মুরগি ও ডিমের দাম আবার অস্থির

মুরগি ও ডিমের দাম আবার অস্থির

জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের কারণে দেশে ডিমের দাম কমে ১২০-১২৫ ডজনে নেমে এসেছিল। কিন্তু গত দুই-তিন সপ্তাহ ধরে ডিমের দাম বাড়তে বাড়তে ১৫০ টাকায় উঠেছে।

সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিদিনের খুচরা বাজার দর অনুযায়ী, ছুটির দিন শুক্রবার রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রতি হালি ফার্মের মুরগির ডিম ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ হিসাবে প্রতিটি ডিমের দাম সাড়ে ১২ টাকা; ডজন ১৫০ টাকা।

পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতে প্রতি হালি ডিম ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে, ঢাকার শেওড়াপাড়া, হাতিরপুর ও মেহাম্মদপুর বাজারে টিসিবির দামেই ডিম বিক্রি হতে দেখা গেছে। 

গত বছরের আগস্টে এই ডিমের দাম বাড়তে বাড়তে প্রতি ডজন ১৬০ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। সে সময় দেশে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ডিমের দাম বেড়েছে বলে অজুহাত দেখিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। 

জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের কারণে দেশে ডিমের দাম কমে ১২০-১২৫ ডজনে নেমে এসেছিল। কিন্তু গত দুই-তিন সপ্তাহ ধরে ডিমের দাম বাড়তে বাড়তে ১৫০ টাকায় উঠেছে।

শুধু ডিম নয়, সব ধরনের মুরগির দামও ফের বাড়তে শুরু করেছে। মাছের বাজারও চড়া। 

তবে, বাজারে চাল, ডাল, আটা, ময়দা, চিনি, সয়াবিন তেলের মতো অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দাম উচ্চ মূল্যে স্থিতিশীল। এর মধ্যে কোরবানির ঈদ ঘিরে মাছ-মাংস ও ডিমের দাম একটু কমতির দিকে গেলেও এখন আবার তা বাড়ছে। গত সপ্তাহের তুলনায় কেজি প্রতি ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। ডিমের দাম বেড়েছে ডজনে ৫ থেকে ১০ টাকা। 

বাজারে ইলিশের সরবরাহ কম থাকায় চাহিদা বেড়েছে অন্যান্য মাছের। মাছ কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতারা। 

শুক্রবার শেওড়াপাড়া, হাতিরপুর ও মেহাম্মদপুর কাঁচাবাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে গত এক সপ্তাহে আরেক দফা বেড়েছে মুরগি ও ডিমের দাম। গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ১৭৫ থেকে ১৮৫ টাকা কেজি। এই সপ্তাহে দরদাম করে সেই ব্রয়লার মুরগি কিনতে হচ্ছে ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকায়। ব্রয়লারের সঙ্গে বেড়েছে সোনালি মুরগির দামও। গত সপ্তাহে ২৮০ থেকে ২৯০ টাকা কেজির সোনালি মুরগি এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩১০ টাকায়। 

শেওড়াপাড়া বাজারের মুরগি বিক্রেতা ডলার এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “কোরবানির ঈদে চাহিদা কম থাকায় মুরগির বাজার নেমে এসেছিল। দুই সপ্তাহ ধরে বাজারটা আবার বাড়তি। চাহিদাও বেড়েছে। তবে বাজারে মুরগির সরবরাহে বড় কোনো সংকট নেই।” 

এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে ডিমের দামও বেড়েছে। ফার্মের মুরগির বাদামি রঙের ডিমের দাম পড়ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা ডজন। সাদা রঙের ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি ডজন ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায়। 

মুরগি-ডিমের বাজারে অস্থিরতার নেপথ্যে

মুরগি ও ডিমের মূল্যবৃদ্ধির জন্য বড় খামারি মালিকদের দায়ী করে ক্ষুদ্র খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদার এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “করপোরেট কোম্পানিগুলোর স্বেচ্ছাচারিতায় ডিম ও মুরগির বাজার অস্থির হয়ে পড়েছে। প্রান্তিক খামার ও করপোরেটদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ খামারের উৎপাদন খরচই বাজার পরিস্থিতি বদলে দেয়।” 

