‘বিপুল ঋণের বোঝা’য় কমেছে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণমান
দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণমান এক ধাপ কমিয়ে দিয়ে হইচই ফেলে দিয়েছে ফিচ রেটিংস। এ নিয়ে বিতর্ক উঠেছে, হোয়াইট হাউস ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ফিচ তাদের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে বলেছে, নতুন ঋণমান নির্ধারণে তাদের বিবেচনার বিষয় ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ‘বিপুল ঋণের বোঝা’। ছবি: রয়টার্স
বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি এবং শক্তিধর রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের ঋণমান কমিয়েছে আন্তর্জাতিক ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা ফিচ রেটিংস। আর এ নিয়ে দেশটিতে এখন তুলকালাম কাণ্ড ঘটে চলেছে।
দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণমান এক ধাপ কমিয়ে দিয়ে হইচই ফেলে দিয়েছে ফিচ রেটিংস। এ নিয়ে বিতর্ক উঠেছে, হোয়াইট হাউস ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ফিচ তাদের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে বলেছে, নতুন ঋণমান নির্ধারণে তাদের বিবেচনার বিষয় ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ‘বিপুল ঋণের বোঝা’।
মার্কিন এই ঋণমান নির্ধারণে মুখ্য ভূমিকা রেখেছেন রিচার্ড ফ্রান্সিস। ফিচের এই প্রধান বিশ্লেষক সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “যা বলার সংখ্যাই বলছে।”
যুক্তরাষ্ট্রের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় জাতীয় ঋণের হার হলো ১১৩ শতাংশ, যাকে ফ্রান্সিস বর্ণনা করেছেন ‘স্পষ্টতই বড় উদ্বেগ’ হিসেবে।
ফিচের খাতায় আমেরিকার ঋণমান ছিল ‘এএএ’, যাকে বলা হয় নিখুঁত ঋণমান। ফিচ এখন তা কমিয়ে করেছে ‘এএপ্লাস’। রিচার্ড ফ্রান্সিসের মূল উদ্বেগের জায়গাটি হলো যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল ও ক্রমবর্ধমান রাজস্ব ঘাটতি এবং সুদের হার বেড়ে যাওয়ার কারণে দেশটির ঋণ পরিশোধের জন্য পাহাড়সম খরচ।
ফিচ, মুডিস ও এসঅ্যান্ডপির মতো আন্তর্জাতিক ঋণমান সংস্থাগুলো প্রায়ই উন্নয়নশীল দেশের ঋণমান হ্রাস-বৃদ্ধি করে। তবে এবারে খোদ যুক্তরাষ্ট্রের ঋণমান হ্রাস করেছে ফিচ রেটিংস। আর এই ঘটনায় হোয়াইট হাউস ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। সেই সঙ্গে বিনিয়োগকারীরাও বিস্মিত হয়েছেন।
গত ২৬ জুলাই বাংলাদেশবিষয়ক ঋণমান আভাস বা রেটিং আউটলুক কমিয়েছে আন্তর্জাতিক ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল। তাদের দৃষ্টিতে বাংলাদেশ এত দিন ছিল স্থিতিশীল, কিন্তু এখন তারা তা কমিয়ে বাংলাদেশের জন্য ‘নেতিবাচক’ ঋণমান নির্ধারণ করেছে।
এর আগে চলতি বছরের ৩১ মে আন্তর্জাতিক ঋণমান যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান মুডি’স ইনভেস্টর সার্ভিস দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের ঋণমান কমানোর কথা ঘোষণা দেয়।
