৬৫, মে-তে ৬৪, জুনে ৬৬, জুলাইয়ে ৭৩ এবং আগস্টে ৭৪ ডলার।   

অক্টোবরে এই দাম ৮৫ ডলারে ওঠে। সে সময়ই দেশের বাজারে তেলের দাম বাড়ানো হয়।    

এরপর অবশ্য তেলের দাম খানিকটা কমে আসে। যুদ্ধের কারণে ফের তা বাড়তে থাকে। ইউক্রেনে রুশ হামলার সঙ্গে সঙ্গে তেলের দাম ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়।

সোনার ভরি ১৫৪ থেকে লাখ টাকা ছাড়ানোর গল্প পরবর্তী

সোনার ভরি ১৫৪ থেকে লাখ টাকা ছাড়ানোর গল্প

কমেন্ট

এই সংক্রান্ত আরও খবর