বিশ্ববাজারে খাদ্যের দাম আবার বাড়ছে
কৃষ্ণসাগরে পণ্যবাহী জাহাজ। গত ১৭ জুলাই রাশিয়া এই সাগর দিয়ে খাদ্য পরিবহনের চুক্তি থেকে সরে আসার পর থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে খাদের দাম বাড়তে শুরু করেছে। ছবি: সংগৃহীত
বিশ্ববাজারে খাদ্যের দাম আবার বাড়ছে। গত ১৭ জুলাই রাশিয়া কৃষ্ণসাগর দিয়ে খাদ্য পরিবহনের চুক্তি থেকে সরে আসার পর থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে খাদের দাম বাড়তে শুরু করেছে।
এই চুক্তির আওতায় ইউক্রেনে উৎপাদিত হাজার হাজার টন শস্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঠনো হতো।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বলেছে, জুলাই মাসে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিসূচক ১ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে। অথচ গত বছরের জুলাই মাসে রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে এ চুক্তি হওয়ার পর এক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে খাদ্যের দাম কমছিল।
অবশ্য গত বছরের জুলাই মাসের তুলনায় চলতি বছরের জুলাই মাসে জাতিসংঘের খাদ্যসূচকের মান ১২ শতাংশ কম। কিন্তু জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সই হওয়া কৃষ্ণসাগর শস্য চুক্তি থেকে রাশিয়া এবার নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার পর বিশ্ববাজারে শস্য ও সূর্যমুখী তেলের দাম বেড়েছে।
এই চুক্তি এখন পর্যন্ত তিনবার নবায়ন করা হয়েছে। তবে রাশিয়া বলছে, এ চুক্তির কারণে তাদের নিজেদের পণ্য রপ্তানি ব্যাহত হয়েছে। এত দিন রাশিয়া এ চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে।
শেষ পর্যন্ত গত ১৭ জুলাই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এ চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসেন। এর পর থেকেই এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক আবার ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করে।
গত সপ্তাহে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, আফ্রিকার দরিদ্র দেশগুলোতে রাশিয়া নিজেই শস্য রপ্তানি করতে পারে। এ ক্ষেত্রে ইউক্রেনের বিকল্প হতে পারে রাশিয়া। তিনি আরও বলেন, সোমালিয়াসহ ছয়টি দেশে আগামী চার মাসের মধ্যে বিনা মূল্যে শস্য রপ্তানি শুরু হবে, যে অঙ্গীকার কদিন আগেই তিনি করেছেন।
জুলাই মাসে বিশ্ববাজারে উদ্ভিজ্জ তেলের দাম বেড়েছে ১২ শতাংশ। এর কারণ হলো, বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়া। অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়ে গেলে উদ্ভিজ্জ তেলের মূল্যে তা প্রভাব রাখতে পারে। কারণ, জৈব জ্বালানি উৎপাদনে উদ্ভিজ্জ তেল ব্যবহার করা হয়।
এফএওর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জুলাই মাসে সূর্যমুখী তেলের দাম ১৫ শতাংশ বেড়েছে। মূলত তেলের সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে এ মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে।
এখন পর্যন্ত বিশ্ববাজারে সূর্যমুখী তেলের সবচেয়ে বড় জোগানদাতা হচ্ছে ইউক্রেন। জাতিসংঘের তথ্যানুসারে, বিশ্ববাজারের ৪৬ শতাংশ সূর্যমুখী তেল তারা জোগান দেয়। এ ছাড়া দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় পাম তেল ও সয়াবিনের উৎপাদন কমেছে। সে কারণে অন্যান্য ভোজ্যতেলের দামও বেড়েছে বলে জানিয়েছে এফএও।
সেই সঙ্গে এফএওর গমবিষয়ক মূল্যসূচকও জুলাই মাসে ১ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। গত ৯ মাসের মধ্যে এই প্রথম এ সূচকের পয়েন্ট বাড়ল।
এ ছাড়া ইউক্রেনের বন্দরে রাশিয়ার হামলার কারণেও বিশ্ববাজারে সম্প্রতি খাদ্যের দাম বেড়েছে। বিশ্ববাজারে খাদ্যের বড় একটি অংশ এই দুটি দেশ জোগান দেয়। তবে দাম বাড়লেও ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় গমের দাম এখনো ৪৬ শতাংশ কম।
গত বছরের ২২ জুলাই জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় চূড়ান্ত করা রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যকার প্রথম কৃষ্ণসাগর শস্য চুক্তির মেয়াদ ছিল ১২০ দিন। একই বছরের ১৮ নভেম্বর চুক্তিটির মেয়াদ আরও ১২০ দিন বাড়ানো হয়। চলতি বছরের ১৭ মার্চ সব পক্ষ সম্মত হলেও রাশিয়া ১২০ দিন মেয়াদ বাড়াতে সম্মত হয়নি।
পরদিন ১৮ মার্চ রাশিয়া এ চুক্তির মেয়াদ ৬০ দিন বাড়াতে সম্মত হয়, যা শেষ হয় ১৭ জুলাই।
জাতিসংঘের যৌথ সমন্বয় কেন্দ্রের গত সোমবারের তথ্যানুযায়ী, চুক্তির পর এ পর্যন্ত ইউক্রেন থেকে ৪৫টি দেশে ভুট্টা, গম ও সয়াবিনের বীজ, শর্ষের বীজ, সূর্যমুখীর বীজ, বার্লি মিলিয়ে ৩ কোটি ২৭ লাখ টন খাদ্যশস্য রপ্তানি হয়েছে।
চালের দাম ১২ বছরে সর্বোচ্চ
এদিকে ভারতের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞায় বিশ্ববাজারে চালের দাম ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতায় উঠেছে।
জিও নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জুলাই মাসে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) চালের মূল্য সূচক আগের মাসের তুলনায় বেড়েছে ২ দশমিক ৮ শতাংশ, যা গত প্রায় ১২ বছরে সর্বোচ্চ।
বিশ্বে চালের চাহিদা ক্রমশ বৃদ্ধির পাশাপাশি পণ্যটি রপ্তানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সূচকের
চাল রপ্তানিতে শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর মূল্য পরিস্থিতি তদারকি করে এফএও। সংস্থাটির গড় মূল্য সূচক জুনে ছিল ১২৬ দশমিক ২ পয়েন্ট, যা জুলাইয়ে বেড়ে হয় ১২৯ দশমিক ৭ পয়েন্ট।
চলতি বছরের জুলাইয়ে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় মূল্য সূচক বেড়েছে ২০ শতাংশ। এ বৃদ্ধি ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরের পর থেকে সর্বোচ্চ।
গত মাসে এফএওর সার্বিক বৈশ্বিক খাদ্য সূচকও বেড়েছে, যা গত দুই বছরে তুলনামূলক কম ছিল।
বিশ্ববাজারে রপ্তানিকৃত চালের ৪০ শতাংশের জোগান দিত ভারত। স্থানীয় বাজারে মূল্যবৃদ্ধি রোধে গত মাসে বড় পরিসরে চাল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় দেশটি, যার প্রভাব দেখা যায় বিশ্বজুড়ে।
চাল রপ্তানিতে শীর্ষ দেশগুলো হলো ভারত, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও পাকিস্তান। বিপরীতে আমদানিতে এগিয়ে রয়েছে চীন, ফিলিপাইন, বেনিন, সেনেগাল, নাইজেরিয়া ও মালয়েশিয়া।
কমেন্ট