ঋণমান নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বিশ্বে তিন প্রতিষ্ঠানকে সম্মিলিতভাবে ‘বিগ-থ্রি’ বলা হয়। এর মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠানই বাংলাদেশের ঋণমান কমার কথা বলেছে। তবে ফিচ রেটিংস চলতি বছরে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশকে নিয়ে কিছু প্রকাশ করেনি।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঋণমান কমানোর কয়েক মিনিটের মধ্যেই হোয়াইট হাউস, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং কিছু নেতৃস্থানীয় অর্থনীতিবিদ এই সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেন। অর্থমন্ত্রী ইয়েলেন জেনেট একে ‘স্বেচ্ছাচারী ও পুরোনো তথ্যের ওপর ভিত্তি করে করা’ বলে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ফিচ যেসব সূচকের ওপর নির্ভর করে তাদের সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে, তার অনেকগুলোতে অগ্রগতি হয়েছে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা জেসন ফারম্যান ফিচের সিদ্ধান্তকে ‘পুরোপুরি অবাস্তব’ হিসেবে বর্ণনা করেন। আর সুপরিচিত অর্থনীতিবিদ ল্যারি সামার্স বলেন, ঋণমান কমানো ‘অদ্ভুত ও উটকো’ পদক্ষেপ এবং এটা এমন সময় এসেছে, যখন অর্থনীতি প্রত্যাশার চেয়ে ভালো করছে।
এর জবাবে রিচার্ড ফ্রান্সিস বলেন, আগামী কয়েক মাসে অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি কী হবে, শুধু তা দেখে ঋণমান কমানো হয়নি, বরং এ ক্ষেত্রে আরও গভীরভাবে চিন্তা করা হয়েছে।
রিচার্ড ফ্রান্সিস আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আগামী মাসগুলোতে একটি মৃদু মন্দায় পড়বে, না কি তা সামান্য ব্যবধানে এড়িয়ে যাবে, ‘কেবল তার কারণেই কাটা নড়েনি’।
কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া আরও কঠিন হয়েছে
আর্থিক খাতে যে অব্যবস্থাপনা আছে, তার বাইরেও চিন্তা করেছেন রিচার্ড ফ্রান্সিস। বিশেষ করে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অর্থনীতির এই দেশের রাজনীতির অবস্থা তাকে বেশি উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি গত ২০ বছরে শাসনব্যবস্থার অবনমন হয়েছে। সেই কারণে আমাদের আস্থা কমে গেছে যে শেষ পর্যন্ত সরকার রাজস্বের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে পারবে।’
এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে সামাজিক নিরাপত্তা ও চিকিৎসাসেবা–সংক্রান্ত দীর্ঘদিন ধরে সমস্যা। এসবের সমাধানের জন্য প্রয়োজন হতে পারে রাজনৈতিকভাবে অজনপ্রিয় পদক্ষেপ নেওয়া এবং সমঝোতার পথে হাঁটা। ফ্রান্সিস উল্লেখ করেন, কংগ্রেসের বাজেট অফিস জানিয়েছে যে সামাজিক নিরাপত্তা তহবিল ২০৩৩ সালের মধ্যে কমে যাবে।
রাজনীতির ‘দুই দিকেই যে মেরুকরণ’ ঘটেছে, সে ব্যাপারে সতর্ক করেন রিচার্ড ফ্রান্সিস।
“ডেমোক্র্যাটরা বাঁয়ে সরেছেন। রিপাবলিকানরা অবশ্যই আরও ডানে ঝুঁকেছেন। আর মধ্যপন্থা ধসে পড়েছে। এসবের কারণে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া আরও কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং হয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ সত্যিকারভাবে মোকাবিলার জন্য আমরা খুব কম আগ্রহ দেখছি,” বলেন তিনি।