তিনি বলেন, “ ডিম ও মুরগির বাজারে ৮০ শতাংশ জোগান দেয় প্রান্তিক খামারিরা। আর ২০ শতাংশ সরবরাহ করে করপোরেট কোম্পানিগুলো। অথচ দাম পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করে এই করপোরেট কোম্পানিগুলো। এই এখন দাম বেড়েছে খামারিরা কোনো বাড়তি দাম পাচ্ছে না। সব চলে যাচ্ছে বড় বড় করপোরেট কোম্পানিগুলোর কাছে। খামারিরা নায্য মূল্য পাচ্ছে না। সেই দিকে কারো মাথাব্যাথা নেই।” 

‘সবাই আছে বড় ব্যবসায়ীদের নিয়ে’ মন্তব্য করে সুমন বলেন, “প্রান্তিক খামারিকে ৫০ কেজির এক বস্তা পোল্ট্রি ফিড কিনতে ৩ হাজার ৬৫০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। অন্যদিকে করপোরেটদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ খামারিকে ৫০ কেজির এক বস্তা পোল্ট্রি ফিডের জন্য ২ হাজার ৬০০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে।” 

“অন্যদিকে একদিনের মুরগির বাচ্চা চুক্তিবদ্ধ খামারির কাছে ৩৫ টাকায় বিক্রি করা হলেও প্রান্তিক খামারির কাছে ৬০ টাকা নেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো ভালোমানের মুরগির বাচ্চা ও ফিড চুক্তিবন্ধ খামারগুলোতে সরবরাহ করে। অন্যদিকে প্রান্তিক খামারিদের কাছে নিম্নমানের মুরগির বাচ্চা ও ফিড সরবরাহ করা হচ্ছে। 

“যার কারণে প্রান্তিক পর্যায়ের ক্ষুদ্র খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কোনো উপায় না পেয়ে প্রান্তিক পর্যায়ের কিছু খামারি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছে। আবার কেউ কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর খামার বন্ধ করে দিচ্ছে। এতে মুরগি ও ডিমের বাজার করপোরেটের দখলে চলে যাচ্ছে। তারা শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।” 

এ ছাড়া পোল্ট্রির দাম বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি খাদ্যের দামের কথাও জানান বিপিএ সভাপতি সুমন হাওলাদার।

 

মাছের দামও বেড়েছে

ভরা মৌসুম হলেও বাজারে ইলিশের জোগান এবার বেশ কম। এতে অন্যান্য মাছের চাহিদা বেশি। এই সুযোগে ইলিশের পাশাপাশি অন্যান্য মাছের দামও বেড়েছে। এক কেজি আকারের ইলিশের দাম হাঁকানো হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা। 

অন্যান্য মাছের মধ্যে রুই মাছের কেজি পড়ছে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা। পাবদা, বোয়াল, আইড়, দেশি মাগুরের দাম সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। মানভেদে পাঙাশ ও তেলাপিয়া মাছের কেজি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। 

হাতিরপুল বাজারের মাছ বিক্রেতা সরদার রফিক বলেন, ইলিশ মাছ এবার বাজারে কম আসছে। গত কয়েক মাসে অন্য মাছের দাম একটু একটু করে বেশ বেড়েছে। 

চাল, ডাল, আটা স্থিতিশীল 

এদিকে অন্যান্য নিত্যপণ্যের মধ্যে চাল, ডাল, আটা-ময়দা, চিনি ও সয়াবিন তেলের দাম আগের মতোই আছে। গুটি স্বর্ণা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৩ টাকা কেজি। বিআর আটাশ ৫৮ থেকে ৬০ টাকা, মিনিকেট ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আর নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮৫ টাকা। মানভেদে মসুর ডালের কেজি ১০০ থেকে ১৪০ টাকা। চিনির কেজি পড়ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। 

সবজির বাজারে কিছুটা কমে এসেছে কাঁচা মরিচের দাম। ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে কাঁচা মরিচ। পেঁপে, পটোল ও আলুর কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। অন্যান্য সবজির দাম পড়ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। 

মোহাম্মদপুর কাঁচবাজারের নিয়মিত ক্রেতা হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসলাম উদ্দিন নামের বেসরকারি এক চাকরিজীবী বলেন, জিনিসপত্রের দাম বাড়তি হওয়ায় মাছ-মাংস কেনা কমাতে হচ্ছে। বাজেটের মধ্যে বাজার করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় নিয়মিত।

‘বিপুল ঋণের বোঝা’য় কমেছে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণমান পরবর্তী

‘বিপুল ঋণের বোঝা’য় কমেছে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণমান

কমেন্ট

এই সংক্রান্ত আরও খবর