আর্থিক ক্ষেত্রে সমস্যার জন্য দুই দলেরই দায় রয়েছে
প্রেসিডেন্ট বাইডেন নির্বাচিত হওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের মার্কিন কংগ্রেসে হামলার ঘটনা ফিচের ঋণমান কমানোর সিদ্ধান্তে কতটা ভূমিকা রেখেছে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে রিচার্ড ফ্রান্সিস বলেন যে এটা তাদের সিদ্ধান্তের পেছনে ‘খুব বেশি’ ভূমিকা রাখেনি।
তবে রিচার্ড ফ্রান্সিস বলেন, “এটা কেবল পরিষ্কারভাবে দেখিয়েছে যে রাজনৈতিক মেরুকরণ কতটা মারাত্মক হয়েছে। এটা আরও দেখিয়েছে যে সার্বিকভাবে শাসনব্যবস্থার অবনমন ঘটেছে।”
ঋণসীমা নিয়ে যে দফায় দফায় দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে অচলাবস্থা তৈরি হয়, তা এ ক্ষেত্রে আরেকটি উদাহরণ বলে মনে করেন তিনি।
সিএনএন এর আগে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল যে ঋণমানে সম্ভাব্য পতন নিয়ে ফিচ মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছিল এবং সেই আলোচনায় ৬ জানুয়ারির ঘটনাকে একটি উদ্বেগ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছিল। রিচার্ড ফ্রান্সিস সাক্ষাৎকারে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
মঙ্গলবারের ওই সন্ধ্যাতেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এক মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়। ২০২০ সালের নির্বাচনের ফলাফল উল্টে দেওয়ার চেষ্টার সঙ্গে ওই মামলা সম্পর্কিত। তবে ফ্রান্সিস বলেন, ফিচের সিদ্ধান্ত ঘোষণার জন্য একই সময় ঠিক করা ছিল ‘সম্পূর্ণ কাকতালীয়’। ঋণমান কমানোর সিদ্ধান্ত এক দিন আগেই নেওয়া হয়েছিল বলে তিনি জানান।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের শাসন পরিস্থিতি নিয়ে ফিচের যে উদ্বেগ, তার সঙ্গে ঋণমান কমানোর সময়টি মিলে গেছে বলে একমত হন প্রতিষ্ঠানটির বিশ্লেষক।
ঋণমান কমানোর বিষয়টি দ্রুতই একটি রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়। ডেমোক্র্যাটরা এর জন্য রিপাবলিকানদের দায়ী করেন। আর রিপাবলিকানরা দায়ী করেন ডেমোক্র্যাটদের।
তাহলে কোন রাজনৈতিক দল অর্থনৈতিক সমস্যার জন্য বেশি দায়ী, এমন প্রশ্নে রিচার্ড ফ্রান্সিস মনে করেন যে একে অপরকে দায়ী করার চেয়েও এ ক্ষেত্রে আরও অনেক বেশি কিছু বিবেচনা করার রয়েছে। তিনি বলেন, “আর্থিক ক্ষেত্রে সমস্যার পেছনে দুই দলেরই দায় রয়েছে।”
তবে রিচার্ড ফ্রান্সিস যোগ করেন, ট্রাম্পের কর কমানোর কারণে গত কয়েক বছরে রাজস্ব আয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে। অন্যদিকে বাইডেন প্রশাসন যে বিপুল অর্থ খরচ করছে, তার হয়তো প্রয়োজন ছিল, কিন্তু এটাও ব্যয়বহুল একটি পদক্ষেপ।
বৈশ্বিক শেয়ারবাজারের পতন
এদিকে ফিচ রেটিংস যুক্তরাষ্ট্রের ঋণমান কমানোর ফলে বুধবার বৈশ্বিক শেয়ারবাজারের পতন হয়েছে। এর কারণ হিসেবে তারা বলেছে, আগামী তিন বছরে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক পরিস্থিতির অবনতি হবে। সেই সঙ্গে মাসখানেক আগে জাতীয় ঋণের সীমা বৃদ্ধির আলোচনা যেভাবে শেষ মুহূর্তে গড়াল, তা দেশটির জন্য ভালো হয়নি।
ফিচ রেটিংস যুক্তরাষ্ট্রের ঋণমান ‘এএএ’ থেকে হ্রাস করে ‘এএপ্লাস’ করায় জাপানের প্রধান শেয়ার সূচক নিক্কি ২২৫ কমেছে ২ দশমিক ৩ শতাংশ, চলতি বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ঋণমান কমানোর সিদ্ধান্তে হংকংয়ের প্রধান সূচক হ্যাং সেং–এর সূচকও কমেছে ২ দশমিক ৫ শতাংশ।
ইউরোপের শেয়ারবাজারের অবস্থান কিছুটা ভালো হলেও এই অঞ্চলের প্রধান শেয়ার সূচক স্টক্স ৬০০ কমেছে ১ দশমিক ৪ শতাংশ, গত দুই সপ্তাহের মধ্যে যা সর্বনিম্ন। জার্মানির সূচক ডিএএক্স এবং ফ্রান্সের সূচক সিএসি ৪০-এর মান যথাক্রমে ১ দশমিক ২ শতাংশ এবং ১ দশমিক ৪ শতাংশ এবং লন্ডনের সূচক এফটিএসই ১০০ সূচক কমেছে ১ দশমিক ৫ শতাংশ।
মার্কিন স্টক ফিউচার্সের মান কমেছে। এসএন্ডপি ৫০০–এর সূচক কমেছে দশমিক ৮ শতাংশ এবং নাসডাক সূচক কমেছে ১ দশমিক ২ শতাংশ। এদিকে মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের দাম দাম কিছুটা বেড়েছে, এই বন্ডের সুদহার এখন ৪ দশমিক ০৩ শতাংশ, যা গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ সুদহারের চেয়ে কিছুটা কম।
বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে ফিচের প্রতিনিধিরা আরও একটি বিষয় তুলে ধরেছেন। সেটা হলো ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারির ক্যাপিটল হিলে ট্রাম্প সমর্থকদের হামলা। এই বিষয়টিকে তাঁরা মার্কিন গণতন্ত্রের জন্য উদ্বেগজনক মনে করছেন।
ফিচ বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের দুই দলের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে ঋণসীমা স্থগিতের বিষয়ে শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত হওয়ার কারণে দেশটির আর্থিক ব্যবস্থাপনায় মানুষের আত্মবিশ্বাস বিনষ্ট হয়েছে। সেই সঙ্গে ঋণের বোঝা বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে তারা ঋণমান হ্রাস করেছে। ফিচ মনে করছে, আগামী তিন বছরে যুক্তরাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থার অবনতি হবে।
ফিচ মনে করছে, মার্কিন সরকারের সাধারণ ঘাটতি ২০২৩ সালে জিডিপির ৬ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত হতে পারে: ২০২২ সালে যা ছিল ৩ দশমিক ৭ শতাংশ।
হারগ্রিভস ল্যানসডাউনের প্রধান ইক্যুইটি বিশ্লেষক সোফি লন্ডইয়েটস বলেছেন, ওয়াশিংটন যেভাবে শেষ মুহূর্তে খেলাপি হওয়া থেকে বেঁচেছে তা কেউ ভালো চোখে দেখছে না। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বইগুলোর অচলাবস্থা ইঙ্গিত দেয়, বাজার ইতিমধ্যেই ক্ষতির শিকার করেছে।
মার্কিন সরকারের সবচেয়ে বেশি ঋণ চীন ও জাপানের কাছে। এই দুই দেশের কাছে মার্কিন সরকারের ঋণ দুই লাখ কোটি ডলার, অন্যান্য দেশের কাছে আরও ৭ লাখ ৬০ হাজার কোটি ডলার।
তা সত্ত্বেও গোল্ডম্যান স্যাকসের বিশ্লেষকেরা মনে করছেন না যে ট্রেজারি সিকিউরিটিজধারীরা এই ঋণমান হ্রাসের কারণে অর্থ তুলে নিতে বাধ্য হবে। তারা বলছেন, সম্পদ হিসেবে ট্রেজারি সিকিউরিটিজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ; বিনিয়োগকারী ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো এই বিনিয়োগের কথা সব ক্ষেত্রেই উল্লেখ করে, সরকারের ঋণমান কত তা উল্লেখ করে না।
কমেন্ট